Advertisement
E-Paper

প্রেসিডেন্সির হস্টেলে মেয়ে এনে ফুর্তি-নেশা, তদন্তের মুখে ৫ ছাত্র

ছেলেদের হস্টেল। অথচ সেখানে ঢুকে রাত কাটালেন দুই বহিরাগত তরুণী। হস্টেলের মধ্যেই চলল অবাধে মদ্যপান। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই হইচই শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৭:০৯

ছেলেদের হস্টেল। অথচ সেখানে ঢুকে রাত কাটালেন দুই বহিরাগত তরুণী। হস্টেলের মধ্যেই চলল অবাধে মদ্যপান। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই হইচই শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ‘ডিসিপ্লিনারি কমিটি’ তৈরি করে ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রেসিডেন্সির পাঁচ পড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রী এবং স্কটিশচার্চ কলেজের এক ছাত্রীকে নিয়ে রাতে হস্টেলে ঢুকেছিলেন। এর পর হস্টেলের ক্যাম্পাসের ভিতরেই নেশা এবং নানাবিধ অশালীন কাজকর্ম করেন। হস্টেলের আবাসিকদের একাংশ এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁদের সঙ্গে বচসা বাধে ওঁদের। শেষে নিউটাউন থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পাঁচ পড়ুয়ার মধ্যে একজন ওই হস্টেলেরই আবাসিক।

ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সির বেশ কিছু ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে শিক্ষাজগৎকে। সম্প্রতি ঘেরাওয়ের নামে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির কিছু পড়ুয়া। উপাচার্যের ঘরের ভেতরেই চলেছিল ক্যানেস্তারা বাজানো, ধূমপান এমনকি অশালীন আচরণও। সেই ঘটনায় আরও কালি ছিটিয়েছিল মহিলাদের অন্তর্বাস পরিহিত এক বহিরাগত তরুণের উপস্থিতি। এবার বহিরাগতরা হস্টেলে ঢুকে প্রকাশ্যে মদ্যপান করায় আরও একবার প্রেসিডেন্সির মুখ পুড়ল বলেই মনে করছেন শিক্ষা জগতের একাংশ।

প্রেসিডেন্সির দু’টি হস্টেল। মেয়েদের হস্টেলটি বিধাননগরে। ছেলেরা থাকতেন হিন্দু হস্টেলে। মাস ছ’য়েক আগে শতাব্দীপ্রাচীন বাড়িটি সংস্কারের প্রয়োজনে আবাসিকদের রাজারহাটের এক নম্বর অ্যাকশান এরিয়ায় হিডকোর একটি আবাসনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সেখানেই।

কী ঘটেছিল সে দিন?

হস্টেলের আবাসিকরা জানাচ্ছেন, ৪ ডিসেম্বর রাত দশটা নাগাদ হস্টেলের এক আবাসিক প্রেসিডেন্সির চার পড়ুয়া এবং ওই দুই তরুণীকে নিয়ে হস্টেলে ঢোকেন। বাকি আবাসিকেরা তখনই তাঁদের চলে যেতে বলেন। সে কথায় কান না দিয়ে তাঁরা হস্টেলের করিডরে এবং মাঠে বসে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় মদ্যপান করতে শুরু করেন। সঙ্গে চলতে থাকে হই হল্লা এবং অশালীন আচরণ। কয়েক জন আবাসিক এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে ওই সাত জন মারমুখী হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে হস্টেলেরই কিছু আবাসিক নিউটাউন থানায় ফোন করেন। পুলিশ এসে অবস্থা সামাল দেয়। ইতিমধ্যে অত্যন্ত বেশি মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দুই ছাত্রী। হস্টেলের আবাসিকরাই তাঁদের শুশ্রূষা করে সকাল বেলা বাড়ি পৌঁছে দেন।

এই ঘটনা নিয়ে কোনও পক্ষই পুলিশে অভিযোগ দায়ের না করলেও আবাসিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘ডিসিপ্লিনারি কমিটি’ বসান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হস্টেলের আবাসিকদের একাংশের অভিযোগ, রাজারহাটের নতুন হস্টেলে আসার পর থেকেই আবাসিকদের মধ্যে বেড়েছে নেশার প্রবণতা। এক আবাসিকের কথায়, ‘‘হিন্দু হস্টেলেও ছেলেরা কমবেশি নেশা করত। কিন্তু এখানে কিছু কিছু ঘরে তল্লাশি চালালে এত গাঁজা আর চরস পাওয়া যাবে যে আবগারি দফতরের কর্তারা চমকে যেতে পারেন।’’ কেন?

আবাসিকদের একাংশের মতে, হস্টেলের পরিবেশই কিছুটা দায়ী এর জন্য। হিন্দু হস্টেলের পরিবেশ ছিল অনেক জমজমাট। বড় বড় ঘর, টানা বারান্দা এবং সেখানে দেদার আড্ডা, সব মিলিয়ে একটা যৌথ জীবনের পরিবেশ। হস্টেলের উল্টোদিকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ফলে কলেজ এবং হস্টেলের মধ্যে একটি নিয়মিত মানসিক এবং সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ছিল। অন্যদিকে রাজারহাটের হস্টেলে সব এক কামরার ঘর। হস্টেল চত্বরটিও বড়ই নির্জন। পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখানে। আর তা থেকেই হয়তো নেশার প্রবণতা বৃদ্ধি।

ব্যাখ্যা যাই হোক, পড়ুয়াদের এমন আচরণকে সমর্থন করছেন না ছাত্র থেকে শিক্ষক কেউই। হস্টেল সুপার প্রবেশ তামাং বলেন, ‘‘ওরা যা করেছে তা একেবারেই নিয়মবিরুদ্ধ। এ ধরনের কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। ওদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে নভোজিত দে বলেন, ‘‘এই ধরনের কাজ কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ওদের শাস্তি হওয়া উচিত। ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাব।’’

তবে এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে। নিষেধ থাকা সত্বেও এত জন অনাবাসিক কী ভাবে ভেতরে ঢুকলেন? কী ভাবেই বা তাঁরা নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে পারলেন? কর্তৃপক্ষের তরফে এর কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

drug sex scandal presidency college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy