Advertisement
E-Paper

মিডিয়ার সঙ্গে কোনও কথা নয়, পড়ুয়াদের নির্দেশ স্কুলের

বৃহস্পতিবার স্কুলের বাইরে হাঁকডাক আর নেই। নেই পুলিশের ব্যস্ততাও। দূরে দাঁড়িয়ে পুলিশের একটা গাড়ি। স্কুলের ভিতরের ব্যস্ততাটা বোঝা যাচ্ছিল বাইরে থেকেই। ছাত্রছাত্রীদের হাসিঠাট্টায় ফের গমগম করছে স্কুল চত্বর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
ছন্দে: গেট খুলেছে, আসতে শুরু করেছে ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার, জি ডি বিড়লা স্কুলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ছন্দে: গেট খুলেছে, আসতে শুরু করেছে ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার, জি ডি বিড়লা স্কুলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বদলে গেল পুরো চিত্রটাই!

গত শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত স্কুলের বাইরের রাস্তায় তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্লোগান, হাততালি, সাংবাদিকদের ছোটাছুটি— মাছ বাজারের থেকেও গমগম করত জায়গাটা। স্কুলের সামনে ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী। শুধু স্কুলের ভিতরটা ছিল সুনসান।

বৃহস্পতিবার স্কুলের বাইরে হাঁকডাক আর নেই। নেই পুলিশের ব্যস্ততাও। দূরে দাঁড়িয়ে পুলিশের একটা গাড়ি। স্কুলের ভিতরের ব্যস্ততাটা বোঝা যাচ্ছিল বাইরে থেকেই। ছাত্রছাত্রীদের হাসিঠাট্টায় ফের গমগম করছে স্কুল চত্বর।

টানা ছ’দিন বন্ধ থাকার পরে এ দিনই খুলেছে রানিকুঠির জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন। স্কুলের প্রিন্সিপাল শর্মিলা নাথের সাময়িক অপসারণের পরে বৃহস্পতিবার স্কুলে এসেছে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা। প্রাইমারি বিভাগটি খুলবে আজ, শুক্রবার।

গত বৃহস্পতিবার লোয়ার নার্সারি বিভাগের এক ছাত্রীর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পরে শুক্রবার স্কুলের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রিন্সিপালের অপসারণ ও গ্রেফতারির দাবিতে শনিবার ওই বিক্ষোভ স্কুলের সামনের পরিসর ছেড়ে নেমে আসে রাজপথে। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধের কথা ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার থেকে স্কুলের সামনে বিক্ষোভকারীরা দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একদলের বক্তব্য ছিল, অবিলম্বে স্কুল খুলুক। অন্য পক্ষ প্রিন্সিপালের অপসারণ ও গ্রেফতারির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, স্কুল বোধ হয় তাড়াতাড়ি আর খুলবেই না।

আরও পড়ুন: ‘যৌন নিগ্রহ তো বলা হয়নি’, বললেন শিশুটির চিকিৎসক

শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের উপস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের বৈঠকে সমাধানসূত্র বেরোয়। ঠিক হয়, আপাতত প্রিন্সিপালের জায়গায় দুই ভাইস প্রিন্সিপাল স্কুল চালাবেন। সেই মতো এ দিন ফের স্কুলের তালা খোলে।

এ দিন পড়ুয়াদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। সকালেই সিনিয়র বিভাগ, অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা কেউ বাবা, কেউ মায়ের সঙ্গে এসে অপেক্ষা করতে থাকে গেটের বাইরে। সহপাঠীদের দেখে তাদের জড়িয়ে ধরেই অনেককে স্কুলে ঢুকতে দেখা যায়। ছুটির পরে অনেকে স্কুল ছেড়েছে হাতে হাত রেখে।

তবে এ দিন সিনিয়র বিভাগের অভিভাবকদের একাংশ স্কুল বন্ধ থাকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘একটি শিশুর উপরে নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু তার জন্য স্কুল বন্ধ রাখার কোনও অধিকার কোনও অভিভাবকের নেই।’’

স্কুল খোলায় পড়ুয়ারা অবশ্য খুশি। একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়ার মন্তব্য, ‘‘শনি-রবিবার স্কুল এমনিতেই বন্ধ থাকে। ফলে স্কুল বন্ধ ছিল মাত্র চার দিন। আশা করি, ওই ক’টা দিনের পড়াশোনার খামতি ম্যাডামরা পূরণ করে দেবেন।’’ একাদশ শ্রেণির আর এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘ক্লাস টেন এবং টুয়েলভের সিলেবাস শেষ না হলে স্কুল থেকে বাড়তি ক্লাস করিয়ে তা শেষ করে দেয়। তাই আমাদের তেমন অসুবিধা হবে না। তবে স্কুল আরও ক’দিন বন্ধ থাকলে সমস্যা হতো।’’

তবে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ এবং আন্দোলনে বারবার স্কুলের নাম যে ভাবে উঠে এসেছে, তার প্রভাব পড়েছে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের উপরেও। স্কুল ছুটির পরে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী বলল, ‘‘সব ক্লাসই হয়েছে। তবে ক্লাস টিচার এসে প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন, স্কুল শেষে কোনও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা যাবে না।’’

স্কুলে গিয়ে এ দিন পড়ুয়ারা দেখেছে, করিডরে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ‘‘ম্যাডামরা জানিয়েছেন, আমরা কে কী করছি, তা ক্যামেরায় ধরা থাকবে। স্কুলের মধ্যে আমাদের বেশি ঘোরাফেরা করতেও নিষেধ করা হয়েছে।’’

জুনিয়র বিভাগের অভিভাবকদের বেশ কয়েক জনকে এ দিন স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্কুলের সামনে গত কয়েক দিন যা ঘটেছে, সে ব্যাপারে এ দিন তাঁদের কেউই মন্তব্য করতে চাননি। স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়াদের কেউ কেউ এ দিন স্কুলে এসেছিলেন। তাঁদের কয়েক জন বলেন, ‘‘শিক্ষক বা মানুষ হিসেবে শর্মিলা নাথের মতো মানুষ হয় না। কিন্তু প্রিন্সিপাল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্ব পালন করেননি তিনি।’’

ওই প্রাক্তন ছাত্রীরা বলেন, ‘‘২০১৪ সালে যৌন নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছিল, তখনই অনেকে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা লাগানো হয়নি। ওই অনুরোধে আমলই দেননি পুরনো প্রিন্সিপাল। সেটা হলে এ দিনের ঘটনা ঘটত বলে মনে হয় না। আমাদের স্কুলের এত বদনামও হত না।’’

G D Birla School Sexual Assault Students Teachers জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন Principal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy