সকাল পৌনে সাতটা-১৮তলা বহুতল থেকে তখন নাইট শিফটের কর্মীরা বেরিয়ে যাচ্ছেন, অপরদিকে সকালের শিফটের কর্মীরা অফিসে ঢুকছেন। এমন সময়ে সাত তলায় একটা বিকট শব্দ শোনা গেল। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পোড়া গন্ধ এবং ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠতেই সচকিত হন ওই বহুতলের নিরাপত্তা রক্ষীরা। দেখা যায় সাত তলার একটি বেসরকারি সংস্থার একটি অংশ আগুন লেগেছে। বহুতলের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা দিয়ে প্রাথমিকভাবে আগুন নেবানোর কাজ শুরু হয়। খবর যায় দমকলের কাছে। দমকল আসার আগেই অবশ্য ওই বহুতলের সমস্ত তল থেকে লোকজনদের বার করে নিয়ে আসা হয়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
পর পর ঘটনাস্থলে ৭টি ইঞ্জিন এসে প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তত ক্ষণে ওই বেসরকারি সংস্থার অফিস ও তাদের সার্ভার রুম পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। এমনকী বহুতলের ৭ এবং ৮ তলার বাইরের দিকে অংশের ক্ষতি হয়েছে। যদিও হতাহতের কোনও খবর নেই। সকালের দিকে সাময়িক যানজট হলেও পুলিশের তৎপরতায় রাস্তায় দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বুধবার সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে ইনফিনিটি বেঞ্চ মার্কের সাত তলার একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে আগুন লাগে। আগুনে ওই অফিসটি কার্যত ভষ্মীভূত হয়। একেবারে পুড়ে গিয়েছে অফিসের সার্ভারের ঘরটি। তবে আগুনের উৎসের কাছে পৌঁছতে কিছুটা সময় লাগে দমকল কর্মীদের। কেননা সাত থেকে দশ তলা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। ধোঁয়া বার করতে হাইড্রলিক ল্যাডার এনে সাততলায় উঠে অফিসের বাইরের দিক কাচ ভাঙতে হয়েছে দমকল কর্মীদের।
সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নিয়ে। দমকল সূত্রের খবর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বহুতলের ক্ষেত্রে ধোঁয়া বার করার যে পরিকাঠামো রাখার পরামর্শ দমকল দফতর থেকে দেওয়া হয়েছিল, তা অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এসেছে বহুবার। যেমনটা আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডেও সময়েও হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে অনেকটা একই ধরণের বিষয় নজরে এসেছে।
অথচ পাঁচ নম্বর সেক্টরে নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ ফি বছর ফায়ার অডিট করান। সংস্থা সূত্রে খবর, প্রতিটি বাড়ির নকশা থেকে কী ধরণের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা পাঁচ নম্বর সেক্টরের বহুতলে রয়েছে, কিংবা কী কী ব্যবস্থা করা দরকার সব ওই ফায়ার অডিটে বলা থাকে।
তার পরেও যে হুঁশ ফিরছে না, এ দিনের ঘটনা আরও একবার তার প্রমাণ দিল বলেই মনে করছেন দমকলের একাংশ ও পাঁচ নম্বর সেক্টর কর্মরত আইটি কর্মীদের বড় অংশ।
ইনিফিনিটি বেঞ্চ মার্কের নিরাপত্তা কর্মীদের একাংশ জানান, আগুন লাগার পরে ধোঁয়ায় চারদিক ভরে গিয়েছিল। তার মধ্যেও লোকজনকে বাইরে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু বহুতলের ১৫ তলার উপরে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীদের একাংশ ধোঁয়ায় দশতলার নিচে নামতে পারেননি। কেননা ধোঁয়া ক্রমশ উপের দিকে উঠছিল। আতঙ্কে তাঁরা বহুতলের ছাদে চলে যান।
ওই বহুতলের একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে কর্মরতা জনৈক সোনালী মুখোপাধ্যায়ের কথায়,‘‘ আমরা সেই সময় কাজ করছিলাম। নিরাপত্তা কর্মীরা আমাদের সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনেন। ধোঁয়ায় খুব কষ্ট হচ্ছিল।’’
উল্লেখ্য ২০১১ সালে আমরি হাসপাতালে আগুন লাগার পরে ধোঁয়ায় শ্বাস আটকে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরে ওই ধরনের কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত শীতাতপ ব্যবস্থা যেখানে রয়েছে, সেই সব জায়গায় ধোঁয়া বেরোনোর ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতা মূলক করে দমকল।
ফলত এই অফিসটিতে সেই ব্যবস্থা কেন কার্যকর হল না তা খতিয়ে দেখছে দমকল বিভাগ। কেন বাইরে থেকে কাচ ভেঙে ধোঁয়া বার করার ব্যবস্থা করতে হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান জানান, পুরো বিষয়টাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দমকল দফতরের তরফে যে সব ব্যবস্থা বহুতলে মজুত রাখতে বলা হয়েছে, তা মানা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নবদিগন্তের চেয়ারম্যান তথা পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘পুনরায় পাঁচ নম্বর সেক্টরে প্রতিটি বাড়ির ক্ষেত্রেই এই ফায়ার অডিট করা হবে। দমকলের অনুমোদিত কোনও এজেন্সিকে দিয়ে এই কাজ করানো হবে।’’ তবে প্রশাসনের দাবি, আগের তুলনায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা মজুত রাখার ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা অনেকটাই সতর্ক হওয়ায় এ দিন দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।