Advertisement
E-Paper

গোলমালে স্তব্ধ পথ, দিনভর দুর্ভোগ

চোখের সামনেই দেখলেন, বাগনান-হাওড়া রুটের যে বেসরকারি বাসে তিনি ছিলেন, তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। দাউদাউ করে জ্বলছে গোটা বাস। আর বাসের ভিতরে পুড়ছে তাঁর কয়েক হাজার টাকার গোলাপ-সহ অন্য ফুল, যার একাংশ পড়ে আছে রাস্তায়।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২২
জ্বলন্ত বাস থেকে ছিটকে পড়েছে ব্যবসায়ীদের ফুলের বস্তা। শনিবার কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

জ্বলন্ত বাস থেকে ছিটকে পড়েছে ব্যবসায়ীদের ফুলের বস্তা। শনিবার কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তখন অবরোধ চলছে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। গরফা সেতুর উপরে আটকে পড়া বাসের ভিতরে বসে ছিলেন স্বপন কোনার। সঙ্গে বেশ কয়েক হাজার টাকার ফুল। যাচ্ছিলেন হাওড়ার ফুল বাজারে সেই ফুল বিক্রি করতে। আচমকাই বাসের ছাদে পড়তে শুরু করল ইট আর পাথর। আতঙ্কে বাস থেকে নেমে বাকি যাত্রীদের সঙ্গে ছুটতে শুরু করেছিলেন স্বপনবাবুও। আশ্রয় নিয়েছিলেন গরফা রেল সেতু পেরিয়ে রাস্তার পাশে এক চায়ের দোকানে। পরে চোখের সামনেই দেখলেন, বাগনান-হাওড়া রুটের যে বেসরকারি বাসে তিনি ছিলেন, তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। দাউদাউ করে জ্বলছে গোটা বাস। আর বাসের ভিতরে পুড়ছে তাঁর কয়েক হাজার টাকার গোলাপ-সহ অন্য ফুল, যার একাংশ পড়ে আছে রাস্তায়।

নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের জেরে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে ছিল
কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। স্বপনবাবুর ঘটনাটি এ দিনের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। টানা চার ঘণ্টা এ ভাবেই চরম আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়েছে স্বপনবাবুর মতো অজস্র মানুষকে। অবরোধ ও হাঙ্গামার জেরে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় বহু মানুষকেই এ দিন ফিরে যেতে হয়েছে বাড়িতে। অনেকে আবার হেঁটে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত গিয়ে অন্য বাস ধরে ঘুরপথে পৌঁছন গন্তব্যে। এ দিনের অবরোধের জেরে হ্যাংস্যাং মোড় থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজটে পড়ে টোল ট্যাক্স
পর্যন্ত কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশ। সেই যানজট ছড়িয়ে যায় বিদ্যাসাগর সেতুতেও। ফলে নাজেহাল হতে হয় হাওড়ার শহরতলির বাসিন্দাদের।

অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে নিয়ে উনসানির বাড়িতে ফিরছিলেন মোহতাব শেখ। অবরোধে বাস আটকে যাওয়ায় ভিতরেই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন তাঁরা। তার পরে বাস থেকে নেমে হেঁটেই বাড়ির দিকে মাকে নিয়ে রওনা হন তিনি। ক্ষুব্ধ মোহতাব জানালেন, এসএসকেএমে মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে শোনেন, এ দিনও নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘খুব বিপদে পড়েছি। আজই মাকে ডাক্তার দেখানোর দিন ছিল। এ ভাবে অশান্তি করে লাভ
হবে না। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে কী হবে?’’

আরও পড়ুন: অবশেষে ঠিক হল টালা সেতু ভাঙার দিন

ভোগান্তি: গন্ডগোল কিছুটা থামার পরে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন মানুষ। শনিবার, কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সাড়ে দশটার পর থেকেই সাঁতরাগাছি স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, অজস্র মানুয বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। গোলমালের জন্য পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় মেলেনি ট্যাক্সি বা অ্যাপ-ক্যাবও। দিনের ব্যস্ত সময়ে তো বটেই, বিকেলের পরেও দেখা গিয়েছে, গোলমালের আশঙ্কায় যানবাহনের সংখ্যা অনেকটাই কম। অন্য দিকে, বিভিন্ন স্টেশনে গোলমালের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথও বন্ধ হয়ে যায় অনেকের জন্য। অনেক রাতে কোনও রকমে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: অবিশ্বাস নয়, ডাক্তারের হাত ধরেই আরোগ্যের পথে

NRC CAB Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy