Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
গোয়েন্দা নজরে বন্ধুরা

দুই ক্ষতের আড়ালেই সূত্র আবেশ-রহস্যের

বাঁ বগলে গভীর ক্ষত। বাঁ হাতের তেলো ও ডান হাতের একটা আঙুলেও তা-ই। তিনটি ক্ষতই হয়েছে কাচের ভাঙা টুকরোয়। আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের তাগিদে তদন্তকারীদের নজর এখন তেলো ও আঙুলের ক্ষত দু’টির দিকে।

মোমের আলো, সুবিচারের দাবি। আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

মোমের আলো, সুবিচারের দাবি। আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:৫৩
Share: Save:

বাঁ বগলে গভীর ক্ষত। বাঁ হাতের তেলো ও ডান হাতের একটা আঙুলেও তা-ই। তিনটি ক্ষতই হয়েছে কাচের ভাঙা টুকরোয়।

আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের তাগিদে তদন্তকারীদের নজর এখন তেলো ও আঙুলের ক্ষত দু’টির দিকে। তাঁরা জানতে চাইছেন, ক্ষত দু’টি কেন হল। ভাঙা কাচের উপরে পড়ে গিয়ে, নাকি কোনও আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে? ‘‘এটা পরিষ্কার হলেই বোঝা যাবে, ঘটনাটি খুন না অনিচ্ছাকৃত খুন, নাকি নিছক দুর্ঘটনা।’’— মঙ্গলবার বলেছেন লালবাজারের এক সূত্র।

বস্তুত আবেশের আঙুল-তেলোতে কী ভাবে আঘাত লাগল, তার আঁচ পেতে রবিবার ময়নতদন্তের পরে অটপ্সি সার্জনরা সানি পার্ক অ্যাপার্টমেন্টের ঘটনাস্থলটি সরেজমিন পরিদর্শন করে এসেছেন। তবু ধন্দ কাটেনি। জট কাটাতে এ বার ফরেন্সিকের সাহায্য নেওয়া হবে। তার পরেই লালবাজার ঠিক করবে, কারও বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কি না, এবং করা গেলে কোন ধারায়। আবেশের মা এ দিনও দাবি করেছেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। শনিবার আবেশের সঙ্গে থাকা বন্ধুবান্ধবদের জেরা পর্বও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আবেশের শরীরে মোট সাতটি ক্ষত ছিল। তিনটি গভীর— বাঁ বগলে, বাঁ হাতের তেলোতে ও ডান হাতের আঙুলে। অন্যগুলো থেকে রক্তও বেরোয়নি। তবে বগলের অ্যাক্সিলারি আর্টারির গভীর ক্ষত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণেই সতেরো বছরের কিশোরটির প্রাণ গিয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ।

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গও এ দিন বলেন, আবেশের মৃত্যু আঘাতজনিত কারণে। পুলিশের দাবি, গত শনিবার আবেশ আঘাত পেয়েছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পৌনে ছ’টার মধ্যে। আর তাকে হাসপাতালে নিয়ে য়াওয়া হয় সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ। গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ছেলেটি প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিল। ‘‘তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বেঁচে যেত।’’— মন্তব্য এক তদন্তকারীর।

এখানেই প্রশ্ন উঠছে বন্ধুদের আচরণ নিয়ে। অতক্ষণ কেউ কেন আবেশের সাহায্যে এগিয়ে এল না, সেটা তদন্তকারীদের কাছে মস্ত ধাঁধা। ওঁরা এ-ও জানতে চাইছেন, সে দিন আবেশকে সানি পার্কের পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল যে বন্ধু, এমন পরিস্থিতিতে সে-ই বা চলে গেল কেন? লন ও পার্কিং লটের তিন জায়গায় চাপ চাপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখেও কেন কারও টনক নড়ল না? এক কিশোরী ‘ব্লাড ব্লাড’ বলে চিৎকার করছে শুনে আবাসনের রক্ষীরা কী করছিলেন?

এ হেন প্রেক্ষাপটে কয়েক জনের বিরুদ্ধে গাফিলতির নির্দিষ্ট অভিযোগ আনার তোড়জোড় হচ্ছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে শনিবারের পার্টিতে হাজির ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞাসাবাদ। বিশেষ গোয়েন্দা দল এ দিন অমিত চৌধুরী ও তাঁর মেয়েকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছে। শনিবার অমিতবাবুর মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতেই তাঁদের সানি পার্কের অ্যাপার্টমেন্টে হাজির হয়েছিল আবেশ ও তার জনা পনেরো বন্ধু। অমিতবাবু ও তাঁর স্ত্রী-মেয়েই আবেশকে নিজেদের গাড়িতে ঢাকুরিয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিল আরও তিন কিশোরীও।

তদন্তকারীদের দাবি, ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা বলা হয়েছে। মোবাইলের কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেল, ফেসবুক, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য শনিবারের পার্টিতে হাজির থাকা পাঁচ জনের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে বিশেষ তদন্তকারী দল। আবেশের মোবাইলটি তার মা শনিবার রাতেই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। তদন্তকারী সূত্রের খবর: আবেশের যে বন্ধুটি তাকে শনিবারের পার্টিতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, রবিবারই তার বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ। সেই বয়ানের সঙ্গে পার্টিতে উপস্থিত অন্যদের বয়ান মিলিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়েনি বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

আবেশের মায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

আর সেই বয়ানের ভিত্তিতে শনিবারের ঘটনার প্রাথমিক একটা চিত্র খাড়া করেছেন গোয়েন্দারা। ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টের সঙ্গেও তা মেলানো হবে। সে রকম হলে পার্টিতে উপস্থিত থাকা সকলকে ফের আর এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে লালবাজার-সূত্রে।

বিশেষ তদন্তদলের অফিসারেরা এ দিন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের প্রিন্সটন ক্লাবে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন। ওই কিশোর-কিশোরীদের যারা শনিবার সেখানে ছিল, তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে আবাসনের রক্ষী ও গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abesh Rimhjim Rituparna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE