Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাবা ‘খুনি’, থানায় কুকুরপ্রেমী মেয়ে

বাবার বিরুদ্ধে ‘খুনের’ অভিযোগ আনলেন মেয়ে। না, কোনও মানুষ খুন নয়। বাড়ির সামনে ঘুরে বেড়ানো দু’টি কুকুরছানাকে বাবা পিটিয়ে খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টা করেছেন বলেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মেয়ে!

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৬
Share: Save:

বাবার বিরুদ্ধে ‘খুনের’ অভিযোগ আনলেন মেয়ে। না, কোনও মানুষ খুন নয়। বাড়ির সামনে ঘুরে বেড়ানো দু’টি কুকুরছানাকে বাবা পিটিয়ে খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টা করেছেন বলেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মেয়ে!

খড়দহের এই ঘটনায় চুয়াত্তর বছরের বৃদ্ধ বাবাকে আদালত থেকে রীতিমতো জামিনও নিতে হয়েছে। যদিও বাবার অভিযোগ, পারিবারিক অশান্তির কারণেই মেয়ে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন।

কুকুরছানাদের ‘খুনের’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবা-মেয়ের তরজা এখন তুঙ্গে উঠেছে খড়দহের অরুণাচল এলাকায়। পুলিশ অপেক্ষায় আছে ময়না-তদন্তের রিপোর্টের। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘ভাবতে পারছেন, কুকুরছানার ময়না-তদন্ত! মহকুমাশাসকের সহযোগিতায় শেষমেশ সেই কাজ করা গিয়েছে। এখন রিপোর্ট এলে বাঁচি। ফাইনাল চার্জশিট দেওয়া যাবে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, অরুণাচলের বাসিন্দা সুশান্ত রায়চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে সৌমি গত ২১ মার্চ খড়দহ থানায় এই ‘খুনের’ অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ২৪ মার্চ ব্যারাকপুর আদালতে গিয়ে সিইএসসি-র প্রাক্তন কর্মী সুশান্তবাবু জামিন নেন।

অভিযোগটা কী? সৌমি জানান, বাড়ির সামনে পাঁচটি কুকুরছানাকে নিয়মিত খেতে দেওয়া থেকে ওষুধ খাওয়ানো— সবই তিনি করতেন। অভিযোগ, গত ১৮ মার্চ তিনি কিছু ক্ষণের জন্য বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই এক প্রতিবেশী তাঁকে ফোন করে জানান, সুশান্তবাবু বাঁশ দিয়ে কুকুরছানাদের পেটাচ্ছেন। সৌমি ফিরে এসে দেখেন, বাড়ির জলাধারের উপরে একটি কুকুরছানা রক্তাক্ত অবস্থায় মরে পড়ে রয়েছে। আর একটি পড়ে রয়েছে ছাদে। ওই তরুণী বলেন, ‘‘বাবা জিজ্ঞেস করায় তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। দাবি করেন, আমার পোষা কুকুরই নাকি কামড়ে ওই ছানা দু’টিকে মেরে দিয়েছে।’’ সৌমি বাড়িতেও তিনটি কুকুর পোষেন।

এর পরেই থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানান ওই তরুণী। ওই দিনই দিল্লিতে একটি পশুপ্রেমী সংস্থার কাছে বিষয়টি ই-মেল করে জানান তিনি। দু’দিন পরে বাড়ির কাছেই একটি ঝোপ থেকে প্লাস্টিকে মোড়া দু’টি কুকুরছানার দেহ উদ্ধার করেন সৌমি। ২১ মার্চ পুলিশ এসে সেই দেহ ময়না-তদন্তে পাঠান। ওই তরুণী বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে বাবার মনোমালিন্য থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য অবলা প্রাণীদের উপরে অত্যাচার করবেন কেন?’’

কুকুরকে ‘খুন’ করার দায়ে পুলিশ কি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে? পুলিশ জানাচ্ছে, আইনে পশুহত্যার শাস্তি রয়েছে। খড়দহের এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। ওই ধারায় বলা রয়েছে, ‘দ‌শ টাকা কিংবা ততোধিক মূল্যের কোনও পশুকে হত্যা করলে, বিষ প্রয়োগ করলে, পঙ্গু করে দিলে কিংবা অনিষ্ট করলে দু’বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।’ তবে এটি জামিনযোগ্য। ২৬ মার্চ মোরাদাবাদের এক সরকারি অফিসার পোষ্যকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। সেই সময়ে এক রাস্তার কুকুর চিৎকার করে পিছনে তাড়া করলে তাকে গুলি করে খুন করেন ওই অফিসার। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

কিন্তু খড়দহের সুশান্তবাবু অবশ্য জামিন নিয়ে বাইরে রয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মেয়ে এখনই আমার সম্পত্তি চায়। তাই নিয়ে ঝামেলা চলছে। আমি অসুস্থ মানুষ। হেনস্থা করতেই আমাকে এমন ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stray Dog FIR Khardaha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE