E-Paper

চাষ কমে গিয়ে শোলার জোগানে টান, পুজোয় বরাত কমেছে প্রতিমার

কুমোরটুলিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে শোলার প্রতিমা তৈরি করছেন শম্ভুনাথ মালাকার। শম্ভুনাথকে সাহায্য করেন তাঁর ছেলে সুজিত। শম্ভুনাথের কথায়, ‘‘পর্যাপ্ত পরিমাণ শোলা না পাওয়ায় এ বছর একাধিক প্রতিমার বায়না বাতিল করতে হয়েছে।”

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৪৬

ছবি: সংগৃহীত।

উত্তরসূরিদের আর শোলার প্রতিমা তৈরির কাজে নামাতে চান না শম্ভুনাথ মালাকার, রঞ্জিত সরকারেরা। অথচ, বছর পনেরো আগেও ছবিটা ছিল ভিন্ন। কুমোরটুলিতে মাটির প্রতিমার পাশাপাশি শোলার প্রতিমারও কদর ছিল বেশ। শোলার প্রতিমা মূলত বিদেশে যায়। এ ছাড়া, শোলা দিয়ে মণ্ডপ ও প্রতিমা সাজিয়ে তোলার বিভিন্ন সামগ্রীও তৈরি হয়। কিন্তু এখন সে সব কার্যত অতীত। বছর পনেরো আগেও কলকাতা লাগোয়া ভাঙড়, রাজারহাট, নিউ টাউন-সহ দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার খাল-বিলে শোলার চাষ হত। বর্তমানে ওই সমস্ত জায়গায় শোলার চাষ আর হয় না বললেই চলে। শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ও জয়নগরে খানিকটা হয়। সেখানে হাতে গোনা কয়েক জন চাষি শোলার চাষ করেন। সেই শোলা দিয়ে শিল্পীরা শোলার প্রতিমা থেকে নানা সামগ্রী তৈরি করছেন।

কুমোরটুলিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে শোলার প্রতিমা তৈরি করছেন শম্ভুনাথ মালাকার। শম্ভুনাথকে সাহায্য করেন তাঁর ছেলে সুজিত। শম্ভুনাথের কথায়, ‘‘পর্যাপ্ত পরিমাণ শোলা না পাওয়ায় এ বছর একাধিক প্রতিমার বায়না বাতিল করতে হয়েছে। গত বছর ৩০টি শোলার প্রতিমা বানিয়েছিলাম। এ বছর বানিয়েছি মাত্র ২০টি। শোলার ঠাকুরের যা ভবিষ্যৎ দেখছি, তাতে ছেলেকে বিকল্প পেশার কথা ভাবতে হবে।’’ কুমোরটুলির শোলা শিল্পীদের শোলা সরবরাহ করেন রাজারহাটের শোলা ব্যবসায়ী মান্নান আলি মোল্লা, আসগর আলি মণ্ডলেরা। শোলার চাষ যে সঙ্কটে, তা স্বীকার করে মান্নান বলেন, ‘‘রাজারহাট, নিউ টাউনের জলাশয়গুলিতে অতীতে প্রচুর পরিমাণে শোলার চাষ হত। ভাঙড় ও দুই ২৪ পরগনাতেও আগে শোলা উৎপাদন হত। কিন্তু বছর পনেরো আগে থেকে ধীরে ধীরে ওই সমস্ত জলাজমি ভরাট করে কারখানা, বহুতল তৈরি হয়েছে। ফলে, আগের মতো শোলার চাষ হচ্ছে না।’’

রাজারহাটের আর এক শোলা ব্যবসায়ী আসগর আলি মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘অতীতে বর্ধমানের জনাই রোড, হাওড়ার আমতা, মুন্সিরহাটের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও শোলার চাষ হত। কিন্তু ওই সমস্ত জায়গায় বর্তমানে শোলার উৎপাদন প্রায় বন্ধ বললেই চলে। আগে বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর পরিমাণ শোলা আমদানি করা হত। কিন্তু বর্তমানে তাতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে, সব মিলিয়ে শোলার সঙ্কট তীব্র চেহারা নিয়েছে।’’ শম্ভুনাথ জানান, চলতি বছরে শোলার আকাল থাকায় গত বছর মজুত করা শোলা দিয়েই কাজ সারতে হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ও মথুরাপুরে কিছু চাষি এখনও শোলার চাষ করে চলায় তাঁরাই এখন একমাত্র ভরসা কুমোরটুলির শোলা শিল্পীদের। ওই শোলা শিল্পীরা জানাচ্ছেন, বহু আগে উল্টোডাঙা স্টেশন লাগোয়া এলাকায় শোলার হাট বসত। সেখান থেকে ন্যায্য মূল্যে শোলা কিনতেন কুমোরটুলির শোলা শিল্পীরা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের নিজেরই শোলার সামগ্রীর দোকান রয়েছে। রঞ্জিতের কথায়, ‘‘বিদেশে শোলার তৈরি দুর্গা প্রতিমার কদর বেশি। কিন্তু বর্তমানে শোলার সঙ্কটে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো হচ্ছে ফাইবারের তৈরি দুর্গা প্রতিমা দিয়ে। তাই শোলা না পাওয়ার আক্ষেপ থেকেই যাচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2024 Thermocol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy