নরেন্দ্রপুরের বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দিরে চলছে পুজো। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধান শিক্ষক নেই। স্কুলের তহবিল ব্যবহারের অনুমতিও নেই। পরিচালন সমিতি ভেঙে স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে প্রশাসন। সম্প্রতি ওই স্কুলে বহিরাগতদের তাণ্ডব এবং তাদের হাতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা এখনও পড়ুয়াদের মনে টাটকা। এই আবহে নরেন্দ্রপুরের বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দিরে এ বছর সরস্বতী পুজো আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করায় শেষ পর্যন্ত বাগ্দেবীর আরাধনা হয়েছে ওই স্কুলে। পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা পড়ুয়াদের হাসিমুখ দেখে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশ্বাস, এ বার স্কুলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলায় কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর ‘মদতপুষ্ট’ কিছু বহিরাগত তাণ্ডব চালায় স্কুলে। শিক্ষকশিক্ষিকাদের মারধর করা হয়। সেই ঘটনার দিন থেকেই স্কুলে যাননি প্রধান শিক্ষক। গ্রেফতার করা হয়েছে আট জনকে। তবে প্রধান শিক্ষককে ধরা যায়নি। স্কুল সূত্রের খবর, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে স্কুলে তাঁর কক্ষ। আদালত তাঁর আগাম জামিনের আবেদনও নাকচ করেছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার পরে কয়েক দিন ধরে স্কুল কার্যত পড়ুয়া-শূন্য ছিল। পরে উপস্থিতির হার কিছুটা বাড়লেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। তার মধ্যেই স্কুলে শুরু হয় মাধ্যমিক পরীক্ষা। স্কুলের এক শিক্ষক পল্লব সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এ বার স্কুলে সরস্বতী পুজো হবে না বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা চাইনি, স্কুলের ঐতিহ্যে ছেদ পড়ুক। তাই মাত্র দু’দিনের চেষ্টায় পুজো হয়েছে। এ বারের পুজোয় পড়ুয়াদের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।’’
পুজোর খরচ জুগিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। প্রতিমা গড়েছে স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র দেবজিৎ গায়েন। পল্লবের কথায়, ‘‘স্কুলে পুজো হবে না, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না পড়ুয়ারা।’’ স্কুলের সদ্য ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কমলেশ দাস বলেন, ‘‘স্কুলের দায়িত্বে রয়েছে প্রশাসন। আমরা স্কুলের নিজস্ব তহবিল এখন ব্যবহার করতে পারব না। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে সোমবার। তার পরেই ঠিক হয়, আমরাই টাকা দিয়ে পুজো করব। খবর দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। শিক্ষক-শিক্ষিকা আর পড়ুয়াদের নিয়ে দ্রুত পুজো কমিটি গড়া হয়। সবাই সাহায্য করায় পুজো করতে পেরেছি। আজ আমরা তৃপ্ত। এ দিন স্কুলের প্রাক্তন কিছু পড়ুয়াও এসেছিলেন।’’
সে দিনের ঘটনা পড়ুয়াদের মনে যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল, পুজোর আনন্দে তা অনেকটা ফিকে হয়েছে বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এ দিন সকালে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে পৌঁছনোর আগেই পৌঁছে যায় অনেক পড়ুয়া। আঁকা হয় আলপনা। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গেই এর পরে পুজোর জোগাড় করে পড়ুয়ারা। অঞ্জলি, প্রসাদ বিলির পরে সকলে মিলে খিচুড়ি খাওয়া হয়।
অনিশ্চয়তা কাটিয়ে স্কুলে পুজো হওয়ায় খুশি নবম শ্রেণির আলোকবর্ষ মণ্ডল ও দশম শ্রেণির বনি মণ্ডলের মতো অনেকেই। তাদের কথায়, ‘‘স্কুলে পুজো হয় ঠিকই, তবে এ বারের মতো আনন্দ আগে কখনও হয়নি। এ বার পুজো হবে, ভাবিইনি। পুজোর সঙ্কল্প করতে বসানো হয়েছিল আমাদের। ভীষণ ভাল লেগেছে।’’ এক শিক্ষক বলেন, ‘‘পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এখনও খোলা হয়নি। তাদের ফোন করে পুজো হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy