Advertisement
E-Paper

এ বার মেয়রের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু!

এনএস-১ পজিটিভ এবং কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। অন্য দিকে, বুধবার রাতে মারা যায় উত্তর কলকাতার বড়তলা এলাকার বাসিন্দা পরিস্মিতা ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
মৃত শিশু পরিস্মিতা ঘোষ।

মৃত শিশু পরিস্মিতা ঘোষ।

উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের দুই প্রান্তে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে কলকাতা পুরসভার ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে। মৃতদের এক জন খোদ মেয়রের ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার সকালে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোকুল মুখোপাধ্যায় (৫১)। ওই হাসপাতাল ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে এনএস-১ পজিটিভ এবং কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। অন্য দিকে, বুধবার রাতে মারা যায় উত্তর কলকাতার বড়তলা এলাকার বাসিন্দা পরিস্মিতা ঘোষ। তার ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘সিভিয়ার ডেঙ্গি’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা গোকুলবাবুর স্ত্রী প্রীতিকণা মুখোপাধ্যায় জানান, গত শুক্রবার জ্বরে আক্রান্ত হন গোকুলবাবু। বমি ও পেটের সমস্যাও ছিল। প্রথমে জেমস লং সরণির এক নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তারা জানায়, গোকুলবাবু ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার রাতে তাঁর অবস্থায় অবনতি ঘটে। এ দিন সকালে তিনি মারা যান।

গোকুল মুখোপাধ্যায় (৫১)

মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোদ কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। গোকুলবাবুর বাড়ি থেকে মেয়রের বাড়ির দূরত্ব হেঁটে তিন মিনিট। অথচ, ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে পুরসভার তৎপরতা চোখে প়ড়ে না। এলাকার একাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও কাউন্সিলর পরিদর্শনে যাননি বলে অভিযোগ। শোভনবাবুর অবশ্য পাল্টা দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতেই ডেঙ্গিতে মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
পুরসভার ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি মৃতের পরিবারের তরফে অভিযোগ, ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা নিয়েও টানাপড়েন চালিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল।

আরও পড়ুন: ‘এ পাড়ায় মেয়রকে শেষ কবে দেখেছি, মনে নেই’

প্রীতিকণাদেবী বলেন, ‘‘চিকিৎসক বারবার জানিয়েছেন, ডেঙ্গি হয়েছে। অথচ, ডেথ সার্টিফিকেটে শুধু এনএস-১ পজিটিভ লেখা হল। ডেঙ্গি কেন লেখা হয়নি, প্রশ্ন তুলতেই হাসপাতাল দুর্ব্যবহার করে।’’ হাসপাতাল অবশ্য এই অভিযোগ এড়িয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে যা পাওয়া গিয়েছে, সেটাই ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে। তথ্য গোপন কিংবা কাউন্সিলরের অনুপস্থিতির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও পুরসভা গোকুলবাবুর মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। ডেঙ্গির খবর পাওয়া যায়নি বলেই পুরকর্তারা জানান।
বেহালার পাশাপাশি ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের জগন্নাথ শূর লেনের বাসিন্দা পরিস্মিতা ঘোষের। বছর দশেকের পরিস্মিতা বুধবার রাতে ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায়। এ দিন তার মাসি প্রিয়াঙ্কা দে জানান, সোমবার জ্বরে আক্রান্ত হয় সে। প্রথমে স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্লেটলেট কমতে থাকে চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রীর। শরীর ফুলে যায়। পরিস্থিতির অবনতি হলে বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে মারা যায়।
জগন্নাথ শূর লেনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছরও এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয়। একাধিক বাড়ি বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলি মশার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে।
পুরসভা জানিয়েছিল, এ বছর বন্ধ বা়ড়িতে ঢুকে মশা মারার অভিযান চালানো হবে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই তৎপরতা চোখে পড়েনি। কয়েক সপ্তাহ আগে এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়। বাসিন্দারা জানান, শিশুদের মৃত্যুতে আতঙ্ক বাড়লেও পুরসভার হেলদোল নেই।
শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক ডেঙ্গি-মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও স্বাস্থ্য ভবন মুখ খুলতে নারাজ। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নথি যাচাই না হলে কিছু বলা যাবে না।’’

Dengue Fever Medical Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy