Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি আতঙ্কে কোপ প্রাতর্ভ্রমণে

সল্টলেকের তারাশঙ্কর রায়ও একই পথের পথিক। কালীপুজোর সকালে খালপাড়ের প্রায় ফাঁকা চেহারাটা দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে বলে লোকে হাঁটা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন দেখছি বৃষ্টি না থাকলেও আসছেন না বেশির ভাগ! মনে হয় ডেঙ্গির ভয়ে লোকে আসছেন না।’’

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৯
এত্তা জঞ্জাল: খালধারের আবর্জনা। সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র

এত্তা জঞ্জাল: খালধারের আবর্জনা। সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র

মশার জ্বালায় বন্ধ অনেকের প্রাতর্ভ্রমণ!

সল্টলেকের এ ই ব্লকের বাসিন্দা বছর ষাটের উদয় চক্রবর্তীর বরাবর কাকভোরে বেরিয়ে পড়া অভ্যাস। বাড়ি থেকে খানিকটা এগোলেই সবুজ চত্বর (গ্রিনভার্জ)। সেখানে খানিক শারীরচর্চা করে হাঁটা শুরু করেন তিনি। সল্টলেক থেকে লেক টাউনের দিকে যাওয়ার ফুটব্রিজের সামনের রাস্তা এটি। পাশ দিয়ে গিয়েছে
কেষ্টপুর খাল।

বৃহস্পতিবার সেই উদয়বাবুকে দেখা গেল হাল্কা রোদ গায়ে মেখে হাঁটছেন! ঘড়িতে তখন প্রায় ৮টা। কী ব্যাপার, এত দেরিতে? কথা থামিয়ে কাঁচা-পাকা চুলে হাত বোলাতে বোলাতে তিনি বললেন, ‘‘কিছু দেখছেন না, শুনছেন না? মশা, মশা! আতঙ্কে ভোরবেলা বেরোনো বন্ধ করে দিয়েছি।’’ তাঁর মনে হয়েছে, ‘‘বৃষ্টির পরে ডেঙ্গি বেড়েছে। লোকে মারাও যাচ্ছেন। বহু বাড়িতে জ্বর। এ সব না বেরোনোর কারণ হতে পারে।’’

সল্টলেকের তারাশঙ্কর রায়ও একই পথের পথিক। কালীপুজোর সকালে খালপাড়ের প্রায় ফাঁকা চেহারাটা দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে বলে লোকে হাঁটা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন দেখছি বৃষ্টি না থাকলেও আসছেন না বেশির ভাগ! মনে হয় ডেঙ্গির ভয়ে লোকে আসছেন না।’’

ফুটব্রিজ পেরিয়ে এই রাস্তায় হাঁটতে আসেন লেক টাউন, বাঙুরের অনেক বাসিন্দা। পরিচিত সেই মুখগুলোকে আর তেমন দেখা যাচ্ছে না, পর্যবেক্ষণ তারাশঙ্করবাবুর। তিনি নিজেও সময় বদলে ৮টার পরে বেরোচ্ছেন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, খুব ভোরের দিকে ডেঙ্গির মশা
বেশি সক্রিয় থাকে। লেক টাউনের বাসিন্দা অলক দাস নিয়মিত সেতু পেরিয়ে সল্টলেকে আসেন হাঁটতে। মাঝে বেশ কিছু দিন আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কাগজে পড়ছি ডেঙ্গির মশা ভোরের দিকে কামড়ায়। তাই আসছিলাম না। অনেক দিন পরে আজ বেলা করে এলাম।’’ উদয়বাবু, তারাশঙ্করবাবুরও মনে হয়েছে, ভোরে হাঁটা-বন্ধ করার কারণ এটাই। অনেকে তাই দেরিতে বেরোচ্ছেন। অনেকে সেই ঝুঁকিটাও নিতে নারাজ। বন্ধই রেখেছেন প্রাতর্ভ্রমণ।

সল্টলেক ঘিরে রেখেছে তিনটি খাল। এর মধ্যে কেষ্টপুর খালটি সল্টলেকে ঢোকার মুখে এএ ব্লকের পিছনের দিক থেকে সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের সামনে দিয়ে বৈশাখী পর্যন্ত গিয়েছে। বৈশাখী থেকে এএল ব্লক পর্যন্ত বাগজোলা খাল। তৃতীয়টি ইই ব্লক থেকে চিংড়িহাটা পর্যন্ত ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল নামে পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে অপরিষ্কার এই তিনটি খালই মশার আঁতুড়ঘর। তার পাশে রাস্তার উপরে ডাঁই হয়ে প়ড়ে থাকে জঞ্জাল। আবার, এই তিন খাল বরাবর রাস্তাতেই সবচেয়ে বেশি প্রাতর্ভ্রণকারীদের যাতায়াত। সল্টলেক পুরসভা সূত্রের খবর, খাল-সংলগ্ন সল্টলেকের এলাকাগুলিতেই জ্বরের প্রকোপ বেশি। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি। ইই ব্লকে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

ডেঙ্গির ভয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তাপস সরকার হাঁটাই বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ায় এ দিন থেকে ফের শুরু হয়েছে হাঁটাহাঁটি। তিনি বলেন, ‘‘ব্লাড সুগার ও ডেঙ্গি— মাত্রা ছাড়ালে দু’টোই বিপজ্জনক। এখন শ্যাম রাখি না কূল, বুঝতে পারছি না দাদা।’’

সল্টলেকের মেয়র সব্যসাচী দত্ত অবশ্য এ সমস্যা মানতেই নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘সল্টলেকে মশা কোথায়? সকলেই তো হাঁটছেন। সুইমিং পুলের দিকে যান। কত লোক হাঁটছেন। খালপাড়ের দিকে লোকে কম হাঁটছে, এমন খবর আমার কাছে নেই।’’ কিন্তু পুরসভার আলো এবং পার্ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ এবং খালপাড়ের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুধীর সাহা মনে করেন, সল্টলেকে এখন মূল তিনটি সমস্যা। যত্রতত্র ঝুপড়ি বস্তি আর ফাঁকা প্লট। এ সব জায়গায়
মশার উপদ্রব রয়েছে।’’ তিনি মনে করেন, ‘‘খালপাড়গুলি আরও পরিষ্কার হওয়া উচিত।’’

Dengue Morning Walk Saltlake Garbage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy