Advertisement
২৮ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

মিলেছে মৃত্যুর শংসাপত্র, তবু রোগী মৃত কি না ‘জানা নেই’!

রাতে ছেলেরা দেখেন, তাঁদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমছে। দ্রুত একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে শয্যা নেই বলে জানানো হয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

হাসপাতালে ভর্তি করার পরে কেটেছে ১১ দিন। তবু কোভিড আক্রান্ত মা বেঁচে আছেন কি না, তা-ই জানা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ! কখনও সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতাল জানাচ্ছে, চিকিৎসা চলছে। আবার কখনও মৃত্যুর খবর দিচ্ছে! অভিযোগ, ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লিখে ছেলেকে একটি দেহ দেখানোর পরেও বলা হচ্ছে, “রোগী অনেকটাই ভাল আছেন। ১২ দিনের মাথায় ছাড়া হবে!” নাজেহাল ছেলে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও সুরাহা পাচ্ছেন না। পুলিশের ফোন পেয়ে হাসপাতাল থেকে ওই রোগীর গলা শোনানো হলেও পরে বলা হয়েছে, “রোগীকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না!”

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ এপ্রিল। কয়েক দিন আগে থেকেই জ্বরে ভুগছিলেন ব্রহ্মপুরের বাসিন্দা, বছর বাহাত্তরের লক্ষ্মণ প্রসাদ ও তাঁর স্ত্রী, বছর বাষট্টির জানকীদেবী। রাতে ছেলেরা দেখেন, তাঁদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমছে। দ্রুত একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে শয্যা নেই বলে জানানো হয়। বাইপাসের ধারের দু’টি হাসপাতালও একই কথা জানায়। ছেলেদের অনুরোধে বাইপাসের একটি হাসপাতাল জানকীদেবীর কোভিড পরীক্ষা করালে সেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। কিন্তু ভর্তি হতে না-পেরে বাড়ি ফিরে যান ওই বয়স্ক দম্পতি। কিন্তু রাতে অবস্থার অবনতি হলে দু’জনকেই নিউ টাউনের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে (সিএনসিআই) নিয়ে যাওয়া হয়।

জানকীদেবীর ছোট ছেলে রাহুল প্রসাদ বলেন, “অনেক অনুরোধের পরে মাকে ভর্তি নেয়। কিন্তু বাবাকে ভর্তি না নিয়ে কোভিড পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়। মাকে কত নম্বর শয্যায় রাখা হয়েছে, তা-ও জানায়নি।” তিনি আরও জানান, জানকীদেবীর ডায়াবিটিস রয়েছে। ভোরে বাবাকে বাড়িতে রেখে ফের তাঁর ওষুধ নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন রাহুল। বলেন, “ওষুধ দেওয়ার সময়েও শয্যার নম্বর জানায়নি। ওষুধটাও সাত-আট ঘণ্টা ফেলে রেখেছিল। বিকেলে দাদা ফোন করে জানায়, হাসপাতাল ফোন করে বলেছে, মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু রিসেপশনে গিয়ে প্রশ্ন করায় বলা হয়, ‘‘রোগীর ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। যেখান থেকে ফোন পেয়েছেন সেখান থেকেই জেনে নিন!”

এমন সময়ে অসুস্থ বাবাকেও ভর্তি করানোর জন্য হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসেন রাহুল। লক্ষ্মণবাবুকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২৮ তারিখ ভোরে এর পরে কলকাতা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলা হয়। শেষে লেদার কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের করা যায়। অভিযোগ, এর পরে ওই থানা থেকে হাসপাতালে ফোন করলে জানানো হয়, জানকীদেবী ৫৭৫ নম্বর শয্যায় রয়েছেন। অথচ সে দিন হাসপাতালের কাছে মায়ের কথা জানতে চাইলে রাহুলের হাতে ডেথ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হয়! তাতে লেখা, ২৬ এপ্রিল সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তা হলে পুলিশকে কেন অন্য তথ্য দেওয়া হল? সেই উত্তর মেলেনি। তবে দেহ দেখতে চাইলে পরের দিন, অর্থাৎ ২৮ তারিখ বেলা ২টোর মধ্যে যেতে বলা হয়।

রাহুলের দাবি, “কোভিডে মৃতের দেহ সাধারণত স্বচ্ছ প্লাস্টিকে মোড়া থাকে। কিন্তু যে দেহ দেখানো হল, সেটা কালো প্লাস্টিকে মোড়া ছিল। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকার ফলেই হয়তো মুখ বোঝার অবস্থায় ছিল না।” রাহুলের দাবি, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এক পুলিশকর্তার কাছে খবর পৌঁছলে তিনিও খোঁজ নিয়ে জানান, জানকীদেবী রয়েছেন ৫৭৫ নম্বর শয্যাতেই! ১২ দিন পরে তাঁকে ছাড়া হবে। বিভ্রান্ত রাহুল ফের লেদার কমপ্লেক্স থানায় যোগাযোগ করলে তারাও হাসপাতালে যোগাযোগ করে। ফোন ৫৭৫ নম্বর শয্যার রোগীকে দেওয়া হলে তিনি নিজেকে জানকীদেবী বলেই পরিচয় দেন।

স্বাস্থ্য দফতরের দুই শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, এমনটা হওয়ার কথা নয়। রোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সিএনসিআই-এর ডিরেক্টরকে ফোন করা হলে তিনি আর এক কর্তার নম্বর দিয়ে কথা বলতে বলেন। সুজয় বিষ্ণু নামে ওই ব্যক্তি বলেন, “ওই রোগীর ছেলেকে কে কী বলেছেন, জানি না। কাগজপত্রে সই করে ছেলে তো সব বুঝে গিয়েছিলেন।’’ রোগীর ছেলের দাবি, ‘‘তাই যদি হবে তা হলে এক-এক বার এক-এক রকম কথা বলা হচ্ছে কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID19 Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE