Advertisement
E-Paper

নামের ভার না শিল্পীর ধার, পুজোর সাফল্য কার হাত ধরে

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পী সুশান্ত পাল, সনাতন দিন্দারা টেস্ট ম্যাচের মতো ঢিমেতালে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু পুজোকর্তাদের হয়ে সন্তোষপুর লেকপল্লির সোমনাথ দাস শুরু করলেন চড়া সুরে।

কুন্তক চট্টেপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

প্রায় দু’দশক আগের কথা। হাতিবাগানের একটি পুজোয় থিম তৈরির দায়িত্ব পেলেন পাড়ারই এক যুবক শিল্পী। প্রথম বছরেই পুজো কমিটির পকেটে তাক লাগানো সাফল্য! পরপর কয়েক বছর ওই শিল্পীর হাত ধরেই শহরের পুজো ময়দানে প্রথম সারিতে উঠে এসেছে ওই কমিটি। ধাপে ধাপে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে সেই শিল্পীও এখন খ্যাতির মধ্যগগনে।

ওই শিল্পীর উত্থানে হাতিবাগানের পুজো দায়ী, না কি শিল্পীর হাত ধরেই জনপ্রিয় হয়েছে ওই পুজো? এ নিয়ে চোরাগোপ্তা আলোচনা বহু দিন ধরেই ছিল, ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় টিপ্পনীও। শনিবার সেই প্রশ্নেই উত্তাল হল উল্টোডাঙা বিধান সঙ্ঘের মঞ্চ। কখনও সোজাসাপ্টা, কখনও বা টিপ্পনী—যুযুধান দু’পক্ষের বাগ্‌যুদ্ধে শরিক হলেন দর্শকেরাও।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পী সুশান্ত পাল, সনাতন দিন্দারা টেস্ট ম্যাচের মতো ঢিমেতালে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু পুজোকর্তাদের হয়ে সন্তোষপুর লেকপল্লির সোমনাথ দাস শুরু করলেন চড়া সুরে। প্রশ্ন তুলে দিলেন, বড় ক্লাবের ময়দান না পেলে শিল্পীরা শিল্প দেখাতেন কোথায়? পুজোর ইতিহাস তুলে এনে দাবি করলেন, রমেশ পালের প্রতিমা দেখতে নয়, বাগবাজার বা সিমলা ব্যায়াম সমিতির নামেই আসতেন দর্শকেরা। এখনও ক্লাবের নামেই ভি়ড় জমে।

সেই দাবি নস্যাৎ করে দিলেন শিল্পীরা। সাবেকি প্রতিমাতেও রমেশ পাল, মোহনবাঁশি রুদ্রপাল কিংবা জিতেন পালেরা রীতিমতো নজর কাড়তেন, সেই দাবি উঠল। সনাতনেরা বললেন, তাঁরা শুধু পুজো করে বেঁচে থাকেন না। পুজোর বাইরেও শিল্পীসত্ত্বা রয়েছে তাঁদের। কেউ চিত্রশিল্পী, কেউ বা সেট ডিজাইনার হিসেবে দেশে-বিদেশে সমাদৃত। এই জনপ্রিয়তা তো পুজো কমিটিদের প্রচারে কাজে লাগে। বেহালা নূতন দলের সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিপক্ষে বলতে এসেও ঠারেঠোরে মেনে নিলেন সেই কথা। খোলাখুলি বলেই দিলেন, পুরস্কারের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতেই এ বার শিল্পী হিসেবে যোগেন চৌধুরীর নাম ব্যবহার করেছিলেন তাঁরা।

পুরস্কারই যে এখন পুজোর শেষ কথা হয়ে উঠছে, উঠে এল সে কথাও। সেই কথার সত্যতা প্রমাণে শিল্পী দেবতোষ করের অভিজ্ঞতা, উত্তর কলকাতার একটি পুজোয় এ বার কর্তারা তাঁর উপরে প্রথমে খড়্গহস্ত হয়ে উঠেছিলেন। পুরস্কারের ঝুলি ভরতেই সেই পুজোকর্তারা অবশ্য বুকে জড়িয়ে ধরেছেন তাঁকে।

কখনও কখনও শিল্পীরাও যে পুজো কমিটিকে বিপদে ফেলেন না, এ কথাও তো বলা যায় না। ষষ্ঠীর দিনেও মণ্ডপের কাজ শেষ হয়নি, এমন ঘটনাও দেখেছে কলকাতা। এ বছর তো দক্ষিণ শহরতলির একটি পুজোয় প্রতিমা নিয়েই ফাঁপ়়রে ফেলেছিলেন এক নামী শিল্পী। আকছারই পুজোর বাজেট কয়েক লক্ষ টাকা বে়ড়ে যায়। টাকা মেটাতে পুজোকর্তা স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়েছেন, এমন ঘটনাও বিরল নয়। পুজো কর্তাদের এমন বাউন্সারে শিল্পীরা অবশ্য বলছেন, এটাই শিল্পের নিয়ম। তা না হলে শিল্পীর বদলে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করতে পারতেন।

এমন বাগ্‌যুদ্ধে অবশ্য লেগে রইল কিছু তিক্ততাও। নামী শিল্পীর উদ্দেশে লেকপল্লির পুজোকর্তার ‘‘তিনি পুজো করে কত টাকা পেয়েছেন আর পাঞ্জাবি ডিজাইন করে কত’’, এমন ব্যক্তিগত আক্রমণ রুচিবোধের পরিচয় দেয় না। তেমনই অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে শ্রোতা আসনে বসে থাকা মহিলা শিল্পীর, ‘‘পুজোকর্তারা শিল্পের কী বোঝেন, কতটুকু বোঝেন’’ গোছের প্রশ্নও কাম্য নয়।

আসলে থিম, শিল্পী বা ক্লাব, কার জন্য পুজোয় ভিড় বাড়ে এ বিতর্ক নিরন্তর।

কারণ, কর্তা ভাবেন আমি দেব, শিল্পী ভাবেন আমি। থিম ভাবেন আমি দেব.....।

Debate Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy