Advertisement
১৭ মে ২০২৪

রাতপথে অ্যাপ-ক্যাবে চড়ে ডাকাতের হানা

মঙ্গলবার গভীর রাতে পশ্চিম বন্দর থানা এলাকায় এমনই এক ঘটনায় দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হল ১৭-১৮ বছরের চার যুবক।

ফৈজল রাজা। (ডান দিকে) দুষ্কৃতীদের সেই গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ফৈজল রাজা। (ডান দিকে) দুষ্কৃতীদের সেই গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৩
Share: Save:

অ্যাপ-ক্যাব নিয়ে এসে ডাকাতির চেষ্টা রাতের শহরে। তা-ও থানা থেকে মাত্র একশো মিটারের দূরত্বে!

মঙ্গলবার গভীর রাতে পশ্চিম বন্দর থানা এলাকায় এমনই এক ঘটনায় দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হল ১৭-১৮ বছরের চার যুবক। অভিযোগ, অ্যাপ-ক্যাব নিয়ে এসে ওই কিশোরদের থেকে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে গাড়ির মধ্যে থাকা চার দুষ্কৃতী। তিন যুবক ছুটে পালালেও এক জনকে অপহরণ করারও চেষ্টা হয়। পুলিশ জানায়, টহলরত পুলিশকর্মী এক ঝুপড়ির মধ্যে থেকে সেই যুবকের চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করেন। ওই রাতেই এই ঘটনায় অভিযুক্ত ক্যাবের চালক-সহ চার যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম ভিকি সর্দার, শঙ্কর রাজ, শঙ্কর সিংহ এবং শেখ জামশেদ। পুলিশ জানায়, অ্যাপ-ক্যাবটি আটক হয়েছে। ক্যাবের ভিতর থেকে মিলেছে বেশ কিছু অস্ত্রও। এই ঘটনায় যেমন প্রশ্ন উঠেছে রাতপথের নিরাপত্তা নিয়ে, তেমনই চিন্তা দেখা দিয়েছে ডাকাত দলটির উদ্দেশ্য নিয়েও। তারা ওই যুবকদের থেকেই টাকা হাতাতে বেরিয়েছিল, না কি আরও বড় ছক ছিল, তার তদন্ত করছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই রাতে দু’টো নাগাদ পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার বিএনআর রেল কলোনির আবাসন থেকে গার্ডেনরিচ রোড ধরে বাবুবাজারে বাড়ি ফিরছিল ওই যুবকেরা। তারা রেল আবাসনে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে কেটারিং সংস্থার হয়ে কাজ করতে গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, রেল আবাসন থেকে কিছুটা এগোনো মাত্রই বিপরীত দিক থেকে দ্রুত বেগে এসে অ্যাপ-ক্যাবটি তাদের সামনে দাঁড়ায়। দুষ্কৃতীরা তেড়ে যেতেই তিন যুবক ছুটে পালালেও এক জন রাস্তার পাশে গর্তে পা পিছলে পড়ে যায়। ওই চার যুবকের এক জন ভিকি প্রধানের কথায়, ‘‘কেটারিংয়ের কাজ সেরে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখি, একটি গাড়ি আমাদের সামনে এসে জোরে ব্রেক কষে থামল। চার জন নেমে এসেই সোজা আমাদের প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকাল। ওরা টাকা চাইছিল। প্রতিবাদ করলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’’

ভিকি জানায়, এর পরেই তারা একটি গলি ধরে দৌড়তে শুরু করে। কিন্তু বাবুবাজারের বাসিন্দা ফৈজল রাজা পড়ে যায়। তখনই ক্যাবে তুলে ফৈজলকে পাশের একটি ঝুপড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানায়, সেখানে তাকে হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করে দুষ্কৃতীরা। ফৈজলের মোবাইল থেকে তার বাড়িতেও ফোন করা হয়। ফৈজলও মাকে ফোন করে জানায়, বিএনআরের কাছে একটি এটিএমের কাছে আটকে রাখা হয়েছে তাকে। ফৈজলের বন্ধুদের ঘটনাটি জানান তার মা। ফৈজলের এক বন্ধু রেহান খানের কথায়, ‘‘খবর পেয়েই আমরা ক’জন মিলে বেরিয়ে পড়ি। তত ক্ষণে পুলিশ পৌঁছে গিয়েছে। দেখি, ফৈজলের মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।’’ পুলিশ জানায়, বিএনআর রেল কলোনির কাছে টহল দিচ্ছিলেন পশ্চিম বন্দর থানার কর্মীরা। সুনসান রাতে হঠাৎ একটি ঝুপড়ির মধ্যে থেকে এক যুবকের আর্তনাদ ভেসে আসে তাঁদের কানে। ঝুপড়িতে ঢুকে পুলিশ দেখে, মেঝেতে পড়ে ওই যুবক। তিন দুষ্কৃতী মিলে মারধর করছে তাকে। পুলিশ ফৈজলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। পুলিশ জানায়, ফৈজলকে ছুরি, চপার ও কাটারির হাতল দিয়ে জখম করেছে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় অভিযুক্ত চার যুবককে ধরা হলেও এক জন এখনও ফেরার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE