Advertisement
০১ মে ২০২৪

আছে স্বাস্থ্য-প্রকল্প, তবু ‘বঞ্চিত’ পথশিশুরা

দু’মাসের সৌরভ ভট্টাচার্যকে নিয়ে তাঁর মা-ও ট্রামডিপোর ওই বস্তিতে কিছু দিন ছিলেন। সেই সময়েই ঠান্ডা লেগে বুকে সংক্রমণ হয় শিশুটির। গত মঙ্গলবার রাতে দুধ খাওয়ানোর পরে সৌরভের নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন।

বেহালার বহু পথশিশুর টীকাকরণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি বলে অভিযোগ মায়েদের। নিজস্ব চিত্র

বেহালার বহু পথশিশুর টীকাকরণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি বলে অভিযোগ মায়েদের। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

পথের ধারে স্বাস্থ্য পরিষেবার দাবি নিয়ে অপেক্ষা করছে অয়ন্তিকা দাস, জিৎ হালদারেরা। বেহালার এই পথশিশুদের মায়েদের অভিযোগ, নিয়ম থাকলেও সরকারি পরিষেবা ঠিকমতো পায় না ওরা। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী যদিও এমনটা হওয়ার কথা নয়। পথশিশুদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে রয়েছে প্রকল্প। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকার এক শিশুর মৃত্যুর প্রেক্ষিতে উঠে এল অন্য ছবি।

রবিবার বিকেলে বেহালা ট্রাম ডিপো এলাকায় রাস্তার ধারে এক বছর দু’মাসের শিশুকন্যা অয়ন্তিকাকে নিয়ে বসেছিলেন মা পূজা দাস। দু’মাসের সৌরভ ভট্টাচার্যকে নিয়ে তাঁর মা-ও ট্রামডিপোর ওই বস্তিতে কিছু দিন ছিলেন। সেই সময়েই ঠান্ডা লেগে বুকে সংক্রমণ হয় শিশুটির। গত মঙ্গলবার রাতে দুধ খাওয়ানোর পরে সৌরভের নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শিশুর দেহের ময়না-তদন্ত করানো হলে জানা যায়, সে ব্রঙ্কাইটিসে ভুগছিল।

এ দিন মৃতের মা মৌসুমী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমার কোলের সন্তানের যে বুকে সংক্রমণ হয়েছিল, বুঝতে পারিনি!’’

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক জানান, পথশিশু, তাদের মা ও পরিবারের স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে ‘আউটরিচ সেশন’-এর কথা বলা হয়েছে। শহরাঞ্চলে ‘আর্বান হেল্‌থ নিউট্রিশন ডে’র পাশাপাশি বিশেষ শিবির আয়োজনের কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। সেখানে এ ধরনের শিবিরের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলের বস্তি, ফুটপাত, উড়ালপুলের নীচে, ফুটব্রিজের সিঁড়ি, রেললাইনের ধার, খালপাড়ে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে শিশুমৃত্যু, অপুষ্টির হার অনেক বেশি। যার প্রেক্ষিতে বিশেষ শিবিরের আয়োজন করে তাঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় আনতে হবে। এ ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা তাঁদের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার কথা। শিশুদের নিয়মিত টিকাকরণ, কোনও বাচ্চা অপুষ্টির শিকার কি না, গর্ভবতী মায়েদের কী করণীয় এবং প্রসবের পরে মায়েরা নিজেদের যত্ন নিচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। গ্রামে ‘আশা’ কর্মীদের মতো শহরেও এ কাজ করার কথা দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রতি বুধবার পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ধরনের শিবির হয়। যদিও অয়ন্তিকার মা পূজা বলেন, ‘‘কোথায় টিকা দেওয়া হয়, জানি না। খোলা আকাশের নীচে থাকি। বৃষ্টিতে মেয়ের জন্মের শংসাপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই কোনও ইঞ্জেকশন পড়েনি।’’ টিকাকরণ বা স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর কথা কেউ বলেননি? মৃত শিশুর মা মৌসুমী বলেন, ‘‘আমার ছেলের টিকা হয়নি। টিকাকরণের কোনও কার্ডও পাইনি।’’

১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে ফুটপাতে গত নভেম্বর মাসে জন্ম হয়েছে জিতের। জিৎ-সহ আরও দুই সন্তানের মা বৃহস্পতি হালদার বলেন, ‘‘জন্মের পরে হাসপাতালে এক বার টিকা হয়েছিল। তার পর থেকে জিৎ আর কোনও টিকা পায়নি। পোলিয়োও খায়নি! গ্রামে থাকতে আমার অন্য দুই সন্তানের টিকা কিন্তু হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণ করার কথা পুরসভার।’’ এর প্রেক্ষিতেই পথশিশুদের টিকাকরণ এবং স্বাস্থ্যপরীক্ষার হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মায়েদের এমন অভিযোগ কি শুধুমাত্র বেহালায়, নাকি শহরের অন্যত্রও এই সমস্যা রয়েছে? পরিস্থিতিটা খতিয়ে দেখা খুব জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের একাংশ। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘পুরসভার পরিকাঠামো রয়েছে। মানুষকে তার সুযোগ নিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা নিয়মিত প্রচারও করেন। আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে পথশিশু এবং তাদের বাবা-মায়েরা কেউ স্থায়ী বাসিন্দা নন। কোনও জেলা থেকে এসে থাকছেন। সে কারণে কিছু সমস্যা হলেও হয়ে থাকতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Street Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE