Advertisement
E-Paper

বেদখল হচ্ছে সাহেবপাড়াও

কিছুটা স্বস্তি ছিল পার্ক স্ট্রিটে। তবে, এখন সেখানেও হকারের ভিড়ে ফুটপাথ বেদখল হয়ে গিয়েছে। পথচারীদের বাধ্য হয়ে নেমে যেতে হচ্ছে রাস্তায়। এবং এখানেও যথারীতি পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:০০
বেহাত: সারি সারি দোকান দখল করে নিয়েছে ফুটপাথের অর্ধেক। বুধবার, পার্ক স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র।

বেহাত: সারি সারি দোকান দখল করে নিয়েছে ফুটপাথের অর্ধেক। বুধবার, পার্ক স্ট্রিটে। —নিজস্ব চিত্র।

হকারের দাপটে পদে পদে হোঁচট খেতে হচ্ছে সাহেব পাড়াতেও!

গড়িয়াহাট, ধর্মতলা বা শ্যামবাজারের ফুটপাথ তো বহু দিনই হকারদের দখলে। পথচারী, না হকার— ফুটপাথ আসলে কাদের জন্য, সেটাই বোঝা দায় ওই সব এলাকায়। কিছুটা স্বস্তি ছিল পার্ক স্ট্রিটে। তবে, এখন সেখানেও হকারের ভিড়ে ফুটপাথ বেদখল হয়ে গিয়েছে। পথচারীদের বাধ্য হয়ে নেমে যেতে হচ্ছে রাস্তায়। এবং এখানেও যথারীতি পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায়।

জওহরলাল নেহরু রোডের দিক থেকে শুরু করে মল্লিকবাজার পর্যন্ত গোটা পার্ক স্ট্রিটেরই একটি দিক কার্যত এখন হকারদের দখলে। এক সময়ে ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে কলকাতার তদানীন্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, কোনও ক্রসিংয়ের ৫০ মিটারের মধ্যে হকারদের বসতে দেওয়া হবে না। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ফুটপাথের যত্রতত্র হকার-রাজ চলছে। খাস পার্ক স্ট্রিট ও জওহরলাল নেহরু রোড মোড়ের কাছে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে ঢুকতেও রীতিমতো যুদ্ধ করে হেঁটে যেতে হয়।

পার্ক স্ট্রিট ধরে মল্লিকবাজারের দিকে ফুটপাথ ধরে হাঁটলে দেখা যাবে, সার দিয়ে রঙিন ছাতা। নীচে বসেছেন হকারেরা। সমীর মল্লিক নামে এক হকারের কথায়, ‘‘চাকরি নেই। বছর সাতেক ধরে ফুটপাথেই ব্যবসা করছি।’’ সব থেকে খারাপ অবস্থা পার্ক স্ট্রিট পোস্ট অফিসের সামনে। সেখানে রীতিমতো স্থায়ী ছাউনি তৈরি করে বসে আছেন হকারেরা।

স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘গত পাঁচ বছরে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে হকারের সংখ্যা বেড়েছে। ফুটপাথের যে কোনও জায়গায় পসরা নিয়ে বসে পড়ছেন হকারেরা। অসুবিধা হচ্ছে পথ চলার।’’ বড়দিনের উৎসবে অ্যালেন পার্কে উৎসব হয় প্রতি বছর। সেখানে মেলাও বসে। ওই মেলায় যে সব দোকানদার আসেন তাঁদেরই অনেকে স্থায়ী ভাবে ফুটপাথে বসে গিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। পার্ক স্ট্রিট থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এই ভাবে ফুটপাথ দখল হলেও পুলিশ কেন চুপ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পার্ক স্ট্রিটের এক বড় বিপণীর এক কর্তা।

পার্ক স্ট্রিট ও রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের মোড়ে ফুটপাথে ভ্যানের উপরে কাটা ফল বিক্রি চলছে। পাশেই ইডলি-দোসা খাওয়ার লম্বা লাইন। তার পাশে চায়ের দোকান। ইলিয়ট রোডের বাসিন্দা আলম হোসেন গত দশ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করছেন। বললেন, ‘‘আমার বাবাও এই ব্যবসা করতেন। আমিও করছি। ফুটপাথেই তো বসছি বরাবর।’’

পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে পা রেখে সব থেকে বেশি চোখে পড়ল ডালায় পান-সিগারেট-গুটখা নিয়ে বসা হকারদের। কিছুটা দূরেই পার্ক স্ট্রিট থানা। এত কাছে থানা থাকলেও পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিতে পারে না? পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ সব আমাদের বলে লাভ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলুন।’’ তবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের মন্তব্য, ‘‘স্থানীয় থানা মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। দখলদার সরিয়ে দেওয়া হয়।’’

কিন্তু লালবাজারের দাবির স্বপক্ষে স্থানীয়দের সমর্থন মেলেনি। স্থানীয় কলেজের এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘আগে হকার-পুলিশে লুকোচুরি হত। কিন্তু বছর পাঁচেক হল সে সব বন্ধ। একটু একটু করে বেড়েছে হকারের সংখ্যা।

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, ‘‘পার্ক স্ট্রিটে আগের থেকে হকার কমেছে। যে সব জায়গায় হকার সরানোর কথা বলছেন, সে নিয়ে কোনও নির্দেশ নেই।’’ এর পাশাপাশি পার্ক স্ট্রিটে পথচারীদের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুটপাথের বেহাল দশা। বুধবার ঘুরে দেখা গেল, ফুটপাথের অনেক জায়গাই বসে গিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বর্ষায় ফুটপাথের বহু অংশ বসে গিয়েছে। পা রাখাই দায়। বারাসতের বাসিন্দা মনোরঞ্জন ঘোষ পার্ক স্ট্রিটের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফুটপাথ নতুন করে সাজানো হলেও অনেক জায়গা বসে যাওয়ায় হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে।’’ কাউন্সিলর অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ফুটপাথ শীঘ্রই সারানো হবে।

Footpath Park street Hawker ফুটপাথ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy