Advertisement
E-Paper

‘ফোন গেলে যাবে, আগে বাইরে চলো’

চিনতে পারছেন? ফার্মেসির পোড়া স্টোর থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন টেবিলে রেখে জানতে চাইলেন বৌবাজার থানার তদন্তকারী আধিকারিক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রামায়ণ চৌধুরী বললেন, ‘‘এই ফোনটা আনতে গিয়েই সে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। পুড়ে মরতাম আর একটু হলে। থালা-বাটি, শার্ট-ট্রাউজার্সটাও বার করতে পারিনি!’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৭
ফার্মেসির ভিতরে পোড়া গজ-তুলোর স্তূপ। নিজস্ব চিত্র

ফার্মেসির ভিতরে পোড়া গজ-তুলোর স্তূপ। নিজস্ব চিত্র

চিনতে পারছেন? ফার্মেসির পোড়া স্টোর থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন টেবিলে রেখে জানতে চাইলেন বৌবাজার থানার তদন্তকারী আধিকারিক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রামায়ণ চৌধুরী বললেন, ‘‘এই ফোনটা আনতে গিয়েই সে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। পুড়ে মরতাম আর একটু হলে। থালা-বাটি, শার্ট-ট্রাউজার্সটাও বার করতে পারিনি!’’

পাশে বসা শীর্ষেন্দুবিকাশ দাস জানালেন, বুধবার অগ্নিকাণ্ডের দিন যত ক্ষণে তাঁরা ধোঁয়া দেখতে পান, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কোনও মতে বেরিয়ে আসেন। বললেন, ‘‘রামায়ণদাকে বললাম, পাগল নাকি! ফোন গেলে যাবে। আগে বাইরে চলো।’’ শীর্ষেন্দুবিকাশের দাবি, ধোঁয়া দেখে সকাল ৮টা নাগাদ তিনিই ফোন করেন আর এক ফার্মাসিস্ট অভয় মাইতিকে। ফোন করেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসকে। খবর যায় দমকলে।

শীর্ষেন্দুবিকাশ মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাসিস্ট হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। রামায়ণ চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শীর্ষেন্দুবিকাশের মতোই মূল ওষুধের স্টোরের দায়িত্বে রয়েছেন আরও ২৭ জন ফার্মাসিস্ট। রামায়ণ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন ১৪ জন। এঁদের নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং কে কোথায় দায়িত্ব পালন করেন, তার তালিকা চেয়েছেন তদন্তকারীরা। এ দিন রতন মিশ্র নামে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকেও থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হাসপাতালের তরফে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ডিউটি করার অভিযোগ জানানো হয়েছে। তিনি অবশ্য ঘটনার দিন হাসপাতালে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত থানায় ওই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার দিন শীর্ষেন্দুবিকাশ এবং রামায়ণেরও স্টোরে থাকার কথা নয়। তাঁরা ফার্মাসিস্ট সুকেশরঞ্জন কর এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অরূপ ঘোষের বদলে ডিউটিতে এসেছিলেন।

সুকেশরঞ্জন এ দিন বললেন, ‘‘বন‌্ধ এবং বেশ কিছু কারণে আগের কয়েক দিন একটানা ডিউটি করতে হয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে আমার জ্বর আসে। ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমার জায়গায় শীর্ষেন্দু ডিউটি করেছিল।’’ অরূপের দাবি, ‘‘আমার চোখের শিরায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। রাতের ডিউটি করতে পারব না জানিয়েছিলাম। আমার জায়গায় অফিস থেকেই রামায়ণকে ডিউটি দেওয়া হয়।’’ সুকেশরঞ্জন জানান, সাধারণত তাঁদের ডিউটি দুপুর দু’টো থেকে পরের দিন দুপুর দু’টো পর্যন্ত। তবে তা মানা হয় না। ফার্মাসিস্ট, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা সুবিধামতো ডিউটি-তালিকা বানিয়ে নিয়েছেন বলে নিজেরাই স্বীকার করেন।

শীর্ষেন্দুবিকাশ জানান, মঙ্গলবার রাতে ফার্মেসির বাইরের দিকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে ছিলেন তাঁরা। রামায়ণ অনেক রাত পর্যন্ত স্টোরের ভিতরের ঘরে বসে গজ-তুলোর ব্যান্ডেজ তৈরি করেন। দুর্ঘটনায় একটি হাতের কনুই থেকে নীচের অংশ কেটে বাদ যাওয়ায় কাজ করতে সময় লাগে রামায়ণের। পরে তিনিও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে যান। রামায়ণ বলেন, ‘‘স্টোরের মূল দরজা জরুরি বিভাগের জন্য সারা রাত খোলাই থাকে। ওষুধ যায়। একজন বুড়ি কুকুরদের নিয়ে গেটের কাছে শুয়ে থাকে আর ভিতরে আমরা থাকি। ওই রাতেও ছিলাম। সকালে দেখি পোড়া গন্ধ। এসির মধ্যে ছিলাম, তাই অনেকক্ষণ বুঝতেই পারিনি।’’ যখন দরজা খোলেন, স্টোর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে। জানালেন, ভিতরে যাওয়ার সাহস হয়নি। চিকিৎসা মহলের একাংশ থেকে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ আনা হলেও শীর্ষেন্দুবিকাশদের দাবি, ‘‘স্টোরের উপরে বাথরুমের খারাপ অবস্থা। ভিতরের ঘরের তারে জল পড়ে শর্ট সার্কিট হয়েই হয়তো আগুন লেগেছিল।’’

অভিযোগ নয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হল না। দমকল এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সকলেরই যুক্তি তাঁরা নিজেরাই তদন্ত করছেন। তদন্তের পরে প্রয়োজনে অভিযোগ দায়ের করা হবে। দমকলের অধিকর্তা সমীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আগে গোটাটা খতিয়ে দেখি। তারপরে তো!’’ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বললেন, ‘‘হাসপাতালের সাত সদস্যের দল প্রশাসনিক ভাবে তদন্ত করছে। এখনও সে কারণে অভিযোগ করা হয়নি।’’

Fire Medical College Calcutta Medical College Eye Witness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy