Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সিরিঞ্জ দিয়ে শিরায় হাওয়া, খুনে ধৃত চার

শিরার মধ্যে খালি সিরিঞ্জ দিয়ে হাওয়া ভরে দিলেই কাজ হাসিল! ময়না-তদন্তেও বোঝা যাবে না মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। ইংরেজি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে এ ভাবেই খড়দহের বাসিন্দা, জ্যোতিষী জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল খুনিরা। সেই মতো খুনের পরেই নির্জন এলাকার পুকুরে ফেলা হয়েছিল দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
Share: Save:

শিরার মধ্যে খালি সিরিঞ্জ দিয়ে হাওয়া ভরে দিলেই কাজ হাসিল! ময়না-তদন্তেও বোঝা যাবে না মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। ইংরেজি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে এ ভাবেই খড়দহের বাসিন্দা, জ্যোতিষী জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল খুনিরা। সেই মতো খুনের পরেই নির্জন এলাকার পুকুরে ফেলা হয়েছিল দেহ।

ঘটনার সাত দিন পরে শনিবার চার জনকে গ্রেফতারের পরে এমনই তথ্য উঠে এসেছে খড়দহ পুলিশের হাতে। পুলিশ জেনেছে, মূল অভিযুক্ত সমর আচার্যের স্ত্রী মিতার সঙ্গে জয়ন্তর সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ। বনিবনা না হওয়ায় আলাদা থাকতেন সমর। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে জয়ন্তর সম্পর্ক মানতে পারেননি। ভাড়াটে ও তাঁদের এক বন্ধুকে নিয়ে সমর খুনের গোটা পরিকল্পনা করে বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান জয়ন্ত। পরের দিন খড়দহেরই কল্যাণনগরের পুকুরে তাঁর দেহ মেলে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, দু’বছর ধরে মিতার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ওই জ্যোতিষীর। জয়ন্তর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন মিতা। আট মাস ধরে তাঁরা এক সঙ্গে থাকতেন বলে জানতে পারে পুলিশ। এর পরেই খড়দহ থানার আইসি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশেষ দল তৈরি হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ মিতাকে গ্রেফতার করে জেরা শুরু করে। তখনই উঠে আসে সমরের নাম। এর পরে শনিবার সকালে সমর-সহ আরও তিন জনকে ধরে পুলিশ। লাল্টু নন্দী ওরফে বিশ্বজিৎ, তার স্ত্রী রিয়া ওরফে শ্রাবণী এবং সোমনাথ পাল।

ধৃতদের জেরায় জানা যায়, আট মাস আগে বাড়ি ছাড়েন মিতা। তখনই খেপে ওঠে সমর। ঠিক করে, জয়ন্তকে সরিয়ে দেবে। এর পরেই তার বাড়িতে নতুন ভাড়াটে লাল্টু ও রিয়াকে বিষয়টি জানিয়ে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে খুনের ছক কষতে বলে। সেই টাকা জোগাড় করতে নিজের দোকানটি ১১ লক্ষ টাকায় বেচে দেয়। লাল্টু তার এক বন্ধু সোমনাথকে কাজের দায়িত্ব দেয়। তদন্তকারীদের জেরায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করা সোমনাথ জানিয়েছে, ‘ভার্টিকাল লিমিট’ নামের ইংরেজি সিনেমা ও গোয়েন্দা সিরিয়ালে সে দেখেছিল শিরায় সিরিঞ্জের মাধ্যমে হাওয়া ভরে দিলে মানুষ মারা যায়। তা দেখেই ওই পদ্ধতিতে জয়ন্তকে খুনের ছক কষে তারা। এমনকী কল্যাণনগরের পুকুরে নিয়ে যাওয়া হবে কী ভাবে, তার রেকি-ও করে নেয়।

পুলিশ জানায়, এর পরেই রিয়ার পাতা ফাঁদে পা দেন জয়ন্ত। সোদপুরের এইচবি টাউনে কয়েক ঘণ্টার জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেটিকে রিয়ার শ্বশুরবাড়ি বলে সাজানো হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নিজের সাংসারিক সমস্যা মেটানোর নাম করে ওই বাড়িতেই জ্যোতিষীকে ডাকে রিয়া। কিন্তু সে দিন কাজ না হওয়ায় পরের দিন আবার রিয়ার ফোন পেয়ে চেয়ার মোড়ের কাছে আসেন ওই জ্যোতিষী। সেখান থেকে একটি গাড়িতে রিয়াদের সঙ্গে ওঠেন। পুলিশ জেনেছে, এর পরেই তাঁর মুখ চেপে ধরে সোমনাথ। বেঁধে ফেলা হয় দু’টি হাত। ফাঁকা সিরিঞ্জ ফুটিয়ে দেওয়া হয় জয়ন্তর শিরায়। তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়লে দেহটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE