বাজারের চারপাশে জমেছে আবর্জনার স্তূপ। বৃষ্টির জলে আবার সেই আবর্জনা পচে গিয়ে ফুলে উঠে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোথাও আবার আবর্জনায় জমে থাকা জলে জন্মেছে মশার লার্ভা। সপ্তাহ দুয়েক আগে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারের এখন এমনই দশা।
গত ১৬ জুন মধ্যরাতে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে আগুন লেগেছিল। ভয়াবহ সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চারশোটিরও বেশি দোকান। বেশ কিছু দোকানের আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। অভিযোগ, সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রায় তিন সপ্তাহ পেরোতে চললেও কলকাতা পুরসভার তরফে আবর্জনার স্তূপ সেখান থেকে সরানো হয়নি। ফলে, চরম অসুবিধায় পড়েছেন সেখানকার দোকানি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। আবর্জনার স্তূপে বৃষ্টির জল পড়ে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হয়েছে। এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
অরফ্যানগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির তরফে অশোক শাহের অভিযোগ, ‘‘তিন সপ্তাহ হতে চলল। এর মধ্যে মাত্র দু’দিন পুরসভার ময়লা ফেলার গাড়ি এসেছিল। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যানকে বার বার ফোন করলেও তা বেজে যাচ্ছে। পুরসভার আধিকারিকদের বলেছি। কেউ আমাদের কথায় কান দিচ্ছেন না।’’
সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পুড়ে যাওয়া বাজারের চারপাশে ইতিউতি জমে রয়েছে আবর্জনা। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায়। অনেক জায়গায় জমা জলে মশার লার্ভার দেখা মিলেছে। ব্যবসায়ীদেরআশঙ্কা, ‘‘ডেঙ্গির মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ভাবে আবর্জনা পড়ে থাকলে জল জমে ডেঙ্গির কবলে পড়তে হবে।’’
বাজার কমিটির সহ-সম্পাদক গৌর সাহার অভিযোগ, ‘‘আগুন লাগার এত দিন পরেও পুরসভার কাছ থেকে আবর্জনা পরিষ্কারের বিষয়ে সাহায্য পাচ্ছি না। এই পরিবেশের জন্য বাজারের তিন জন ব্যবসায়ী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।’’ এলাকার আশপাশে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবর্জনায় বৃষ্টির জল পড়ে দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা যাচ্ছে না। পরিবেশ দূষণও হচ্ছে। বাসিন্দাদের আর্জি, পুরসভার তরফে দ্রুততার সঙ্গে সমস্ত আবর্জনা সাফাই করা হোক। না-হলে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই-এর বংশবিস্তার হবে। বছরকয়েক আগে অরফ্যানগঞ্জ বাজারে জমা জল থেকে অনেকেই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, বাজারে আগুন লাগার পরে সেখানে আবর্জনায় বৃষ্টির জল জমে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। কিন্তু ৪০০ জন দোকানির মধ্যে মাত্র ২৫০ জন ব্যবসায়ী পুরসভায় প্রামাণ্য নথি জমা দিয়েছেন। বাকিরা দিচ্ছেন না। সবাই নথি না দিলে পুরসভা ময়লা সাফাই করবে না।’’ কিন্তু ব্যবসায়ীদের নথি জমা না দেওয়ার সঙ্গে আবর্জনা সাফাই না করার সম্পর্ক কী? এর উত্তরে আমিরুদ্দিন জানান, সকলের নথি পাওয়ার আগে আবর্জনা সাফাই করা হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকানের মালিকানা নিয়ে বড়সড়় গোলমাল বাধতে পারে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও হতে পারে। কারণ, অনেকেরই দোকানের নথি নেই। মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘তা-ও আবর্জনা কী ভাবে দ্রুত সাফাই করা যায়, সে বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’’
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি তথা কলকাতা পুরসভার ন’নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন দেবলীনা বিশ্বাসের আবার দাবি, ‘‘ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, আমি ফোন ধরছি না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ওঁরা আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তা ছাড়া, পুরসভার তরফে ময়লা ফেলার গাড়িও যাচ্ছে। দোকানের বাইরে পড়ে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা ঠিক কথা বলছেন না।’’
যদিও ব্যবসায়ীদের পাল্টা অভিযোগ, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মাত্র দু’দিন আবর্জনা ফেলার গাড়ি এসেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)