আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে পুণ্যার্থীরা ছটপুজো করেন রবীন্দ্র সরোবরে। নিজস্ব চিত্র
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই দেওয়া হচ্ছে! জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল গত মাসে। সেই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য ছিল, রবীন্দ্র সরোবরে দূষণ রোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তো রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই। সেখানে সরকারকেই সরোবরের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত? ছটপুজোয় প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরে ফের সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হওয়ার প্রসঙ্গটি সোমবার পরিবেশ আদালতে ওঠায়। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘যে ভাবে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ছটপুজো হয়েছে রবীন্দ্র সরোবরে তার সমস্ত ছবি আদালতে দিয়েছি। আদালত দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বলেছে, এখানে কি কোনও আইন নেই! আমায় নির্দেশ দিয়েছে বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য।’’
সরোবর দেখভালের কমিটি গঠনের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, অতীতে সরোবর নিয়ে একটি মামলার প্রেক্ষিতে ‘মনিটরিং কমিটি’ তৈরি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট থেকে সরোবর মামলা পরিবেশ আদালতে আসার পরে আরও দু’টি কমিটি তৈরি করেছিল পরিবেশ আদালত। কিন্তু সরোবরের বিষয়ে একাধিক কমিটি থাকা বিভ্রান্তিকর বলে পরিবেশ আদালতে আবেদন করেছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই গত মাসে পরিবেশ আদালত সরোবর দেখভালের জন্য শুধুমাত্র একটি কমিটিই থাকবে বলে নির্দেশ দেয়। সেই কমিটির সদস্যরা হলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, পরিবেশ দফতরের প্রতিনিধি, কেএমডিএ-র সিইও, কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। এমনকি, সরোবরের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট কমিটির বক্তব্যও আর গ্রহণযোগ্য হবে না বলে জানায় আদালত।
পরিবেশ আদালতের ওই রায়ের পরেই বিতর্ক তৈরি হয়। পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, ওই কমিটি ছটপুজোয় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকায় বিতর্ক আলাদা মাত্রা পেয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। সরোবরের এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বলেন, ‘‘সরোবরের দূষণ নিয়ে তো রাজ্য সরকারের গাফিলতির দিকেই অভিযোগ! তা হলে তারা কী দেখভাল করবে?’’ আর এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘মুখ্যসচিবের অধীনে কমিটি তৈরি হয়েছে। আবার মুখ্যসচিবকেই পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন করার জন্য। কিন্তু সে সব তো কিছুই হল না!’’
সরোবরের দেখভালের জন্য অতীতে কলকাতা হাইকোর্ট যে ‘মনিটরিং কমিটি’ তৈরি করে দিয়েছিল, তার সদস্য পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হয়েছে। কিন্তু কমিটির কোনও সদস্যকে কি সেখানে দেখা গিয়েছে?
কারণ, সরকারের সমালোচনা সরকারি কমিটি করবে কী ভাবে? অথচ আমরা সেখানে ছিলাম। পুরোটা দেখেছি।’’ এ নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানালেন সুমিতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy