Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
PG Hospital

বাসের অবিরাম হর্নে অতিষ্ঠ পিজি-র চিকিৎসকেরা

রেকর্ডিংয়ের পদ্ধতিতে কোনও ভুল হয়েছে নিশ্চয়ই। চিকিৎসক তেমনটাই ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই রেকর্ডিং ভাল ভাবে শুনতে গিয়ে তিনি তাজ্জব।

বে-হুঁশ: এসএসকেএমের পাশে হরিশ মুখার্জি রোড এবং এ জে সি বসু রোডের সংযোগস্থলে এ ভাবেই যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে পরপর বাস। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বে-হুঁশ: এসএসকেএমের পাশে হরিশ মুখার্জি রোড এবং এ জে সি বসু রোডের সংযোগস্থলে এ ভাবেই যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে পরপর বাস। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সম্রাট মুখোপাধ্যায় ও আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১৯
Share: Save:

ফোনটা এসেছিল মুম্বই থেকে। বিস্মিত গলায় কেউ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘ডক্টর সাব, ব্যাকগ্রাউন্ড মে ইয়ে আওয়াজ় ক্যায়সা?’’ ফোনের এ প্রান্তে এসএসকেএমের এক গবেষক-চিকিৎসক। কোভিড আবহে নিজের লেকচার রেকর্ড করে তিনি পাঠিয়েছিলেন মুম্বইয়ের এক সংস্থার কাছে। ওই সংস্থার মাধ্যমেই দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে সেই লেকচার পৌঁছে যাওয়ার কথা।

রেকর্ডিংয়ের পদ্ধতিতে কোনও ভুল হয়েছে নিশ্চয়ই। চিকিৎসক তেমনটাই ভেবেছিলেন। কিন্তু সেই রেকর্ডিং ভাল ভাবে শুনতে গিয়ে তিনি তাজ্জব। মেডিক্যাল পড়ুয়াদের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা তিনি দিচ্ছিলেন, সেখানে তাঁর গলাকেও ছাপিয়ে গিয়ে ভেসে আসছে, ‘সাঁতরাগাছি, সাঁতরাগাছি, সাঁতরাগাছি…’। সঙ্গে কান ফাটানো হর্ন।

এক-আধ দিন নয়, এসএসকেএমের রোনাল্ড রস ভবনের চিকিৎসক, পড়ুয়া ও রোগীদের এটাই রোজকার অভিজ্ঞতা। জানলা-দরজা বন্ধ করেও দু’দণ্ডের নৈঃশব্দ্য জোগাড় করে উঠতে পারেন না তাঁরা। অভিযোগ, রবীন্দ্র সদন মোড় থেকে যে সমস্ত বেসরকারি বাস হাওড়ার দিকে যায়, সেগুলির অধিকাংশই হাসপাতালের প্রবেশপথ ও রোনাল্ড রস ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রী তোলার জন্য। এবং যত রকম ভাবে সম্ভব, এলাকার শান্তিভঙ্গের চেষ্টা করে চলেন বাসের কর্মীরা। গলা সপ্তমে চড়িয়ে যাত্রীদের ডাকাডাকি তো আছেই, সেই সঙ্গেই চলে ক্রমাগত হর্ন বাজানো। হাসপাতালের সামনে হর্ন বাজানো বা এই ধরনের অকারণ আওয়াজ করা যে আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তা অজানা নয় কারও। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করে না কেউ। পুলিশও কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ।

এসএসকেএমের রোনাল্ড রস ভবনেই বসেন এন্ডোক্রিনোলজির চিকিৎসক-গবেষক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। মুম্বইয়ের ওই ফোনটি তাঁর কাছেই এসেছিল। তিনি জানালেন, শব্দের দাপট এক-এক সময়ে এমনই মাত্রায় পৌঁছয় যে, দরজা-জানলা বন্ধ রেখেও ক্লাস নিতে পারেন না। সতীনাথবাবুর কথায়, ‘‘যে কোনও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাই ‘সাইলেন্স জ়োন’। সেখানে কোনও গাড়িরই হর্ন দেওয়ার কথা নয়। কেউ দিলেও পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। এসএসকেএমের ভিতরে যে পুলিশকর্মীরা আছেন, তাঁরা হাসপাতালের গেটের বাইরে গিয়ে কিছু করবেন না। আমি পুলিশের কাছে অনলাইনে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু শব্দের তাণ্ডব বন্ধ হয়নি।’’ সতীনাথবাবু জানান, রোনাল্ড রস ভবনে রোগীদেরও রাখা হয়। ওই ভয়াবহ শব্দে তাঁদেরও খুব অসুবিধা হচ্ছে।

এসএসকেএমের ডাক্তারি পড়ুয়ারাও জানালেন, হর্নের শব্দে শুধু আশপাশের লোকজন বা যাত্রীরাই নন, বাসকর্মীরা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু বারণ করলেও তাঁরা শোনেন না।

পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’র এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার শুধু বলেন, “কেবল এসএসকেএম নয়, শহরের প্রতিটি হাসপাতালের সামনেই কেউ হর্ন বাজাচ্ছেন কি না, সে দিকে নজর রাখা হয়। নিয়মিত কেসও দেওয়া হয়।”

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, “শুধুমাত্র ‘নো হর্ন জ়োন’ বোর্ড বসিয়ে দায় সারলে হবে না। দরকার কড়া নজরদারি। প্রয়োজনে ড্রোনের সাহায্যে মাঝে মাঝে নজরদারি চালাতে হবে। যে গাড়ি হর্ন দিচ্ছে, সেটিকে চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। তাতেই হর্ন বাজানো অনেক কমবে।” পরিবেশকর্মী নব দত্তের কথায়, “যে কোনও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাই ‘সাইলেন্স জ়োন’। অর্থাৎ, শব্দের মাত্রা ৪০ ডেসিবেলের নীচে থাকতে হবে। সাইলেন্স জ়োনে হর্ন বাজানো দণ্ডনীয় অপরাধ।” রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সমস্যার কথা স্বীকার করে ‘অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র জেনারেল সেক্রেটারি রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এসএসকেএমের সামনে যাত্রী তোলার একটা প্রতিযোগিতা যে চলে, সে কথা ঠিক। তবে বাসের হর্নে বা কন্ডাক্টরের চিৎকারে যদি চিকিৎসক ও রোগীদের অসুবিধা হয়, তা হলে সেটা খুবই লজ্জার বিষয়। ওঁদের যাতে অসুবিধা না হয় এবং ওই জায়গায় হাওড়ামুখী কোনও বাস যাতে হর্ন না দেয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PG Hospital Horn Honking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE