Advertisement
E-Paper

দূষণের দায় প্রশাসনেরও, দাবি পরিবেশকর্মীদের

ডিসেম্বর থেকেই শহরের হাওয়া বিষিয়ে রয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ দিন বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসানো যন্ত্রে বায়ুদূষণের গড় সূচক ছিল ২৫৫।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২০
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

শুধু যানবাহনের ধোঁয়া আর কংক্রিটের নির্মাণ দায়ী নয়। কলকাতার দূষণের পিছনে হাত আছে রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসনেরও। শুক্রবার শহরে একটি অনুষ্ঠানে এমনই বক্তব্য রাখল নাগরিক সমাজ। সেখানকার প্রতিনিধিদের বক্তব্য, পরিবেশ-বিধি যথাযথ ভাবে লাগু করা হয় না। রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা এ জন্য সমান ভাবে দায়ী বলে দাবি তাঁদের।

ডিসেম্বর থেকেই শহরের হাওয়া বিষিয়ে রয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ দিন বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসানো যন্ত্রে বায়ুদূষণের গড় সূচক ছিল ২৫৫। স্বাভাবিকের থেকে যা অনেক বেশি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রে সেই সূচক ৩৫৭! পরিবেশকর্মী নব দত্তের মতে, ‘‘রাজ্য তো এত দিন দূষণের কথা স্বীকারই করতে চাইছিল না। পরিবেশকর্মীদের আন্দোলনের জেরে এখন তা মেনে নিতে হয়েছে।’’

এই দূষণ যে কত মারাত্মক, সেই তথ্য তুলে ধরেছে বেলঘরিয়ার যতীন দাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী সীতা ঘোষ। সে জানিয়েছে, তার মা হাঁপানির রোগী। দূষণ যে ভাবে তার পরিবারে থাবা বসিয়েছে, তা আটকাতে চায় সে। ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা অন্তরা বসাক মনে করেন, পরিবেশবিজ্ঞানকে শুধু বইয়ের পাতা বা পরিবেশ দিবস পালনে আটকে রাখা উচিত নয়। সমাজে সচেতনতা প্রসারে শিক্ষক এবং পড়ুয়াদেরও এগিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্রিটিশ পরিবেশবিদ রিচার্ড বেলিংহাম বলেন, ‘‘কলকাতার দূষণ ঠেকাতে আমজনতার এগিয়ে এসে কথা বলা উচিত।’’

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বাম আমল থেকেই পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং দূষণ ছড়ানো অটো বন্ধ করতে গিয়ে তৎকালীন শাসক দলের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হলেও পরিবেশ গুরুত্ব লাভ করেনি। অটোর দাপটও কমেনি। নববাবুর অভিযোগ, ‘‘সরকার পরিবেশ আদালতের নির্দেশও মানতে চায় না!’’

নগর-পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ সমীরণ সেনের মতে, কলকাতায় যান চলাচল পরিকল্পনায় খামতি রয়েছে। তার ফলে উড়ালপুল ও রাস্তা চওড়া করেও লাভ হচ্ছে না। বরং যানজট বেড়ে দূষণ হচ্ছে। ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ প্রতিষ্ঠান ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর কলকাতার অধিকর্তা অশোক ধরের বক্তব্য, ফুটপাত দখল হয়ে আছে। ফলে হাঁটার জায়গা নেই। তাই স্বল্প দূরত্ব যেতেও গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। ‘‘এতেও দূষণ বাড়ছে,’’ বলছেন তিনি।

প্রশ্ন তোলা হয়েছে মহানগরের গাছ কাটা, জঞ্জাল সাফাই ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষক পুনর্বসু চৌধুরীর বক্তব্য, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ভাগাড় থেকে ক্রমাগত বিষাক্ত ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সে দিকে কারও নজর নেই। শহরের নানা প্রান্তে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। পরিবেশবিদ তাপস ঘটকের মতে, ‘‘যে ভাবে কলকাতা পুরসভার দূষিত লরিগুলি দিনেদুপুরে বর্জ্য নিয়ে ভাগাড়ে যায়, তা দুনিয়ার কোনও সভ্য শহরে দেখা যায় না।’’

কী বলছে প্রশাসন? সদিচ্ছার অভিযোগ খারিজ করে পরিবেশ দফতরের দাবি, শহরে দূষিত যানবাহন ও নির্মাণ শিল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট নীতি মেনেই দূষণ ঠেকানো হবে। সেই কাজ জাতীয় পরিবেশ আদালতে জানানো হবে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক দফা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও পরিবেশ দফতরের কর্তাদের দাবি। পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর আসেনি।

Pollution Government Environmentalist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy