Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অবিশ্বাস নয়, ডাক্তারের হাত ধরেই আরোগ্যের পথে

এ দিন বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা শোনান পাপাই রায়, পারমিতা বেরা, সম্রাট কর, স্তুতি দাস এবং পায়েল সামন্তেরা। কারও কাছে হার মেনেছে প্রতিশোধস্পৃহা তো কোথাও নিয়তি। সুদৃঢ় হয়েছে চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক।

লড়াকু: নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শোনান এই ছ’জন। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শোনান এই ছ’জন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

কিছু দিন আগেও ছ’জন তরুণ-তরুণী কেউ কাউকে চিনতেন না। শনিবার বেসরকারি হাসপাতালের পঞ্চাশ বছর পূর্তির মঞ্চ তাঁদের এক সুতোয় গেঁথে ফেলল। এ দিন বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা শোনান পাপাই রায়, পারমিতা বেরা, সম্রাট কর, স্তুতি দাস এবং পায়েল সামন্তেরা। কারও কাছে হার মেনেছে প্রতিশোধস্পৃহা তো কোথাও নিয়তি। সুদৃঢ় হয়েছে চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক।

মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন পাপাই রায়। বন্ধু সৈকত বাগের বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এ দিন ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবক জানান, তাঁকে যখন ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিএমআরআই) হাসপাতালে আনা হয় তখন মুখ থেকে চোয়াল কার্যত ঝুলছে। পাপাইয়ের কথায়, ‘‘কথা বলতে পারতাম না। খেতে অসুবিধা হত। কিন্তু মুখের হাসি হারাতে দিইনি।’’

মেদিনীপুরের বাসিন্দা পারমিতা বেরা এক যুবকের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেননি। প্রতিশোধ নিতে যাদবপুরের ওই ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল ওই যুবক। এ দিন পারমিতা বলেন, ‘‘অর্ধেক চুল পুড়ে গিয়েছিল। একটি চোখ নেই। নাক, কান গলে গিয়েছে। এই চেহারা নিয়ে বাইরে কী ভাবে বেরোব ভাবতাম।’’ বেসরকারি হাসপাতালে পনেরোটি সার্জারির পরে এখন সারা দেশে ঘুরে বেড়ান সমাজতত্ত্বের ছাত্রী। পারমিতার কথায়, ‘‘যে ছেলেটি ভেবেছিল, আমি আর কোনও দিন এই মুখ কাউকে দেখাতে পারব না। তাকে ভুল প্রমাণ করতে পেরেছি।’’

পারমিতা যেখানে শেষ করলেন সেখানে জিয়নকাঠি ছোঁয়ালেন বীরভূমের তরুণী স্তুতি দাস। এক পথ দুর্ঘটনায় শরীরে একাধিক আঘাত নিয়ে দু’বছর আগে সিউড়ি থেকে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন তিনি। মাথায় চোট, বুকের পাঁজর এবং কোমরের হাড় ভাঙা। পায়ের গোড়ালি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই তরুণী বলছেন, ‘‘গত বছর সিকিমে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলাম। জীবন কোথাও থেমে থাকে না। এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন।’’ সে কথা মানছেন ভদ্রেশ্বরের যুবক অমিত ঘোষ এবং কিডনির অসুখের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া পায়েল সামন্ত। চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে গুরুতর জখম অমিতের বাঁচার আশা ক্ষীণ বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পায়েল এক সময়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু কিডনির অসুখের জন্য তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে অসুখ তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতী ছাত্রী হিসাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এই প্রতিটি লড়াইয়ে ভরসার জায়গা হলেন এক জন ‘ডাক্তারবাবু’। পায়েলের ক্ষেত্রে তা চিকিৎসক কৌশিক দাস হলে অমিতের আস্থা জয় করেছেন স্নায়ু শল্য চিকিৎসক সৌমিত্র রায়। পাপাই, স্তুতি এবং অগ্ন্যাশয়ের রোগে আক্রান্ত সম্রাট করের ক্ষেত্রে তাঁরা হলেন চিকিৎসক সুজন মুখোপাধ্যায়, অয়ন রায় এবং অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। জীবনের এই জয়গানে এ দিন হাজির ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালের গ্রুপ চিফ অপারেটিং অফিসার চিকিৎসক সিমরদীপ গিলও।
পারমিতার চিকিৎসক অনুপম গোলাসের কথায়, ‘‘অবিশ্বাসের বাতাবরণে কোনও রোগী সুস্থ হতে পারেন না। চিকিৎসকের উপরে আস্থা থাকাটা জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE