সম্ভার: অসময়ে হলেও ফের মিলছে ইলিশ। বিরাটির বাজারে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মানিকতলা বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে ইলিশের চেহারা দেখে চমকে উঠেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা, রমাপদ মজুমদার। মরসুম পেরিয়ে গেলেও বাজারে পেল্লাই চেহারার ইলিশ! বর্ষাতেও তো এই দামে এমন চেহারার পাননি! তাই আর চেখে দেখার লোভ সামলাতে পারেননি। শেষমেশ ইলিশ ব্যাগবন্দি করেই ফিরে ছিলেন।
নভেম্বরের শেষে এ রকম ইলিশের আমদানি দেখেননি মানিকতলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডলও। তাঁর কথায়, ‘‘ভরা বর্ষায় ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম ছিল এখনের তুলনায় কেজি প্রতি তিনশো টাকা বেশি। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজি প্রতি চারশো বেশি। এখন ইলিশ মূলত আসছে ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপের সমুদ্র থেকে। ওই সময়ে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকায় দাম বেড়েছিল। আর এখন, দুর্গাপুজোর পর থেকে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত অনেকে সংস্কার মেনে ইলিশ খাওয়া বন্ধ রাখেন। ফলে চাহিদা কম থাকে বলে দামটাও এখন কম।’’ মানিকতলার পাশাপাশি উল্টোডাঙা, কলেজ স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট-সহ শহরের বিভিন্ন বাজারে গত দু’দিন ধরে ইলিশের দাপট! এক কেজি থেকে দেড় কেজি ইলিশ বিকোচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। পাঁচশো থেকে সাতশো গ্রামের দর কেজি প্রতি হাজার টাকা।।
‘দিঘা ফিশারম্যান ও ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের কথায়, ‘‘গত এক সপ্তাহ ধরে রোজ গড়ে এক টন করে ইলিশ উঠছে দিঘার সমুদ্র থেকে। এই সময়ে এত ইলিশ আগে দেখা যায়নি।’’ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতি জানাচ্ছেন, দিঘার তুলনায় গত দু’দিনে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ডহারবার, রায়দীঘির সমুদ্র থেকে সবথেকে বেশি ইলিশ জালে উঠছে। তাঁর কথায়, ‘‘গত তিন দিনে এই সমস্ত এলাকা থেকে সব মিলিয়ে প্রায় সত্তর টন ইলিশ উঠেছে। বেশিরভাগের ওজন পাঁচশো থেকে সাতশো গ্রাম। স্বাদেও হার মানাচ্ছে বর্ষার ইলিশকে।’’ বৈঠকখানা মাছ বাজারের আড়তদার বিজয় সিংহ জানাচ্ছেন, বর্ষায় ইলিশের থেকে দামে কম, স্বাদে বেশি। গত এক মাসে ভাল পরিমাণে আমদানিও হয়েছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনই রুপালি শস্যের আচমকা আমদানির কারণ, বলছেন মৎস্য গবেষক ও শিক্ষকেরা। কেন্দ্রীয় মৎস্যশিক্ষা সংস্থার (কলকাতা কেন্দ্র) বিজ্ঞানী গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আবহাওয়া পরিবর্তন তো আছেই। এ ছাড়া পরিযায়ী শ্রেণির ইলিশ জলে তার গতিপথ পরিবর্তন করা এই অসময়ে প্রাপ্তির কারণ।’’ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোমেন সাহুও জানাচ্ছেন, ‘‘এ বছর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সেই
সঙ্গে দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ইলিশের ঝাঁক অপেক্ষাকৃত লবণাক্ত জায়গার দিকে সরে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে গতিপথ পরিবর্তন করেছে।’’
যদিও ভিন্ন মত পুরুলিয়া সিধু কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসীম নাথের। তিনি বলছেন, ‘‘রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে যে পরিমাণ ছোট ইলিশ ছিল তারাই বড় হয়েছে। ডিম ছেড়ে যাওয়ার সময়ে ধরা পড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy