Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Subhas Chandra Bose

ভিক্টোরিয়ায় সুভাষের জাল চিঠি, উঠছে প্রশ্ন

উত্তর-সত্য বা সত্যকে বিকৃত করে জোরালো প্রচারের যুগে রেহাই পেলেন না সুভাষচন্দ্র বসুও।

বিতর্ক: নেতাজি ভবনে আসল চিঠির অনুকৃতি দেখাচ্ছেন সুগত বসু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বিতর্ক: নেতাজি ভবনে আসল চিঠির অনুকৃতি দেখাচ্ছেন সুগত বসু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৭
Share: Save:

উত্তর-সত্য বা সত্যকে বিকৃত করে জোরালো প্রচারের যুগে রেহাই পেলেন না সুভাষচন্দ্র বসুও। আলোচনার কেন্দ্রে এ বার উঠে এল তরুণ সুভাষের আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠি।

তবে সমাজমাধ্যমের উটকো ভুয়ো নথি বা ‘হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের’ দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচার নয়। সুভাষ-জয়ন্তীর অঙ্গ হিসেবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সুভাষের জীবন ও আদর্শ নিয়ে প্রদর্শনীর আসরের একটি দ্রষ্টব্য নিয়েই আপত্তি তুলেছে নেতাজি রিসার্চ বুরো। ১৯২১ সালের ২২ এপ্রিল আইসিএস থেকে সুভাষচন্দ্রের ইস্তফার চিঠির ফ্যাকসিমিলি বা অনুকৃতি বলে যে চিঠিটি প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে, তা জাল বলে শনিবার ওই প্রতিষ্ঠানের তরফে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন, ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলেন, ‘‘ভিক্টোরিয়ায় সুভাষচন্দ্র বসুর চিঠি বলে যা দেখানো হচ্ছে, আমি তার ছবি দেখেছি। লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডসে রাখা আসল চিঠিটির সঙ্গে তার নানা ফারাক।’’ সুভাষ-রচনাবলী সম্পাদনার সূত্রে সুভাষচন্দ্রের হাতের লেখার সঙ্গেও সুগতবাবু পরিচিত। ভিক্টোরিয়ার চিঠির কপিটির হাতের লেখা আলাদা বলে তাঁর অভিমত। সুগতবাবু বলেন, ‘‘আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠিটি সুভাষচন্দ্র ব্রিটেনের সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া-র উদ্দেশ্যে লেখেন। সেই সম্বোধনটিতেও গোলমাল। ভিক্টোরিয়ার প্রদর্শনীর চিঠিতে ‘মিস্টার অনারেবল’ রয়েছে। আসল চিঠিতে আছে ‘টু দ্য রাইট অনারেবল’। তা ছাড়া, কপি করার সময়ে ক্যাপিটাল লেটারেও কয়েক জায়গায় গরমিল। এক জায়গায় ইংরেজিতে ‘সার্ভেন্ট’ বানানেও ভুল দেখলাম।’’

সুভাষচন্দ্রের হাতের লেখা কেউ নকল করে ভুয়ো প্রচার করছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না বলে ক্ষুব্ধ সুগতবাবু। তার উপরে চিঠিটির সূত্র হিসেবেও নেতাজি রিসার্চ বুরোর নাম লেখা। ‘‘সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে এমন তঞ্চকতা অপরাধ,’’ বলছেন তিনি। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে সুভাষচন্দ্রের ‘মহম্মদ জিয়াউদ্দিন’-বেশী আলোকচিত্রটিও জাল বলে চিঠি দেন সুগতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশে এলগিন রোড থেকে ওঁর পালানোর সময়ে ছবি তোলার প্রশ্নই ছিল না। কোনও শিল্পী কাল্পনিক ছবি আঁকতে পারেন। কিন্তু প্রদর্শনীতে ফোটোগ্রাফ বলে তা দেখানো যায় না।’’ ভিক্টোরিয়ার অধিকর্তা জয়ন্ত সেনগুপ্ত সুগতবাবুর চিঠিটি দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, চিঠিটি না-দেখে কী ভুল হয়েছে, বলতে পারব না।’’

আইসিএস থেকে সুভাষচন্দ্রের ইস্তফার চিঠিটির অনুকৃতি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৯৭২-এ সুভাষচন্দ্রের জীবনের বিভিন্ন পর্বে ইউরোপের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে কৃষ্ণা বসুর ‘ইতিহাসের সন্ধানে’ বইটিতে। সুগতের বাবা, মা, শিশিরকুমার (সুভাষচন্দ্রের ভাইপো) ও কৃষ্ণা বসুই ১৯৭১-এর সেপ্টেম্বরে বিলেতে ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডসে আসল চিঠিটি দেখেন বলে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে লিখেছেন সুগতবাবু। কলকাতায় নেতাজি-ভবনে আসল চিঠির অনুকৃতি কেমব্রিজে বন্ধুদের সঙ্গে তরুণ সুভাষচন্দ্রের আলোকচিত্রের নীচে ফ্রেমে বাঁধানো। তা সত্ত্বেও সুভাষচন্দ্রের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিটি নিয়ে কারচুপি কেন করা হল, তা নিয়ে ধন্দে সুগতবাবু। তবে কয়েক বছর আগে সমাজমাধ্যমেও ওই চিঠির নকল দেখা গিয়েছিল বলে কারও কারও অভিমত।

ভিক্টোরিয়ার এই প্রদর্শনীর আয়োজনের নেপথ্যে নয়ডার একটি বেসরকারি সংস্থা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তা ছাড়া, ভিক্টোরিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের আয়োজনে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কর্তারা এবং দিল্লি পরিমণ্ডলে পরিচিত বিজেপি-র এক নেতা ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের খবর। সুগতবাবু বলেন, ‘‘প্রদর্শনীর বিভিন্ন দ্রষ্টব্যই নেতাজি রিসার্চ বুরো সূত্রে প্রাপ্ত বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো কেউ যোগাযোগ করেননি। তিলে তিলে জড়ো করা সুভাষচন্দ্রের জীবনের সব অমূল্য স্মারক। তা নিয়ে এই ছেলেখেলায় কি সুভাষচন্দ্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পেল?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

victoria Subhas Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE