চোখের সামনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে নিজেদের ঘর। অসহায় ভাবে দেখছেন আতঙ্কিত বাসিন্দারা। বস্তির অদূরে দাঁড়িয়ে দমকলের গাড়ি। কিন্তু পথ এতটাই সঙ্কীর্ণ যে, তার এগোনোর উপায় নেই। কার্যত হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তখন দমকলকর্মীদেরও কিছু করার নেই। শেষ পর্যন্ত বস্তির লোকজনই সাহস করে উঠে পড়লেন রেললাইনের উপরে। ভিড় করে দাঁড়িয়ে সকলে মিলে দু’হাত তুলে থামালেন চলন্ত ট্রেন। লাইনের যে দিকে বস্তি, তার উল্টো দিকের রাস্তা দিয়ে দমকলের গাড়ি ঢুকিয়ে রেললাইনের উপর দিয়ে জলের পাইপ জুড়ে জুড়ে নিয়ে যাওয়া হল। তার পরে প্রায় সওয়া ঘণ্টার চেষ্টায় নিভল পাতিপুকুরের সুভাষ কলোনির বস্তির আগুন।
রেললাইনের পাশে বস্তি থাকায় দিনের বেলা ওই জায়গা দিয়ে সাধারণত গতি কমিয়েই যাতায়াত করে লোকাল ট্রেন। কিন্তু মধ্য রাতে দূর পাল্লার ফাঁকা ট্রেন কিংবা মালগা়ড়ি স্বাভাবিক গতিতেই যাতায়াত করে।
শুক্রবার রাতে পাতিপুকুরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে অন্ধকারে বস্তির আগুন দেখতে পেয়েছিলেন ট্রেনচালকেরাও। সুভাষ কলোনির বাসিন্দারা জানান, সে সময়ে একটি মেল ট্রেন, একটি মালগাড়ি ও একটি ইঞ্জিন ওই পথে আসছিল। তাদের থামিয়ে লাইনের উপর দিয়ে দমকলের জলের পাইপ নিয়ে যেতে বস্তির লোকজন লাইনের উপরেই হাত তুলে ট্রেনের দিকে ছুটতে থাকেন। চালকদের অনুরোধ করা হয় ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখতে। লাইনের উপরে ওই রাতে অত ভিড় দেখে ট্রেনচালকেরা শেষ পর্যন্ত ট্রেন থামিয়ে দিয়েছিলেন।
তার পরেই যে দিকে বস্তিতে আগুন লেগেছে, তার ঠিক উল্টো দিকে জি সি ঘোষ রোড থেকে রেললাইনের উপর দিয়ে জলের পাইপ পাতে দমকল। একের পর এক পাইপ জুড়ে প্রায় পাঁচশো মিটার পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে অবশেষে বস্তির আগুনে জল দেওয়ার কাজ শুরু হয়।
দমকল জানিয়েছে, প্রায় ১৪টি হোসপাইপ পরপর জু়ড়ে রেললাইনের উপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে সুভাষ কলোনিতে জল দেওয়া হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত একটি যাত্রিবাহী ট্রেন, একটি মালগাড়ি এবং একটি ইঞ্জিন ওই এলাকায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। যে কারণে কিছুক্ষণ ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল।
সুভাষ কলোনির বাসিন্দা কানাই ঝা জানান, ট্রেনচালকেরা ঘটনার কথা শুনে নিজেরাই শিয়ালদহ ডিভিশনে যোগাযোগ করেন। তাঁদের চেষ্টাতেই বিভিন্ন স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। রেলের থেকেও একটি দমকলের গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। ট্রেন না থামলে দমকলের পাইপ কেটে যেত। তিনি বলেন, ‘‘ওই ভাবে বিপদ মাথায় নিয়ে ট্রেন থামাতে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ঠিকই। কিন্তু তা না করলে দমকলের পাইপ ট্রেনের চাকায় কেটে যেত। তাতে বস্তিতে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা যেত না।’’
রেল সূত্রে খবর, সওয়া এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আগুন নেভানোর কাজ করে দমকল। তার জেরে কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বেলা পর্যন্ত বস্তির লোকজন রেললাইনের উপরে বসে থাকায় অনেক ট্রেনই গতি কমিয়ে দিয়ে যাতায়াত করেছে বলে জানায় রেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy