খুন করতে সে সুপারি নিয়েছিল ৫০ হাজার টাকার। কিন্তু খুনের পর সেই ‘সুপারি কিলার’ সাকুল্যে আট হাজার টাকা পেয়েছিল! বাকি টাকা ‘আজ দিচ্ছি, কাল দেব’ করতে করতে আর দেয়নি খুনের চক্রী।
এখনও, ঘটনার প্রায় ১৬ বছর পরেও, সরফুদ্দিন ওরফে সরফুর টাকা না পাওয়ার সেই আফশোস যায়নি বলে তাকে জেরা করে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তার পর সে আরও কয়েকটি অপরাধে জড়িত হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, সরফু ২০০১-এর ২৯ জুন আর এন মুখার্জি রোডে নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়া নামে এক মহিলাকে গুলি চালিয়ে খুন করেছিল। সেই জট খুলল এত বছর পর, এন্টালি এলাকায় একটি গুলি চলার ঘটনায় সরফু মাস খানেক আগে গ্রেফতার হওয়ার পর।
নিহত মহিলা পার্সি, নাম নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়া। তিনি যখন খুন হন সরফু তখন ১৬ বছরের কিশোর। বেনিয়াপুকুরের ফুলবাগান বস্তিতে তাদের ঘর। তদন্তকারীদের দাবি, সরফুকে জেরা করে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে দিদির বিয়ে দিতে টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে, তা ভেবে থই পাচ্ছিলেন না তার মা-বাবা। সরফুর বাবা এক জন শ্রমিক। দিদির বিয়ের টাকা জোগাড় করার কথা মাথায় রেখেই নওয়াজকে খুন করার জন্য ৫০ হাজার টাকা সুপারি নেয় সরফু।
সরফুকে ওই খুনের জন্য ‘সুপারি’ দিয়েছিল মহম্মদ মোহিত ওরফে মইস। তার বাড়িও ফুলবাগান বস্তির কাছে। সেই সূত্রে সরফুর সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। মইসের স্ত্রী ছিলেন ওই পার্সি বৃদ্ধার পরিচারিকা। মইসের স্ত্রীকে নওয়াজ তাঁর ১৫ লক্ষ টাকার স্থায়ী আমানতের ‘নমিনি’ করেন। ওই টাকা পেতে খুন বলে পুলিশের দাবি। সেটাই অপরাধে সরফুর হাতেখড়ি।
কিন্তু এমন এক জন আনপড়কে খুনের সুপারি দেওয়া হল কেন?
পুলিশ সূত্রের খবর, নওয়াজকে খুন করানোটা মইসের কাছে জরুরি ছিল, কিন্তু দাগী কোনও অপরাধীর সঙ্গে তার জানাশোনা ছিল না। মইস দেখে, সরফু ও তার দু’-তিন জন বন্ধু নাবালক হলেও পাড়ায় তখন উঠতি মস্তান, তাদের হাতে ‘মেশিন’-ও এসে গিয়েছে। কিছু একটা বড় কাজ করে নাম কেনার জন্য তাদের হাত কার্যত নিশপিশ করছে। মইস ভাবে, দাগী দুষ্কৃতীকে সুপারিও দিতে হবে বেশি টাকার, তার উপর খবর চাউর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সে দিক থেকে সরফু ও তার দল নিরাপদ, তবে কাজটা তারা ঠিক মতো করে উঠতে পারবে কি না, সেই ব্যাপারে কিছুটা সন্দেহ ছিল। ঘটনার দিন সরফু একা নয়, আরও দু’-তিন জন তার সঙ্গে ছিল এবং একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল তাদের সঙ্গে। তবে সরফুর ওয়ান শটারের এক গুলিতেই কাজ হাসিল হয়ে যায় বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘সরফু হাজার দুয়েক টাকা দিয়ে দেশি বন্দুক আর কার্তুজ জোগাড় করেছিল। কিন্তু খুন করার পর সে আট হাজার টাকার বেশি পায়নি। ফলে, খুন করে দিদির বিয়ের জন্য সে যতটা টাকা জোগাড় করতে পারবে বলে মনে করেছিল, ততটা পারেনি।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘এটাই সরফুর আফশোসের কারণ।’’
এন্টালি থানা ও বেনিয়াপুকুর থানার হেফাজত ঘুরে সরফু এখন অন্য একটি মামলায় লালবাজারে গোয়েন্দা বিভাগের চুরি দমন শাখার হেফাজতে। সরফুর সঙ্গে কথা বলে ১৬ বছর আগের খুন সম্পর্কে গোয়েন্দারা সবিস্তার তথ্য জানার চেষ্টা করছেন।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ঘটনার জায়গায় চক্রী মইস ছিল না। তবে সরফুর সঙ্গে দু’-তিন জন ছিল। এটা এতদিন জানা যায়নি। এ বার আমরা তাদের খোঁজ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy