Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Unnatural Death

নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ফিরে হরিদেবপুরে বাড়ির মধ্যেই প্রৌঢ়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ঘরের ভিতরে সুরজকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান পরিজনেরা। দ্রুত দেহ নামানোর তোড়জোড় শুরু করার পাশাপাশি হরিদেবপুর থানায় খবর দেন তাঁরা।

dead body.

টানা চার মাস নেশামুক্তি কেন্দ্রে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার দিনই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল সুরজ মণ্ডলের (৫৩)। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ ০৭:৩৭
Share: Save:

স্বামীর পরে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন একমাত্র ছেলেও। নেশার গ্রাসে পুরো পরিবারকেই হারিয়ে যেতে দেখে বছর ছয়েক আগে নিজেই নেশামুক্তি কেন্দ্র খোলেন কবরডাঙার বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের শাশ্বতী মণ্ডল। বছর দুয়েক আগে ২৮ বছরের ছেলেকে কোনও মতে নেশার কবল থেকে ছাড়িয়ে আনতে পারলেও নিজের স্বামীর ক্ষেত্রে তা পারলেন না শাশ্বতী। টানা চার মাস নেশামুক্তি কেন্দ্রে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার দিনই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল সুরজ মণ্ডলের (৫৩)। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হরিদেবপুর থানা এলাকার রামচন্দ্রপুরের ব্রিকফিল্ড লেনে। পুলিশ এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ঘরের ভিতরে সুরজকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান পরিজনেরা। দ্রুত দেহ নামানোর তোড়জোড় শুরু করার পাশাপাশি হরিদেবপুর থানায় খবর দেন তাঁরা। পুলিশ এসে দেহ নামিয়ে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সুরজকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময়ে প্রোমোটিং ব্যবসায় যুক্ত থাকা সুরজ তিন দশকেরও বেশি সময়ধরে মদে আসক্ত ছিলেন। এলাকায় লাল্টু নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। নেশার জেরে যক্ষ্মা-সহ একাধিক রোগে আক্রান্ত সুরজ বেশ কয়েক বছর ধরে কিছুই করতেন না। নেশা ছাড়াতে তাঁকে নিয়মিত নেশামুক্তিকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হত। কিন্তু ফিরে আসার পরেই আবার মদে আসক্ত হয়ে পড়তেন। মাস চারেক আগে কেওড়াপুকুরে শাশ্বতীর মা-বাবার বাড়ির কাছে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করানো হয়। আগামী ১৪ মে সুরজের জন্মদিন। তার আগে সোমবার দুপুরে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা হতেই সুরজ ফের মদ খাওয়ার জন্য বাড়িতে জোরাজুরি শুরু করেন বলে পরিবার সূত্রের খবর। তাঁর ছেলে বাবার বাইরে যাওয়া ঠেকাতে সদর দরজায় তালা দিয়ে বাইরে চলে যান বলে পরিবার সূত্রের দাবি। ওই সময়ে বাড়িতে তেমন কেউ ছিলেন না। পুত্রবধূ অন্য ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন।

রাত ১০টা নাগাদ ছেলে ও পরিবারের বাকি লোকজন ফিরে এলে একতলার ঘরে সুরজকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এর পরে দ্রুত ওই ব্যক্তিকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার সুরজের দেহের ময়না তদন্তের পরে সন্ধ্যায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ওই পরিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ায় সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

এ দিন রামচন্দ্রপুরে ব্রিক ফিল্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে বসে সুরজের স্ত্রী জানান, তাঁর ছেলেও বাবার মতো মদ ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ায় বছর ছয়েক আগে নিজেদেরপারিবারিক বাড়িতে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি। ছেলে বছর দুয়েক ধরে সুস্থ। এ দিন মৃত সুরজের পিসতুতো দাদা অশোক সাঁতরা বলেন, ‘‘বাবা ও ছেলের নেশার প্রতি আসক্তির বিরুদ্ধে গোটা পরিবারকেই লড়তে হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, চেষ্টা করেও সুরজকে নেশার কবল থেকে মুক্ত করা যায়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

unnatural death Haridevpur Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE