Advertisement
E-Paper

খাঁচা খুলেও বাঁচানো গেল না, গড়িয়াহাটের আগুনে দমবন্ধ হয়ে মৃত তিন বদ্রিকা

গুরুদাস ম্যানসনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাতে বিস্তর গলদ পেয়েছে দমকল।

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:০৪
মৃত তিন বদ্রিকা।—নিজস্ব চিত্র।

মৃত তিন বদ্রিকা।—নিজস্ব চিত্র।

ঘড়ির কাটা তখন রাত একটা ছুঁই ছুঁই। গড়িয়াহাটের মোড়ে ৭০ বছরের পুরনো গুরুদাস ম্যানসনের বাসিন্দারা প্রায় সবাই ঘুমে অচেতন। কখন যে আগুন ধীরে ধীরে বহুতল গ্রাস করতে শুরু করেছে, তা কেউ বুঝতেই পারেননি।

পুরনো বাড়ি। তার উপর চওড়া দেওয়াল। তাই আগুনের আঁচ সহজে মালুম হয়নি। যখন বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙেছে, তখন বহুতলের একাংশ জ্বলছে। ঘটনাস্থলে দমকল পৌঁছে গিয়েছে। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। একে একে বের করে আনা হয়েছে বাসিন্দাদের। কিন্তু এত কিছুর পরেও মৃত্যু আটকানো গেল না!কালো ধোঁয়ায়, আগুনের ঝলসানিতে খাঁচার মধ্যেই ছটফট করতে করতে মারা গেল তিনটি বদ্রিকা পাখি।

তবে ঘটতে পারত আরও বড় দুর্ঘটনা। বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন বাসিন্দারা। কারণ, বাসিন্দাদেরই একাংশের দাবি, পাঁচতলা ওই বহুতলে কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। বাগড়ি-কাণ্ডেরপরওকেনশহরেরবহুতলমার্কটের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।

আরও পড়ুন: দশ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে গড়িয়াহাট মার্কেটের আগুন, কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা​

আরও পড়ুন: মঙ্গলে বাড়ি! কেমন দেখতে হবে জানেন?​

গুরুদাস ম্যানসনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাতে বিস্তর গলদ পেয়েছে দমকল। বহুতলের মধ্যেই একটি নাম করা রেস্তরাঁর রান্নাঘর রয়েছে। সেখানেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না বলে জানা গিয়েছে। বাড়িটির নীচে প্রায় ২০টি দোকান রয়েছে। সেখানেও আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া ফুটপাত জুড়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান। আর এর ফলেই আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দমকল।

একতলায় একবারে রাস্তার ধারে ঘর পেশায় আইনজীবী সুমন ঘোষের। তিনি যখন বাইরে এসে আগুনের লেলিহান শিখা দেখলেন, তত ক্ষণে ফুটপাতের দোকানগুলো পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। গল গল করে নীচ থেকে উঠছে কালো ধোঁয়া। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ঘরে আগুনও ধরে যায়। বাড়ির বারান্দায় খাঁচায় থাকা পাখিগুলোকে ছটফট করতে দেখে, খাঁচা খুলে দেন সুমন। বেশির ভাগ পাখি উড়ে গেলেও, তিনটি বদ্রিকার সেখানেই মৃত্যু হয়।

সেখানকারই বাসিন্দা নন্দিতা সমাজপতি। দুই মেয়কে নিয়ে সংসার। ছোট মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। বড় মেয়ে এমবিবিএস পড়ুয়া। আগুনে তাদের ঘরের সব সামগ্রীও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আগুন লাগার পর, সমাজপতি পরিবারই বাকিদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। ওই বহুতলেই বাড়ি অচ্যুত নায়েকের। তিনিই অসুস্থ দুই বয়স্ক মহিলাকে বাড়ি থেকে বের করেন।

দমকলের ভূমিকায় অবশ্য অসন্তুষ্ট প্রায় সকলেই। তাদের অভিযোগ, খবর বেয়ে শুধু দমকলের গাড়ি এসেছে। কিন্তু আগুন মোকাবিলায় ফেল দমকল। যদিও বাসিন্দাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে দমকলের দাবি, প্রথম থেকেই কর্মীরা সতর্ক ছিল বলে আরেকটা বাগড়ি হল না।

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং দমকলের ডিজি জগমোহন। ডিজি বলেন, “শহরের এই ধরনের সব মার্কেট পরিদর্শন করা হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”

Gariahat Fire Gariahat Kolkata Fire Fire Brigade Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy