Advertisement
E-Paper

আন্টি বাঁচাও! আগুন দেখে চিৎকার খুদের

মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ব্রহ্মচারী কলোনি সংলগ্ন কার্ডবোর্ডের একটি কারখানায় আগুন লাগে। গুদামে দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৯
ধ্বংসস্তূপ: পুড়ে যাওয়া কারখানা থেকে জিনিসপত্র বার করে আনছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার, জপুরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ধ্বংসস্তূপ: পুড়ে যাওয়া কারখানা থেকে জিনিসপত্র বার করে আনছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার, জপুরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কারখানার আগুনের শিখা পাশের বহুতলের সমান উচ্চতায় পৌঁছেছে। আগুনের তাপে ফাটতে শুরু করেছে একের পর এক জানলার কাচ। নিকাশি পাইপ গলে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চারতলা ফ্ল্যাটের জানলা থেকে নীচের জমায়েতের দিকে হাত বাড়িয়ে ১০ বছরের শিশুর প্রাণপণ চিৎকার, ‘‘আন্টি বাঁচাও!’’ দিদিকে কাঁদতে দেখে কান্না জুড়ে দিয়েছে তিন বছরের শিশুকন্যাও। সময় মতো দুই বোনকে উদ্ধার করা না গেলে বড় অঘটন ঘটতে পারত বলে মনে করছেন দক্ষিণ দমদমের জপুরের ব্রহ্মচারী কলোনির বাসিন্দারা।

মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ব্রহ্মচারী কলোনি সংলগ্ন কার্ডবোর্ডের একটি কারখানায় আগুন লাগে। গুদামে দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার গুদামের পাশেই চারতলা ওই বাড়ি। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন যত ক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, তত ক্ষণে আতঙ্ক গ্রাস করেছে বহুতলের বাসিন্দাদের। কারখানা তো বটেই, সংলগ্ন জমির উপরে থাকা গাছও দাউ দাউ করে জ্বলছে। বিপদ বুঝে তড়িঘড়ি গ্যাস সিলিন্ডার কাঁধে নীচে নামতে শুরু করেন আবাসিকেরা।

এরই মধ্যে বাসিন্দাদের কানে পৌঁছয় দুই শিশুর আর্তি। ওই বহুতলটির বাসিন্দা রিঙ্কু ওঝা পাঁচ বছরের ছেলে মোহন ওঝাকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে ছিল দুই মেয়ে, নারায়ণী এবং তৃষ্ণা। এ দিন নারায়ণী বলে, ‘‘দুম দুম করে কাচ ভাঙার আওয়াজে বোনকে জড়িয়ে ধরি। কিছু ক্ষণ পরে সকলের চিৎকার শুনে বারান্দায় গিয়ে দেখি আগুন। খুব কষ্ট হচ্ছিল। শ্বাস নিতে পারছিলাম না। তখন কাঁদতে কাঁদতে জানলা দিয়ে আন্টিদের ডাকলাম।’’

স্থানীয় বাসিন্দা মিন্টু মুখোপাধ্যায় জানান, আবাসনের সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময়ে দুই শিশুর কান্না শুনতে পান তিনি। ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে নারায়ণী এবং তৃষ্ণাকে উদ্ধার করেন মিন্টু, গৌরাঙ্গ নাগেরা। দুই শিশুকন্যার মা রিঙ্কু বলেন, ‘‘প্রতিবেশীদের জন্যই দুই মেয়েকে অক্ষত পেলাম।’’

আগুন পথে বসিয়েছে আরও একটি পরিবারকে। কারখানার গাড়িচালক সুরেশ সিংহ গুদাম সংলগ্ন একটি জায়গায় পরিবার নিয়ে থাকেন। ঘটনার সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। এক বছরের সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে ছিলেন স্ত্রী কিরণ দেবী। সুরেশের ছেলে রাজকুমার সিংহ এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। কারখানার কর্মীরা ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার করলে খাটে শুয়ে থাকা শিশুপুত্রকে নিয়ে কোনও মতে বেরিয়ে আসেন কিরণ। কিন্তু বাড়ির জিনিসপত্র আর সরানোর সুযোগ পাননি তিনি। সুরেশ বলেন, ‘‘গাড়ি সারানোর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে বেশ কিছু টাকা তুলে বাড়িতে রেখেছিলাম। স্ত্রী কিছু বাঁচাতে পারেনি। টিভি, ফ্রিজ, খাট— সব পুড়ে ছাই!’’

গোরাবাজার আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র রাজকুমারের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল এয়ারপোর্ট হিন্দি মিডিয়াম স্কুল। জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে বেরোনো মাত্র বাড়িতে আগুন লাগার খবর জানতে পারে সে। বাড়ি পৌঁছে রাজকুমার দেখে, পুড়ে গিয়েছে নোট্‌স, বই— সব কিছু। তবে ঐচ্ছিক বিষয় ছাড়া মাধ্যমিকের আর কোনও পরীক্ষা বাকি নেই। বিকেলে বাড়ি ফিরে ওই ছাত্র বলে, ‘‘শেষ পরীক্ষাটা ভাল করে দিতে হবে। আর কিছু ভাবতে পারছি না।’’

দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল। কোনও হতাহতের খবর নেই। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে চায়নি দমকল। কারখানার মালিক দীপক সিংহানিয়ার বক্তব্য, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। শুকনো কাগজ কোনও ভাবে আগুনের সংস্পর্শে চলে আসায় বিপত্তি ঘটে। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার চেয়ারম্যান-পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাড়ার সকলে তৎপর হওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। সেটাই রক্ষা।’’

cardboard warehouse Fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy