Advertisement
E-Paper

নিয়ম জানে সকলেই, মানার ইচ্ছে ক’জনের

অগ্নি-সুরক্ষার যে সব নির্দেশিকা দিয়ে রেখেছে দমকল, দমদম ও বিধাননগরের হাসপাতালে তার অনেক কিছুই চোখে পড়ল না।শনিবারের মুর্শিদাবাদের অগ্নি-কাণ্ডের পরে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট ব্যবস্থা করেছেন তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? রোগীদের পরিজন থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, চিন্তায় অনেকেই।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৮
লাগানো রয়েছে ‘রিফিলিং’-এর দিন পেরোনো যন্ত্রই। বিধাননগর পুর হাসপাতালে। রবিবার। ছবি: শৌভিক দে।

লাগানো রয়েছে ‘রিফিলিং’-এর দিন পেরোনো যন্ত্রই। বিধাননগর পুর হাসপাতালে। রবিবার। ছবি: শৌভিক দে।

অগ্নি-সুরক্ষার যে সব নির্দেশিকা দিয়ে রেখেছে দমকল, দমদম ও বিধাননগরের হাসপাতালে তার অনেক কিছুই চোখে পড়ল না।

শনিবারের মুর্শিদাবাদের অগ্নি-কাণ্ডের পরে আবারও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট ব্যবস্থা করেছেন তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? রোগীদের পরিজন থেকে স্থানীয় বাসিন্দা, চিন্তায় অনেকেই।

রবিবার এই দুই এলাকার সরকারি হাসপাতালগুলিতে ঘুরে দেখা গেল, কোথাও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকলেও নেই ফায়ার অ্যালার্ম বা স্প্রিঙ্কলার। কোথাও আবার আগুন নেভাতে প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থাই নেই।

দমকলের যদিও হাসপাতালের অগ্নি সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে সুপরিকল্পিত নির্দেশিকা রয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ড কিংবা কোনও বড় বিপর্যয় হলে হাসপাতালের প্রতিটি তলে একটি করে র‌্যাম্প রাখতে হবে, যেখান দিয়ে ট্রলি করে রোগীকে অন্যত্র সরানো হবে। এ ছাড়া প্রতিটি তলের দু’দিকে চওড়া সিঁড়ি থাকা আবশ্যক। দমদমের মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল আপৎকালীন সিঁড়ির ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে রোগীদের ট্রলি করে নামানোর জন্য নেই কোনও র‌্যাম্প। তবে বিপদের সময়ে মুমূর্ষুকেও নামতে হবে সিঁড়ি বেয়ে? প্রশ্ন উঠছেই।

দমকলের আরও নির্দেশ হাসপাতালের আয়তন, লোকসংখ্যা-সহ বেশ কিছু মাপকাঠির নিরিখে রাখতে হবে যথেষ্ট সংখ্যক অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। পোশাক-পরিচ্ছদ রাখার স্টোরে স্প্রিঙ্কলার রাখা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালের আয়তন, লোকসংখ্যা এবং আরও কয়েকটি মাপকাঠির নিরিখে দমকলের জন্য পৃথক জলের ব্যবস্থা মজুত রাখতে হবে।

দমদমে ১৩২ শয্যার এই হাসপাতালটি দোতলা। আইসিসিইউ আছে, জেনারেটর ব্যবহার করা হয়। রয়েছে ক্যান্টিনও। প্রতিদিন উত্তর শহরতলির বহু রোগী ভিড় করেন এই হাসপাতালে। কিন্তু দো’তলা হাসপাতালের সমস্ত ওয়ার্ড ঘুরেও চোখে পড়ে না কোনও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। ফায়ার অ্যালার্ম-স্প্রিঙ্কলারের মতো আধুনিক ব্যবস্থা তো দূর অস্ত্, দমকলের জন্য আলাদা কোনও জলের ব্যবস্থাও নেই।

দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্টের দাবি, খান সাতেক অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র সব সময়েই রাখা থাকে হাসপাতালে। কিন্তু এত বড় একটি হাসপাতালে মাত্র সাতটি যন্ত্র কেন? কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, আরও কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। এখন যে ক’টি যন্ত্র আছে, সেগুলিই বা চোখে পড়ে না কেন? কর্তৃপক্ষের দাবি, সেগুলি সযত্নে রাখা থাকে বিশেষ একটি জায়গায়, একসঙ্গে। কিন্তু সেগুলি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে না দিয়ে একটি জায়গায় মজুত রাখা কেন? কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে বাইরের লোকের ভিড় থাকে। তাই সেগুলি খোলা জায়গায় রাখা হয়নি। তবে হাসপাতালের কোনও আগ্নিকাণ্ড হলে যন্ত্রগুলি কাজে লাগানো হবেই বা কী ভাবে? সদুত্তর মেলেনি। এতেই স্পষ্ট অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা এবং সদিচ্ছায় কতটা পিছিয়ে দমদম পুরসভা।

অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার নিয়ে কোনও প্রশিক্ষণ কিংবা মহড়া হয়েছে কি? কর্মীদের সঙ্গেই কথা বলে জানা গিয়েছে, কোনও মহড়াই হয় না সেখানে। বিদ্যুতের ওয়্যারিংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ শেষ কবে হয়েছে, উত্তর মেলেনি
সে সম্পর্কেও।

১০০ শয্যার বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে কয়েক বছর আগেই এক বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তাতেও সুরক্ষা সম্পর্কে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষের তরফে। কয়েক মাস ধরে ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। কিছু দিন আগেই পর্যাপ্ত সংখ্যায় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র বসানো হয়েছে ওই হাসপাতালে। তা ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীদের। কিন্তু অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে আপাতত এই টুকুই। কিছু কিছু জায়গায় পার হয়ে গিয়েছে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ‘রিফিলিং’-এর সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, মাস ছয়েক আগেই ওই সব যন্ত্র বসানো হয়েছে। রিফিলিংয়ের সময় পেরোনোর কথা নয়। তবুও তাঁরা খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করবেন বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কিংবা দমকলের নির্দেশিকার অনেক কিছুই নেই সেখানে। যেমন, গোটা হাসপাতাল ঘুরেও চোখে পড়েনি আলাদা করে দমকলের জন্য জলের ব্যবস্থা, ফায়ার অ্যালার্ম বা স্প্রিঙ্কলার। নেই কোনও র‌্যাম্পও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্প্রতি প্রশাসনিক স্তরে ওই হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জলের ব্যবস্থা থেকে ফায়ার অ্যালার্ম, স্প্রিঙ্কলার-সহ আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার পরিকল্পনা জমা পড়েছে। সে পরিকল্পনা দ্রুত কার্যকর করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই জলের রিজার্ভারের কাজ চলছে, তার মধ্যে একটি আলাদা করে দমকলের জন্য রাখা হচ্ছে।

তবে এই হাসপাতালের প্রতিটি তলের দু’দিকে চওড়া সিঁড়ি রয়েছে। অস্ত্রোপচারের ইউনিটের এসি পরিবর্তন করা হয়েছে। দ্রুত হাসপাতালের বাকি এসিগুলিও পরিবর্তন করা হবে।

হাসপাতালের বর্তমান বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘দ্রুত সরেজমিন বিধাননগর হাসপাতাল ও মাতৃসদনগুলিতে পরিদর্শন করে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ এতদিনে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি? তার অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।

life safety Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy