প্রতীকী ছবি।
বাড়ি থেকে যখন শনিবার সে বেরিয়েছিল, তখন বেলা সাড়ে বারোটা। মাকে বলেছিল, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে সায়েন্স সিটি ঘুরতে যাচ্ছি।’’ দুপুর দুটো নাগাদ পাড়ারই এক জন বাড়ি এসে খবর দেন, ‘‘দুর্ঘটনায় ছেলের হাত ভেঙেছে। হাসপাতালে যেতে হবে।’’ তড়িঘড়ি হাসপাতালে গিয়ে সাদা কাপড়ে ঢাকা বছর দশেকের ছেলের নিথর দেহ দেখেন মা। রবিবারই মহম্মদ হোসেন আলম নামে ওই বালকের দেহের ময়না-তদন্ত হয়। তার পরে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
প্রগতি ময়দান থানা এলাকার সায়েন্স সিটির কাছে সার্ভিস রোডে শনিবার লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় হোসেনের। রবিবার তপসিয়া রোডে তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, এক কামরার ঘরে আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ভিড়। ভিড় বাড়ির সামনেও। চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তৃতীয় হোসেনের মৃত্যুর খবর শোনা ইস্তক বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা তারান্নুম বানু। বাবা পারভেজ আলম হাসপাতাল আর থানায় দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। মোবাইলে ছেলের ছবি দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তারান্নুম। কোনও মতে বললেন, ‘‘বছরের প্রথম দিন বলে সকাল থেকে কিছু না খেয়েই পাড়ায় ঘুরছিল। দুপুরে বলে গেল, বন্ধুদের সঙ্গে সায়েন্স সিটি ঘুরে এসে খাবে। আর খাওয়া হল না।’’
ব্যাগ কারখানার কর্মী পারভেজ আর গৃহবধূ তারান্নুমের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। হোসেন স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। অভাব সত্ত্বেও দিন কয়েক আগে ছেলেকে একটি মোবাইল কিনে দিয়েছিলেন বাবা। আত্মীয় তারাসুম বানু বললেন, ‘‘ছেলেটা ভিডিয়ো করতে ভালবাসত। তার জন্যই একটা মোবাইল কিনে দেওয়া হয়েছিল। ওই মোবাইল নিয়েই শনিবার ভিডিয়ো করতে বেরিয়েছিল। যাওয়ার পথে ঘটে ওই দুর্ঘটনা।’’
দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে উনুনে হাঁড়ি চড়েনি। প্রতিবেশীরাই খাবার এনে খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন তারান্নুমকে। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘বর্ষবরণের রাতে পাড়ায় পিকনিক হয়েছিল। সেখানেও হোসেন ছিল। অনেক রাত পর্যন্ত আনন্দ করল। পর দিন এই ঘটনা ভাবতে পারছি না।’’ হোসেনের মৃত্যুর পরে ওই এলাকায় বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy