Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Poor Road Condition

প্রশাসনের ‘সাফল্য’ কংক্রিটের রাস্তাই ভেঙে চুরমার বহু গ্রামে

বারুইপুর ও সোনারপুরের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় এমন একাধিক কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। বিশেষ করে, বহু গ্রামে পুকুর সংলগ্ন সিমেন্টের রাস্তায় ধস নেমেছে।

An image of the road

মল্লিকপুর পঞ্চায়েত এলাকায় পেটুয়া রাখাল ঠাকুরের মাঠে যাওয়ার ঢালাই রাস্তা বেহাল।  ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

সমীরণ দাস 
বারুইপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৬:৩২
Share: Save:

গত কয়েক বছরে বহু প্রত্যন্ত গ্রামের মাটি বা ইটের রাস্তা বদলে গিয়েছে কংক্রিটে। আর গ্রামে গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরির এই কাজ সরকারের অন্যতম ‘সাফল্য’ বলে দাবি করেই ভোটের প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। কিন্তু বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক জায়গাতেই ভেঙে গিয়েছে সিমেন্টের তৈরি রাস্তা। যার জেরে বেড়েছে দুর্ভোগ।

বারুইপুর ও সোনারপুরের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় এমন একাধিক কংক্রিটের রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। বিশেষ করে, বহু গ্রামে পুকুর সংলগ্ন সিমেন্টের রাস্তায় ধস নেমেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, অনেক জায়গাতেই পুকুরের পাড় বরাবর সিমেন্টের রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে পুকুরপাড়ের মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় ভারী সিমেন্টের চাঙড় মাটিতে বসে যাচ্ছে।

কংক্রিটের মজবুত রাস্তাও ভেঙে যাচ্ছে কেন? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ঠিকঠাক পরিকল্পনার অভাবেই এ ভাবে রাস্তা ভাঙছে। নিয়ম অনুযায়ী, রাস্তা তৈরি করার আগে ইঞ্জিনিয়ার এনে গোটা বিষয়টি পরীক্ষা করানোর কথা। কিন্তু অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই তা ঠিক মতো হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাটিও পরীক্ষা করানো হয় না বলে অভিযোগ। পুকুরপাড়ে রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পাড় ভাল করে বাঁধানো জরুরি। কিন্তু পাড় না বাঁধিয়েই কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে অনেক জায়গায়। কোথাও পাড় বাঁধানো হলেও তা তেমন মজবুত হয়নি। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই ধস নেমেছে এলাকায়।

পূর্ত দফতরের এক প্রাক্তন আধিকারিক বললেন, “যে কোনও রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রেই দু’পাশে অতিরিক্ত জায়গা, অর্থাৎ ‘শোল্ডার’ থাকা খুব জরুরি। কাঁধ যেমন মানবদেহের ভারসাম্য বজায় রাখে, এই ‘শোল্ডার’ও তেমনই রাস্তার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু গ্রামের দিকে অনেক ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। তিন-চার ফুট জায়গাতেও সিমেন্ট ঢেলে রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে রাস্তা ভাঙছে বেশি।” অনেকেই জানাচ্ছেন, আগে ইটের রাস্তার কোনও অংশ খারাপ হলে স্থানীয় ভাবে মেরামত করা যেত। কিন্তু কংক্রিটের রাস্তা মেরামত করা খরচসাপেক্ষ। ফলে পঞ্চায়েতের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভাঙা রাস্তা মেরামত করার বিষয়ে পঞ্চায়েত পদক্ষেপ করছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে, সমস্যা বাড়ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামে গ্রামে কংক্রিটের রাস্তা তৈরির এক বছরের মধ্যেই তা খারাপ হয়ে গেলে মেরামতির খরচও মূল বরাদ্দে ধরা থাকে। সেখান থেকেই রাস্তা সারানো হয়। কিন্তু তার পরে কোনও সমস্যা হলে নতুন করে প্রকল্পের পরিকল্পনা করে রাস্তার কাজ করতে হয়। ফলে সময় লেগে যায়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য এবং এ বারের প্রার্থী জয়ন্ত ভদ্র অবশ্য বললেন, “আমার অধীনস্থ ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকায় গত কয়েক বছরে কয়েকশো রাস্তা তৈরি হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার এনে পরীক্ষা করিয়েই রাস্তার কাজ হয়। পুকুর থাকলে পাড় বাঁধিয়ে নেওয়া হয়। সমস্যা কিছু হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poor road condition Sonarpur Baruipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE