অগ্নিমূল্য: সেঞ্চুরি কি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা? শহরের একটি পাম্পের ডিসপ্লে বোর্ডে পেট্রলের দাম। সোমবার, বাইপাসের কাছে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
‘‘বিশ্বাস করুন, এ বার কিন্তু গায়ে রীতিমতো ছেঁকা লাগছে! মাস তিনেক আগেও সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকার পেট্রল ভরলে মাস চলে যেত। এখন সেটা ন’হাজারে ঠেকেছে! এ বার তো মনে হচ্ছে, তেলের পিছনেই মাসে হাজার দশেক টাকা গলে যাবে!’’ গাড়িতে তেল ভরার জন্য কসবার একটি পেট্রল পাম্পে এসে এ ভাবেই ক্ষোভ উগরে দিলেন এক ব্যক্তি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর পাশাপাশি জ্বালানির বল্গাহীন মূল্যবৃদ্ধিতে এখন এমনই আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। সোমবার উত্তর থেকে দক্ষিণ— শহরের বিভিন্ন প্রান্তের পেট্রল পাম্পে ঘুরে সেই আতঙ্কেরই আঁচ পাওয়া গেল। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে অনেকেই আর গাড়ি বার করছেন না। তাই রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা খানিকটা কমে গিয়েছে। বরং বেড়েছে মোটরবাইক। অনেকেরই আশঙ্কা, আগামী দিনেও জ্বালানির দাম এ ভাবে বাড়তে থাকলে গণপরিবহণ-সহ গোটা পরিবহণ ব্যবস্থাই সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়াবে।
রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় পেট্রলের দাম ইতিমধ্যেই একশো পেরিয়েছে। কলকাতাতেও সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই। এ দিন শহরে পেট্রলের দাম ছিল একশো টাকার চেয়ে মাত্র কয়েক পয়সা কম। আর ডিজ়েল ৯২ টাকার উপরে। জ্বালানির এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে লোকসানের আশঙ্কা করছেন গাড়ির ব্যবসায়ীরাও। সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা পেট্রল-ডিজ়েলের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। যা আতঙ্ক তৈরি করছে মধ্য ও নিম্নবিত্তদের মনে।
করোনার কোপে পড়ে এমনিতেই রোজগার কমেছে সাধারণ মানুষের। এই অবস্থায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ভয় ধরিয়েছে তাঁদের মনে। কারণ, জ্বালানির দাম বাড়লে পরিবহণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আনাজ থেকে আলমারি, সব কিছুরই দাম বেড়ে যেতে পারে। অনেকেই তাই শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর দাবি তুলেছেন। এ দিন শ্যামবাজারের একটি পাম্পে তেল ভরাতে এসেছিলেন বিকাশ শর্মা। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার কোপে এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা। দিন দিন রোজগার কমছে, আর এ দিকে তেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এ ভাবে চললে তো চার চাকা বন্ধ করে দু’চাকায় ফিরে যেতে হবে মনে হচ্ছে।’’ রুবির কাছে একটি পাম্পে দাঁড়িয়ে আশঙ্কার কথাই শোনাচ্ছিলেন রাজারহাটের বাসিন্দা আনন্দদেব পাল। তাঁর কথায়, ‘‘পেট্রলের দামটা এ বার গায়ে লাগছে। খুব হিসেব করে চলতে হচ্ছে। অকারণে গাড়ি নিয়ে বেরোনো বন্ধই করে দিয়েছি। বাড়ির কাছাকাছি যেতে হলে বাইকেই চড়ি।’’ ওই পাম্পের কর্মী ইন্দ্রজিৎ বর্মণ বললেন, ‘‘গাড়ির সংখ্যা তো কমেছেই। ইদানীং দেখছি, পরের দিন দাম আরও বাড়তে পারে, এই ভয়ে অনেকেই সন্ধ্যায় এসে তেল ভরিয়ে নিচ্ছেন।’’
মানিকতলার কাছে একটি পাম্পে দাঁড়িয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন জনৈক পলাশ বৈদ্য। তাঁর কথায়, ‘‘জ্বালানির দাম কমবে কী করে? রাজ্য এবং কেন্দ্র, দুই সরকারই তো সমান ভাবে শুল্ক নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবছেন নাকি!’’ সমস্যায় পড়েছেন শহরের মালবাহী গাড়ির মালিকেরাও। বেশি ভাড়ার অধিকাংশ গাড়িই কেউ ভাড়া নিতে চাইছেন না।
দাম বাড়ায় জ্বালানির বিক্রি কি আদৌ কমেছে? হাজরার কাছে একটি পেট্রল পাম্পের ম্যানেজার বললেন, ‘‘এমনিতেই এখন পথে গাড়ির সংখ্যা তুলনায় কম। কয়েক দিন ধরে জ্বালানির বিক্রি অবশ্য একই আছে। তবে দাম এ ভাবে বাড়তে থাকলে গাড়ির সংখ্যা কমবে। তখন পেট্রল-ডিজ়েলের বিক্রিও কমবে।’’ কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘কয়েক দিনে শহরে বাইকের সংখ্যা নিঃসন্দেহে বেড়েছে। কিন্তু পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম বাড়ায় অন্যান্য গাড়ির সংখ্যা কমে থাকলেও কতটা কমেছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy