Advertisement
১৮ মে ২০২৪

সিন্ডিকেট পাড়ায় ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র, চিন্তায় পুলিশ

শেষ বার বড়সড় গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯-এ। লোকসভা নির্বাচনের মুখে সে বার নিউ টাউনে একটি রাজনৈতিক লড়াইয়ে খেজের আলি নামে এক তৃণমূলকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:০৯
Share: Save:

শেষ বার বড়সড় গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯-এ। লোকসভা নির্বাচনের মুখে সে বার নিউ টাউনে একটি রাজনৈতিক লড়াইয়ে খেজের আলি নামে এক তৃণমূলকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।

ওই বছরই সল্টলেকের অনুন্নত এলাকা কুলিপাড়ায় বলাই মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল থ্রি নট থ্রি বোরের গুলিতে। পুলিশের দাবি, তার পর থেকে নিউ টাউনে তেমন বড় গুলির লড়াই আর হয়নি।

ওই সময় পর্যন্ত প্রধানত ভেড়ি দখলের লড়াইয়ে পাইপ গান, ওয়ান শটারের মতো দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। প্রধানত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন অবৈধ কারখানায় তৈরি হতো ওই সব আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশ কারখানাগুলিতে হানা দিয়ে সরবরাহের রাস্তা বন্ধ করে। পুলিশের দাবি, গত কয়েক বছর তাই নিউ টাউন-রাজারহাট-সল্টলেকের লাগোয়া এলাকায় পাইপ গান ও ওয়ান শটার ব্যবহারের কথা তেমন শোনা যায়নি।

কিন্তু এত দিন পরে আবার হল। সম্প্রতি নিউ টাউনের থাকদাঁড়িতে সুশান্ত মণ্ডল নামে যে সিন্ডিকেট কর্মীর বাড়িতে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা, তিনি আদতে তৃণমূলেরই কর্মী। অভিযোগ, দলেরই গোষ্ঠী লড়াই থেকে ওই আক্রমণ। বুধবার পুলিশ তাঁর বাড়ির সামনে থেকে আড়াই-তিন ইঞ্চি মাপের বেশ কিছু গুলির খোল উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ধৃত তিন দুষ্কৃতীকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ওই গুলি পাইপ গান থেকেই ব্যবহার করা হয়েছে।

আর তাতেই ভাঁজ পড়েছে পুলিশের কপালে। বোঝা যাচ্ছে, ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের হাতে ফের এসেছে দেশি আগ্নেয়াস্ত্র। বিধাননগরের পুলিশকর্তারা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, কুলতলি, জয়নগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় এক সময়ে বেআইনি অস্ত্র কারখানায় হানা দিয়ে পুলিশ সে সব বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজারহাটেও এক বার বেআইনি অস্ত্র কারখানার হদিস মেলে। সেখানে দেশি আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি পেন গানও উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু সে তো অতীত। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নতুন কোনও এলাকা থেকে বেআইনি অস্ত্র নিউ টাউনে ঢুকছে? নাকি আগে যারা বেআইনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তারাই নতুন করে সরবরাহ করছে?

মঙ্গলবারের ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ওই রাতে এলোপাথাড়ি গুলি আছড়ে পড়ছে সুশান্তর দোতলা বাড়িটির বাইরের দেওয়ালে। পাইপ গান হাতে ওই বাড়ির সামনে তাণ্ডব করেছে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগের তির শাসক দলের একাংশের দিকেই। যারা এতকাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল, তারাই কি এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

স্মার্ট সিটি-র তকমা লাগা এই নিউ টাউনের সঙ্গে সিন্ডিকেট নামটা এখন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। এলাকা ভাগ করে প্রোমোটারদের কাঁচামাল সরবরাহের অছিলায়
টাকা তোলার অভিযোগ সর্বত্র। সম্প্রতি এলাকা দখল নিয়ে শুরু হয়েছে বিরোধ। শাসক দলের অভ্যন্তরের সেই বিরোধে অভিযোগের তির নেতা-নেত্রীর দিকে। তাঁদের মদতেই কি বেপরোয়া হয়ে উঠছে স্থানীয় যুবকের দল, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

সুশান্তর বাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিমাই নস্কর, শম্ভুনাথ প্রামাণিক ও অনাথ মণ্ডল নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ভজাই সর্দারের ছেলে অভিজিতকেও খুঁজছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New-Town Police Syndicate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE