Advertisement
E-Paper

নবজাতক মাতৃদুগ্ধ পায় না বেসরকারি বহু হাসপাতালেই

শহরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্মের সময়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল পৌলোমী দে সরকারের। জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে প্রচার ও সচেতনতার কাজে তিনি নিজেও জড়িত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শহরের এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্মের সময়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল পৌলোমী দে সরকারের। জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে প্রচার ও সচেতনতার কাজে তিনি নিজেও জড়িত। অথচ, গত ২২ এপ্রিল বাইপাসের এক হাসপাতালে জন্মের পরে তাঁর কাছে শিশুকে যখন প্রথম আনা হয়, তখন সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল দুধের কৌটো, গরম জল, বাটি আর চামচ! অভিযোগ, হতভম্ব পৌলোমীকে নির্লিপ্ত মুখে নার্স জানান, প্রথম ক’দিন মায়েদের যা দুধ হয়, তাতে বাচ্চার পেট ভরে না। পৌলোমী পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন নার্স ও আয়ারা। কারণ, তাঁদের বারবার দুধ খাওয়াতে নার্সারি থেকে বাচ্চাকে মায়ের কাছে আনতে হচ্ছিল।

সল্টলেকের ঈপ্সিতা তালুকদারের অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। বেলেঘাটার কাছে বাইপাসের এক হাসপাতালে ছেলে হয় তাঁর। সেখানে নিয়ম, জন্মের পরে প্রথম চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির জন্য সব বাচ্চাকে ‘নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’-এ রাখা হবে! তখন মা আর বাচ্চার দেখা হবে না। ফলে বাচ্চাকে মায়ের দুধ খাওয়ানোরও প্রশ্ন নেই।

ঈপ্সিতার অভিযোগ, তাঁর অনুমতি না নিয়েই ওই সময়ে শিশুকে কৌটোর দুধ খাওয়ান চিকিৎসক ও নার্সরা। এমনকী, মায়ের দুধের হলুদ অংশ বা ‘কোলোস্ট্রাম’ বাচ্চাকে খাওয়ানো আবশ্যক বলেও মনে করেননি। ঈপ্সিতা অভিযোগ করলে তাঁরা যুক্তি দেন, সিজারের পরে তিনি দুর্বল ও ক্লান্ত ছিলেন। শিশুকে ঠিক ভাবে খাওয়ানো যেত না। এতে বাচ্চার ‘হাইপোগ্লাইসিমিয়া’ বা দেহে গ্লুকোজের অভাব হওয়ার ভয় ছিল।

জন্মের পরে প্রথম ছ’মাস যে শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খায়, তার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য শিশুর থেকে প্রায় ১৪ গুণ বেশি থাকে। তাই প্রথম ছ’মাস শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো নিয়ে চলছে প্রচার। অথচ, আইনকে পাশ কাটিয়ে বহু বেসরকারি হাসপাতাল সদ্যোজাতকে কৌটের দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

কেন বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের প্রথম দিনই শিশুকে মায়ের দুধের বদলে কৌটোর দুধ দেওয়া হচ্ছে? শিশু বিশেষজ্ঞ তথা স্বাস্থ্য দফতরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য নজরদারিতে গঠিত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর, ‘‘নো কমেন্টস।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর সাফাই, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতককে কী দেওয়া হচ্ছে, তা ওদের ব্যাপার। সরকার বাধা দিতে পারে না। শুধু পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকলে সরকার লাইসেন্স বাতিল করতে পারে।’’ আর নিয়মের এই ফাঁক গলেই জন্মের পরে সুস্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু। প্রসঙ্গত, মায়ের দুধের উপকারিতার কথা মাথায় রেখেই এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হয়েছে মাতৃদুগ্ধের ব্যাঙ্ক ‘মধুর স্নেহ’।

কিন্তু বাইপাসের এক হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেন, ‘‘অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালেই ‘এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং’ তত্ত্ব মানা সম্ভব নয়, হয়ও না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণত সিজারই হয়। প্রথম এক-দু’দিন মায়ের ঠিক মতো দুধ আসে না। মাকে তখন যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয় বলে তিনি দুধ খাওয়াতে পারেন না। তাই বাচ্চাকে কৌটোর দুধ দিতেই হয়।’’ পার্ক স্ট্রিট এলাকার এক নামী প্রসূতি হাসপাতালের মুখপাত্র জানান, সেখানে সদ্যোজাতদের প্রথম দিন মায়ের কাছে আনাই হয় না। তা হলে বাচ্চা কোলোস্ট্রাম খায় কী করে? প্রশ্ন শুনে মুখপত্র ফোন নামিয়ে দেন।

এ ভাবে নিয়মের ফাঁক গলে বহু বেসরকারি হাসপাতালে সদ্যোজাতকে কৌটোর দুধ দেওয়ার অভিযোগ উঠছে প্রতি দিন। ‘ব্রেস্টফিডিং প্রোমোশন নেটওয়ার্ক অব ইন্ডিয়া’র (বিএনপিআই) পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি চিকিৎসক পার্বতী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতি দিন অভিযোগ আসছে, বেসরকারি হাসপাতাল কৌটোর দুধ দিতে বাধ্য করেছে।’’

যার ফলে দেশে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং-এর হার গত কয়েক বছরে ৬৪ থেকে ৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গত চার বছরে দেশে কৌটোর দুধের বিক্রি ২৪ হাজার ৪২৮ টন থেকে বেড়ে ২৭ হাজার ৭৪৩ টন হয়েছে। অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ‘ন্যাশনাল ব্রেস্টফিডিং প্রোমোশন প্রোগ্রাম’ চালু করেছে। বিএনপিআই-এর কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেটর অরুণ গুপ্ত বলেন, ‘‘আয় বাড়াতে কৌটোর দুধের কিছু সংস্থা বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে শিশুকে প্রথম ছ’মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়া থেকে বাধা দিচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: মায়ের বুকেই শুশ্রূষার ঠিকানা সদ্যোজাতের

আরও পড়ুন: যমজ সন্তানকে স্তন্যপান করাতে করাতেও থেমে নেই অফিসের কাজ

breastfeeding newborn
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy