Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Unemployment

রেস্তরাঁ-শপিং মলের ঝাঁপ বন্ধে ফের কাজ হারানোর শঙ্কা

গত বছর লকডাউন ওঠার পরে আনলক-পর্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক কর্মীর উপরে কোপ পড়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চন্দন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

ঘটনা ১: নাগেরবাজারে একটি শপিং মলে কাজ করেন জগদীশ সেনগুপ্ত। বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা ছাড়াও রয়েছে এক বছরের সন্তান। জগদীশই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁকে আপাতত কাজে আসতে বারণ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শপিং মল কর্তৃপক্ষ।

ঘটনা ২: কলকাতার একটি রেস্তরাঁর কর্মী অভিষেক। আদতে আসানসোলের বাসিন্দা ওই যুবক কলকাতায় ভাড়া থাকেন। জানুয়ারিতেই বিয়ে করেছেন। বাড়িতে আছেন ক্যানসার আক্রান্ত মা। সরকারি নির্দেশে রেস্তরাঁ আপাতত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে কর্মহীন অভিষেক। এপ্রিল মাসের বেতন সময় মতো মিলবে বলে দেওয়া হলেও চলতি মাস থেকে তিনি আদৌ বেতন পাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।

সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে শহরের শপিং মল, রেস্তরাঁ, বিউটি পার্লার, জিমন্যাসিয়াম, সুইমিং পুল-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্র। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই ওই সব ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের একাংশকে কাজে আসতে বারণ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃপক্ষ। অনেক সংস্থার তরফে আবার এপ্রিল মাসের বেতন ঠিক সময়ে মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও পরবর্তী কালে আদৌ বেতন মিলবে কি না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। ফলে রাতারাতি কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন ওই কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁদের বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, গত বছর লকডাউন ওঠার পরে আনলক-পর্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক কর্মীর উপরে কোপ পড়েছিল। অনেকেই কাজ হারিয়েছিলেন। সরকারি এই বিজ্ঞপ্তিতে আবার সেই আশঙ্কাই করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই অনেকে চাকরির নিশ্চয়তার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন।

কসবার একটি শপিং মলের কর্মী সুবীর সরকার বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউনের সময়ে দীর্ঘ দিন আমাদের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়েছিল। আনলক-পর্বে শপিং মল খুললেও বেতনের একাংশ কেটে নেওয়া হত। অনেকের চাকরিও গিয়েছিল। এ বারও আমাদের আপাতত কাজে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যে কী অপেক্ষা করছে, বুঝতে পারছি না।’’ শহরের একটি রেস্তরাঁর কর্মী প্রবীর পাল বলেন, ‘‘সংসারে আমি একাই উপার্জনকারী। কাজে গেলেই আমাদের রোজগার হয়। এ ভাবে আচমকা কাজ চলে গেলে বাড়ির সকলের মুখে কী ভাবে দুটো ভাত তুলে দেব, তা ভেবেই চিন্তায় আছি।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি রেস্তোরাঁর এক মালিক বলেন, ‘‘আমাদের বেশির ভাগ কর্মীকে রোজের হিসেবে বেতন দেওয়া হয়। যদি দীর্ঘ সময় রেস্তরাঁ বন্ধ থাকে, তা হলে মালিকের পক্ষেও কর্মীদের বসিয়ে বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদেরও হাত-পা বাঁধা। সব জেনেও কিছু করতে পারি না।’’

ভোটের সময়ে চলা রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশকেই করোনার এই আগ্রাসনের জন্য দায়ী করেছেন কর্মীদের একাংশ। তবে এই মুহূর্তে একটাই চিন্তা তাঁদের। তা হল, উপার্জনের একমাত্র পথ চাকরিটাই চলে যাবে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unemployment COVID19 Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE