আন্দোলনকারীর পাশে পরীক্ষার্থী ও তাঁর মা।
সকাল সাড়ে ১১টায় ইতিহাস পরীক্ষা। আর আড়াইটের সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। তেমনটাই জানতেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের সাকলেন মুস্তাক। প্রিন্সটন অ্যাকাডেমি থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭৪.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৮৫ এবং ইতিহাসে ৭৫ পেয়ে আশায় ছিলেন যাদবপুরে কোনও একটা বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন। তাই, বৃহস্পতিবার প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তিনি।
কিন্তু বুধবার প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে, তা জানতেন না সাকলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত বদলের কথা ওয়াবসাইটে জানাননি। রেজিস্ট্রার শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমকেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এ দিন সাকলেন বলেন, “আমার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা পড়ুয়ারা এত কম সময়ের মধ্যে কী ভাবে জানতে পারবেন ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের খবর? এর মধ্যেও নাকি এক বার পরীক্ষার দিন বদল হয়েছিল, তা-ও জানতে পারিনি। আগের দিন ক্ষণই আমার মনে ছিল। এখানে এসে জানতে পারি প্রবেশিকাই হচ্ছে না। নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হবে।”
গ্রাম থেকে এসে আপাতত সাকলেনের ঠাঁই হয়েছে অরবিন্দ ভবনের এক কোণায়। খবরের কাগজ পেতে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। তাঁর কথায়, “আমার আশা ছিল, পরীক্ষা নেওয়া হলে নিশ্চয়ই যে কোনও একটা বিষয়ে সুযোগ পেয়ে যাব। কিন্তু নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হলে, আদৌ মেধা তালিকায় নাম উঠবে কি না বুঝতে পারছি না।”
শুধু সাকলেন নয়, এমন আশঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন অনেকেই। তাঁরা বিভ্রান্ত। শুধু কি জেলা! রাজস্থান, ওড়িশা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন ছাত্রছাত্রীরা। পড়ুয়ারা এসেছিলেন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম থেকে। আন্দোলনকারীদের তরফে অরুণিমা সেনগুপ্ত বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোলবদল দেখে চলে গিয়েছেন সকলে। কী বার্তা যাচ্ছে সবার কাছে!”
সাকলেন মুস্তাক
যদিও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তি হওয়া উচিত। সে কথাই তিনি বার বার জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর কথা মতোই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিনের প্রবেশিকার রীতি ভেঙে নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি নিচ্ছেন। তাতে মেধা গুরুত্ব পাবে না। পড়ুয়াদের সঙ্গে একমত টালিগ়ঞ্জের বাসিন্দা শাশ্বতী বক্সীও। যদিও তিনি সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে আগেই জেনে গিয়েছিলেন প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। তবুই এ দিন মেয়ে অনংশ বক্সীকে নিয়ে যাদবপুরে এসেছিলেন। অনংশ ফিউচার ফাউন্ডেশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৬.৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। তাঁরও ইচ্ছে ইতিহাস অথবা সমাজবিদ্যা নিয়ে যাদবপুরে ভর্তি হওয়া। কিন্তু এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না মেধা তালিকায় তার ঠাঁই হবে কি না!
আরও পড়ুন: এখনও ঘেরাওমুক্ত নন উপাচার্য, প্রবেশিকার দাবিতে উত্তাল যাদবপুর
অনংশের বাবা, মা-ও যাদবপুরের প্রাক্তনী। শাশ্বতীর বক্তব্য, ‘‘আমাদের সময়ও পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। আমরাও পরীক্ষা দিয়েই এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এটাই যাদবপুরের রীতি। পরীক্ষার মাধ্যমেই মেধা যাচাই করে নেওয়া হয়। বিশেষ করে কলা বিভাগে তো প্রবেশিকা অবশ্যই দরকারি। তাই আমরা এ দিন প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’’
সময় যত গড়াচ্ছে আন্দোলনের ঝাঁজ আর বাড়ছে। যাদবপুরের পড়ুয়ারা জানিয়ে দিয়েছে, প্রবেশিকা নিতেই হবে। নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না। তাঁদের মতে, এতে পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ জড়িত। শিক্ষামন্ত্রী ভেবে দেখা উচিত ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy