E-Paper

প্রতিবন্ধী কামরা’য় যাত্রীর রক্তাক্ত দেহ, উধাও টাকা-ফোন

প্রতি বারের মতো এ বারেও একাই কাটিহার গিয়েছিলেন। ২০ নভেম্বর তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। পরিবারের দাবি, ১৯ নভেম্বর রাতে কাটিহার এক্সপ্রেসে ওঠেন সৌমিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৪
মৃত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

মৃত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রীর সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল ট্রেনে ওঠার পরে। সকালে হাওড়ায় নেমে সোজা বালির বাড়িতে ফিরবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তুপরদিন ওই ট্রেনেরই প্রতিবন্ধী কামরা থেকে উদ্ধার হল সেই ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ। এই ঘটনায় হাওড়া জিআরপি-তে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যেরা। সর্বস্ব লুট করে ট্রেনেই ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। তবে, ট্রেনের প্রতিবন্ধীকামরায় এক যাত্রী এ ভাবে খুন হওয়ায় রেলের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (৬৩)। বিশেষ ভাবে সক্ষম ওই ব্যক্তি পেশায় ছিলেন তবলাবাদক। হাওড়ার বালির ঘোষপাড়ায় ভাড়া থাকতেন। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও এক ছেলে রয়েছে তাঁর। পরিজনেরা জানিয়েছেন, তবলার প্রশিক্ষণ দিতে মাসে এক বার করে কাটিহারে যেতেন তিনি। দু’-এক দিন থেকে ফিরে আসতেন।

প্রতি বারের মতো এ বারেও একাই কাটিহার গিয়েছিলেন। ২০ নভেম্বর তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। পরিবারের দাবি, ১৯ নভেম্বর রাতে কাটিহার এক্সপ্রেসে ওঠেন সৌমিত্র। সঙ্গে টিউশনি করে উপার্জন করা হাজার দশেক টাকা,মোবাইল-সহ বেশ কিছু কাগজপত্র ছিল। ট্রেনে উঠে ফোনে স্ত্রীকে সে সব কথা জানান তিনি। বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় হাওড়ায় নামার কথা ছিল তাঁর।

সৌমিত্রের ছেলে অর্ক চট্টোপাধ্যায় জানান, বুধবার সকাল দশটা বেজে গেলেওসৌমিত্র বাড়ি না ফেরায় খোঁজ শুরু হয়। মোবাইলে ফোন করলেও ধরেননি তিনি। বিকেলের দিকে পরিজনেরা হাওড়ায় গিয়ে রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এক ব্যক্তির দেহ মেলার কথা জানা যায়। সন্ধ্যায় তাঁরা সৌমিত্রের দেহ শনাক্ত করেন। সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল-সহ সর্বস্ব লুট করতেই দুষ্কৃতীরা সৌমিত্রকে খুন করেছে বলেবৃহস্পতিবার হাওড়া জিআরপি-তে অভিযোগ করেছে পরিবার। অর্ক বলেন, ‘‘সদ্য মোবাইল কিনেছিলেন বাবা। সঙ্গে টাকাও ছিল। কিছুই পাওয়া যায়নি। কাগজপত্রের ব্যাগও পাইনি।’’

ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত তদন্তকারীরা। সৌমিত্রের গলায় এবং পেটে ভোজালির কোপের চিহ্ন মিলেছে। আঘাত রয়েছে শরীরের অন্যান্য অংশেও। ট্রেন ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে একটি আসনেরউপরের বার্থ থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। মনে করা হচ্ছে, মালদহ এবং কাটিহারের মাঝে কোথাও খুন করা হয়েছে। রেল পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যেখান থেকে দেহটি উদ্ধার হয়েছে, সেখানে বিশেষ রক্তের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ফলে, অন্যকোথাও খুন করে দেহটি রেখে যাওয়া হয় কিনা, তদন্তে সে দিকটাও দেখা হবে। খুনের তদন্তে সিআইডি সহযোগিতা করছে বলে ভবানী ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন হাওড়া জিআরপি-তে গিয়ে কথা বলেন সিআইডি-রআধিকারিকেরা। ডিআইজি সিআইডি সোমা দাস মিত্র বলেন, ‘‘এটা যে খুন, তা প্রায় নিশ্চিত। রেল পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তকারীদের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়েছে।’’রেল পুলিশ এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।

চলন্ত ট্রেনের কামরায় এক যাত্রীর খুন হওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। ট্রেনে সফর করার সময়ে বিশেষ ভাবে সক্ষম এক যাত্রী ছুরিকাহত হলেও যাত্রীরা কেউ কী ভাবে তা টের পেলেন না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘আমরা রেল পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি। ওরা সিআইডি-কে (গোয়েন্দা বিভাগ) তদন্তের জন্য বলেছে। তদন্ত হলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’ লুটপাটের উদ্দেশ্যে খুন, না কি অন্য কোনও কারণ ছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। রেলের কামরায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন প্রসঙ্গে এ দিন রেল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bally

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy