E-Paper

বিদেশের ক্লাসঘরে কলকাতার পুজো-চর্চা

দুর্গাপুজো ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের আওতায় বৌদ্ধিক চর্চার প্রবণতা বা গবেষণার উৎসাহ নতুন নয়। কিন্তু ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পরে এমন তাগিদ বেড়েছে।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৫৬
দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের প্রতিমা।

দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের প্রতিমা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

এমনও হয়! কলকাতার সন্ধ্যায় মণ্ডপ সফরের ফাঁকে ভাবছিলেন নিউ ইয়র্কের ভাসার কলেজের ছাত্রী জেরাহ রুইজ। প্রথম বার আমেরিকার বাইরে আসা তরুণী বললেন, “গ্রামের কলাশিল্প হাটের পাশেই বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং, গাড়ির ভিড়, লোকারণ্য! চমৎকার ইকনমি (আর্থিক ব্যবস্থা), কখনও দেখব ভাবিনি।” নৃতত্ত্ব ও ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ়ের অধ্যাপিকা ক্যানডিস লো সুইফট এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিমদীপ মুপিডিও বললেন, “কলকাতা থেকে আরও প্রশ্ন নিয়ে ক্লাসঘরে ফিরব।”

ভাসার কলেজের শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে ভাসার ক্লাব সাউথ এশিয়ার দলটা মহালয়ার আগে থেকেই কলকাতায় দুর্গাপুজোর নেপথ্য কাহিনির খোঁজে মেতেছিল। তার সদস্যা তথা কলেজের প্রাক্তনী মিলেনা চিল্লা-মারকফ বললেন, “ছাত্রছাত্রীরা আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় ইউনেস্কোর ভূমিকা, সৃষ্টিশীল পরিসরে লিঙ্গ সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা ও আধ্যাত্মিকতা, দুর্গাপুজোর অর্থনৈতিক অভিঘাত ও কলকাতার ভোজ-সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহী। আমেরিকা ছাড়াও জার্মানি, রোয়ান্ডা, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, নেপাল এবং কিছু ভারতীয় পরিবারের ছেলেমেয়ে দলটিতে আছে।”

দুর্গাপুজো ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের আওতায় বৌদ্ধিক চর্চার প্রবণতা বা গবেষণার উৎসাহ নতুন নয়। কিন্তু ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পরে এমন তাগিদ বেড়েছে। পুজো-শিল্পের বিশিষ্ট চরিত্র, থিম-স্রষ্টা পার্থ দাশগুপ্ত বলছিলেন, “কয়েক বছর ধরে ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক সর্বজনীনে আমার কাজের সময়ে বিভিন্ন কলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খাতায়-কলমে চুক্তি করে ‘ইন্টার্ন’ রাখা হত। তাঁদের অনেকে দেশে, বিদেশে আর্ট রেসিডেন্সিতে থেকে কাজের সুযোগ পেয়েছেন।” পুজোর তথ্য, ইতিহাস সংরক্ষণে ললিতকলা শাখার প্রকল্পেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক-শিক্ষকেরা যুক্ত হয়েছিলেন। পরে ‘দ্য সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এ শিক্ষকতার সময়েই পুজো-গবেষণায় যুক্ত হন তপতী গুহঠাকুরতা। তিনিই ইউনেস্কোর সামনে এই শিল্পের তাৎপর্য তুলে ধরার পুরোভাগে ছিলেন।

দুর্গাপুজোর সৃষ্টিশীল অর্থনীতি নিয়ে গবেষণায় ব্রিটিশ কাউন্সিল, রাজ্য পর্যটন দফতরকে সাহায্য করেন আইআইটি খড়্গপুর, নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।

মহালয়ার আগে থেকে পুজো এবং তার প্রস্তুতি দেখার উদ্যোগে যুক্ত স্থপতি সায়ন্তন মৈত্র বলছেন, “শুধু পুজো দেখা নয়, পুজোর নানা দিক নিয়ে গবেষণার ঝোঁকে অনেকেই শহরে আসছেন।” আন্তর্জাতিক পরিসরে শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য চর্চার প্রতিষ্ঠান জার্মানির ডেলফিক কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা এখন শহরে। সারা বিশ্বের স্থপতিদের মঞ্চ ‘ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার ট্র্যাভেল’-এর সদস্যেরাও পুজো শিল্পের খুঁটিনাটি বুঝতে ঘুরছেন।

পুজোর কাজের শরিক হয়েও বিদেশিরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে উৎসাহী। তাতে গবেষক, শিল্পীদের কাজও আন্তর্জাতিক মাত্রা পাচ্ছে। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক, সাউন্ড ডিজাইনার সুকান্ত মজুমদার ও জার্মান মাল্টিমিডিয়া ডিজাইনার টমাস আইশহর্ন মিলে পুজোর শব্দ নিয়ে স্থাপনা শিল্প পেশ করবেন। দমদম পার্কের বড় পুজোর তল্লাটে ‘শব্দগাড়ি’ টোটোয় ঘুরবেন তাঁরা। পুজোয় জল ও সংস্কৃতির যোগ নিয়ে আলো ও ধ্বনির উপস্থাপনা তাঁরা টাউন হলে তুলে ধরেছেন।

নিউ টাউনের সিই ব্লকের পুজোয় সমন্বয় রক্ষায় শরিক নেদারল্যান্ডসের আলমেয়র শহরের পুজো। দু’টি পুজোই সুন্দরবনের লোকশিল্পীদের কাজ মেলে ধরছে। পুজোকর্তা তথা হিডকো সভাপতি দেবাশিস সেন বলছেন, “পুজোর সূত্রে বিপন্ন ইউনেস্কো ঐতিহ্য সুন্দরবনের কথা উঠে আসাও ভাল!”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy