Advertisement
E-Paper

তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ গোপাল অধরাই

মাস দুয়েক আগের ঘটনা। বাগুইআটির একটি পানশালার সামনে মাঝরাতে মত্ত অবস্থায় গুলি ছুঁড়েছে এক দুষ্কৃতী। সে বার তাকে ধরতে গেলেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে তারা পানশালার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চমকে ওঠে। ওই যুবক আসলে মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গোপাল তিওয়ারি। পুলিশের একাংশ বলছে, ওই নেতার হস্তক্ষেপেই সে বার গোপালকে ধরা যায়নি।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৮
তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর সঙ্গে গোপাল তিওয়ারির দুই শাগরেদ — মনোজ মালি (বাঁ দিক থেকে তৃতীয়) ও তার ডান দিকে ইফতিকার আলম। গিরিশ পার্ক কাণ্ডে এই দু’জনই এখন পুলিশ হেফাজতে।

তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর সঙ্গে গোপাল তিওয়ারির দুই শাগরেদ — মনোজ মালি (বাঁ দিক থেকে তৃতীয়) ও তার ডান দিকে ইফতিকার আলম। গিরিশ পার্ক কাণ্ডে এই দু’জনই এখন পুলিশ হেফাজতে।

মাস দুয়েক আগের ঘটনা। বাগুইআটির একটি পানশালার সামনে মাঝরাতে মত্ত অবস্থায় গুলি ছুঁড়েছে এক দুষ্কৃতী। সে বার তাকে ধরতে গেলেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে তারা পানশালার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চমকে ওঠে। ওই যুবক আসলে মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গোপাল তিওয়ারি। পুলিশের একাংশ বলছে, ওই নেতার হস্তক্ষেপেই সে বার গোপালকে ধরা যায়নি।

গিরিশ পার্ক থানার এসআই জগন্নাথ মণ্ডলকে গুলি করার ঘটনায় ফের উঠে এসেছে গোপালের নাম। ঘটনার দু’দিন পরেও সে অধরাই। লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, মধ্য কলকাতার তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর ঘনিষ্ঠ বলেই গোপাল বারবার পুলিশের নাগাল এড়িয়ে যাচ্ছে। সঞ্জয়বাবু অবশ্য শনিবার থেকে বারবার দাবি করেছেন, গোপালের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই।

সঞ্জয়বাবু এই দাবি করলেও গিরিশ পার্ক কাণ্ডে ধৃত গোপালের শাগরেদ ইফতিকার আলম, মনোজ মালির সঙ্গে তাঁর ছবি রয়েছে। এলাকায় এরা সঞ্জয়বাবুর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। মনোজ নিজের ফেসবুকে সঞ্জয়বাবু ছাড়াও উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও নিজের ছবি দিয়েছেন। সুদীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ওটা সাম্প্রতিক ছবি নয়। মনোজ মালি বলে কাউকে চিনতেও পারছি না।’’ সোমবার মনোজের ভাই প্রমোদের দাবি, তাঁর ভাই ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তপন রায়ের হয়ে ভোটে কাজ করছিল। যদিও তপনবাবু বলেন, ‘‘আমি ওই নামে কাউকে চিনি না!’’

লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা শহরে শাসক দলের লোকের হাতে পুলিশের গুলি খাওয়ার ঘটনায় বাহিনীর অন্দরে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। রবিবার রাতেই গোপাল ও তার শাগরেদ রাজু সোনকার, রামুয়া, রাকেশের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে তাদের ধরা যায়নি। অনেকেরই আশঙ্কা, পুলিশের একাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে গোপাল ভিন্ রাজ্যে পালাতে পারে। শনিবার রাতেই গোপালকে বাঁচাতে তৎপর হন গুন্ডাদমন শাখার এক ইনস্পেক্টর। কিন্তু তাঁর উদ্যোগে জল ঢেলে দেন দুই গোয়েন্দাকর্তা। সেই রাতেই অভিযুক্তদের ধরতে মধ্য কলকাতা তোলপাড় করে গুন্ডাদমন শাখা। তাতেই চার অভিযুক্ত ধরা পড়ে বলে লালবাজার সূত্রের দাবি। সোমবার ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ২৪ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, শাসক দলের হয়ে ওই এলাকায় ভোট করানোর দায়িত্ব ছিল তাদের। ধৃতদের স্বীকারোক্তি, কিছু হলে ‘দাদা’ সামলে নেবেন বলেও গোপাল তাদের আশ্বাস দিয়েছিল।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এক মঞ্চে মনোজ মালি।

এই ‘দাদা’টি কে? এই ‘দাদা’ বলতে সঞ্জয় বক্সীর দিকেই আঙুল তুলছেন পুলিশের একাংশ এবং কংগ্রেস। সে দিন গুলি চালানোর পরে গিরিশ পার্কে সঞ্জয়বাবুর দলীয় অফিস থেকেই প্রথম দু’জনকে ধরা হয়েছিল। তখন সঞ্জয়বাবুও সেখানে ছিলেন। পুলিশ জানায়, সঞ্জয়বাবুর অফিস থেকে গ্রেফতার হওয়া অশোক শাহ ওরফে মন্টু এবং দীপক সিংহ ওরফে পাপাইকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, সে দিন সঞ্জয়বাবুর নির্দেশেই ভোটের কাজ করতে গিয়েছিল তারা। রবিবার সঞ্জয়বাবুও জানিয়েছিলেন, মন্টু ও পাপাইকে তিনি চেনেন।

গোপাল ও তার শাগরেদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে এ দিন কী বলছেন সঞ্জয়বাবু?

তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। তবে একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘মধ্য কলকাতায় অনেকেই আমাকে চেনে। কিন্তু তারা কী করেছে, সেটা আমি কী ভাবে জানব?’’

—ফাইল চিত্র।

shibaji dey sarkar kuntak chattopadhyay Gopal Tiwari Police KMC municipal election Girish park
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy