Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
blood bank

উৎসবে রক্তের আকাল, এক ইউনিটের ‘দর’ ২০ হাজার!

জেলায় জেলায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো। থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্কে নাম লেখানো থাকলেও সটান বলা হচ্ছে দাতা নিয়ে আসার কথা।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪৭
Share: Save:

ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর জন্য দ্রুত চার ইউনিট প্লেটলেট জোগাড়ের কথা বলেছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু কোনও মতে রক্তের কার্ডের ব্যবস্থা করে ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলেও শুনতে হয়েছে, ‘‘এই কার্ডে কিছুই হবে না। প্লেটলেট পেতে অন্তত চার জন রক্তদাতাকে আনতে হবে।’’ এর পরে দিনভর হন্যে হয়ে চার জন দাতা জোগাড় করে ফের ব্লাড ব্যাঙ্কে যেতে যেতেই ঘড়িতে সন্ধ্যা ছ’টা। অভিযোগ, তখন পরিবারকে শুনতে হয়েছে, ‘‘সন্ধ্যায় কাজ হয় না। রক্ত নিলেও সংরক্ষণ করার মতো লোক নেই। কাল সকালে আসুন।’’ কিন্তু রোগীর তো যত দ্রুত সম্ভব রক্ত চাই! উত্তরে বলা হয়েছে, ‘‘সে দায়িত্ব ব্লাড ব্যাঙ্কের নয়।’’

এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উৎসবের মরসুমে রক্তদান শিবির না হওয়া এবং ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত— এই জোড়া ফলায় বর্তমানে শহর জুড়ে রক্তের তীব্র আকাল তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের পাশাপাশি রক্ত পেতে হাহাকার চলছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। অতীতে রক্তদান করে পাওয়া কার্ড থাকলেও রক্ত পেতে দাতা সঙ্গে আনার কথা শুনতে হচ্ছে। দাতা আনলেও মিলছে প্রয়োজনের তুলনায় কম ইউনিট। এমনকি, পজ়িটিভ গ্রুপের রক্ত পেতেও দিনের পর দিন ঘোরানো হচ্ছে বলে দাবি।

জেলায় জেলায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো। থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্কে নাম লেখানো থাকলেও সটান বলা হচ্ছে দাতা নিয়ে আসার কথা। এই ধরনের রোগীদের সাধারণত মাসে দু’বার বা তারও বেশি বার রক্তের প্রয়োজন হয়। ফলে মাসে দু’বার করে দাতা জোগাড় করতে কালঘাম ছুটছে পরিবারের। আর এই সুযোগেই বাড়ছে টাকার বিনিময়ে রক্তের লেনদেন। গত কয়েক দিনে অনেকেই এমন ‘ব্লাড সেলারের’ খপ্পরে পড়েছেন বলে অভিযোগ।

দশমীর দিন গিরিশ পার্কের বাসিন্দা, বৃদ্ধা সুমেধা সরকারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। রক্তের জন্য তাঁর পরিবার অনলাইনে পাওয়া একটি নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, রক্তের ইউনিট-পিছু লাগবে ২০ হাজার টাকা! শেষে এক বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্রতি ইউনিট তিন হাজার টাকায় রক্ত কিনে কাজ চালান তাঁরা। একই রকম দাবি কাশী বোস লেনের বাসিন্দা স্বপ্না বসাকের। হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাঁর স্বামী অসীম বসাককে পুজোর মধ্যেই বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। সেখানেও রক্ত দেওয়ার বদলে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি, দাতা আনতে বলা হয়। শেষে কাশী বোস লেন পুজো কমিটির দুই সদস্য গিয়ে রক্ত দেন।

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ডি আশিস বললেন, ‘‘১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি দেশে রক্ত বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য যে কোনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে রক্ত পাওয়ার কথা। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত বাবদ কিছু টাকা নিলেও তা নেয় রক্ত রাখার জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ, দাতার রক্তের পরীক্ষা, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কয়েকটি খাতে খরচ হিসাবে। কিন্তু অনেক বেসরকারি হাসপাতালই রক্তের দাম হিসাবে মোটা টাকার অঙ্ক বিলে জুড়ে দেয়।’’

রক্তদান আন্দোলনের কর্মী তথা রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য অচিন্ত্য লাহা বললেন, ‘‘দাতাদের নাম, ফোন নম্বরের বিরাট তালিকা স্বাস্থ্য ভবনের কাছে রয়েছে। চাইলেই নম্বর ধরে ধরে ফোন করে রক্তদান করতে উৎসাহিত করা যায়।’’ রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের ডেপুটি ডিরেক্টর বরুণ সাঁতরা যদিও বললেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা মনে রেখে অষ্টমী, নবমী বাদে এ বার পুজোর মধ্যেও রক্তদান কর্মসূচি করার চেষ্টা হয়েছে। নতুন আর কী করলে এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধান হবে, তা ভাবা হচ্ছে।’’ রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, ‘‘অনুদান দেওয়ার সময়ে পুজো কমিটিগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে পুজোয় অন্তত এক দিন রক্তদান শিবির করার কথা যদি বলা হয়, তা হলেই উৎসবের মরসুমে রক্তের এমন আকাল হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blood bank Crisis Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE