Advertisement
E-Paper

অশ্লীলতার ‘দায়ে’ জিজ্ঞাসাবাদ, বৃদ্ধের মৃত্যু হল থানাতেই

থানার লক-আপে পুলিশের ‘মারে’ বন্দি মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তেমন অভিযোগ বহুই ওঠে। এ বার অভিযোগ উঠল পুলিশের ‘কড়া’ জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এক বৃদ্ধ ব্যবসায়ী মৃত্যু নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৬
সিঁথি থানার গেটে তালা। রবিবার।

সিঁথি থানার গেটে তালা। রবিবার।

থানার লক-আপে পুলিশের ‘মারে’ বন্দি মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তেমন অভিযোগ বহুই ওঠে। এ বার অভিযোগ উঠল পুলিশের ‘কড়া’ জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এক বৃদ্ধ ব্যবসায়ী মৃত্যু নিয়ে। অভিযোগ, বৃদ্ধের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই এত কড়া ভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ যে, অসুস্থই হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি।

পুলিশ জানায়, স্নেহময় দে নামে ৬২ বছরের ওই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। তার ভিত্তিতেই রবিবার থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। যদিও কার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়, সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি পুলিশ। কোন মহিলা সেই অভিযোগ করলেন জানতে চাইলে রাতে ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের জবাব, ‘‘আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।’’ রবিবার কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত সিঁথি থানায় এই ঘটনা ঘটার পরে পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মৃতের পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের নামে পুলিশের নানা কুরুচিকর মন্তব্য এবং মানসিক উৎপীড়ন সইতে পারেননি ওই ব্যবসায়ী। অভিযোগ, পুলিশের এক মহিলা অফিসারই স্নেহময়বাবুর উপরে ওই মানসিক অত্যাচার চালান।

স্থানীয় সূত্রে অবশ্য খবর, এলাকায় ওই ব্যক্তি নিরীহ বলেই পরিচিত। মৃতের ভাই সুধাংশু দে-র অভিযোগ, ওই মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর জেরার নামে দাদাকে কুরুচিকর কথা বলছিলেন। রীতিমতো ধমকাচ্ছিলেন। ‘‘আমার দাদা বৃদ্ধ, সজ্জন ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে দাগি অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হল! এও এক ধরনের খুন,’’ বলছেন সুধাংশুবাবু। নিরীহ ব্যক্তিকে মৃত্যুর জন্য ওই মহিলা অফিসার এবং থানার ওসিকে শাস্তি দেওয়ার দাবিও তুলেছেন মৃতের পরিজনেরা।

স্নেহময় দে। — নিজস্ব চিত্র

পুলিশ জানায়, শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়ে এ দিন দুপুরে দমদমের কালীচরণ শেঠ লেনের বাসিন্দা স্নেহময়বাবুকে নিয়ে গিয়েছিল সিঁথি থানার পুলিশ। থানায় বসিয়ে ওই মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর তাঁকে কড়া ভাষায় জেরা করতে শুরু করেন। জেরা চলার সময়েই আচমকা ঢলে পড়েন স্নেহময়বাবু। পরে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ওই মহিলা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের অবশ্য জবাব, ‘‘এমন কিছু আমার জানা নেই।’’ তাঁর দাবি, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ছিল। তাই জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে আনা হয়েছিল। আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত হয়। ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকের রিপোর্ট অবশ্য পুলিশ জানাতে চায়নি।

স্নেহময়বাবুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের সারবত্তা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলার অভিযোগ অনুযায়ী, স্নেহময়বাবুর বাড়ির চৌহদ্দিতেই শ্লীলতাহানি ঘটে। যদিও ওই মহিলা কে এবং তিনি স্নেহময়বাবুর বাড়িতে কেন গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট জানাতে পারেনি পুলিশ। ডিসি-র মন্তব্য, ‘‘সব খতিয়ে দেখতে হবে।’’ এ দিন বাড়িতে এমন কিছু ঘটেনি বলে দাবি মৃতের পরিজনদেরও। তা হলে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেল কেন?

আরও পড়ুন:

সাম্প্রদায়িক বৈষম্য হয়নি, মেরুকরণ নিয়ে মোদীকে পাল্টা তোপ অখিলেশের

তার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে স্নেহময়বাবুর ছোট ভাই প্রতাপ দে-র কথায়। তিনি জানান, স্নেহময়বাবু নিঃসন্তান। দমদম ক্যান্টনমেন্টে তাঁর জামাকাপড়ের দোকান ছিল। শারীরিক কারণে সেই দোকান বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তাঁদের পৈতৃক বাড়িতে তিনি স্ত্রী শিপ্রাদেবীকে নিয়ে থাকতেন। ওই বাড়িতেই স্নেহময়বাবুর আর এক ভাই চঞ্চল দে-র একটি বিউটি পার্লার রয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে গোলমালও রয়েছে। আগেও নানা ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে। এ দিনের অভিযোগের পিছনে সেই সব সম্পত্তি সংক্রান্ত গোলমাল রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে চঞ্চলবাবুর বাড়িতে গেলে কারও সাড়া মেলেনি। বিউটি পার্লারে দেওয়া চঞ্চলবাবুর মোবাইলে ফোন করা হলে তা বন্ধ মিলেছে।

এ ব্যাপারে ডিসি (নর্থ)-র বক্তব্য, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখা হবে।’’ এ দিন ঘটনার পরে কিছুটা সাবধান হয়ে যায় পুলিশও। বিকেলে কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছিল থানা। গেট বন্ধ করে বসানো হয়েছিল পাহারা। ঢুকতে গেলে পরিচয় জানিয়ে ওসি-র অনুমতি আদায় করতে হচ্ছিল। এত পাহারা কেন? কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী শুধু বললেন, ‘‘যা বলেছে করছি। আমরা কী করব বলুন!’’

Elderly Died Police Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy