Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta Medical College

মেডিক্যাল কলেজে সরকারি ঘর দখলের সংস্কৃতি চলছে তৃণমূল জমানাতেও

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক গ্রুপ ডি কর্মী বলেন, “কোনও কোনও পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে ৮। ফলে তাঁরা বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছেন অতিরিক্ত ঘর। আবার অনেকে সরকারি ঘর ভাড়ায় দিয়েছেন। কেউ আবার চাকরি ছাড়লেও ঘর ছাড়ছেন না।”

প্রশাসনের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও দখলদারি চলছে। নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও দখলদারি চলছে। নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৫:২০
Share: Save:

রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে সেই ২০১১ সালে। কিন্তু, সরকারি আবাসনের ঘর দখল করে রাখার সংস্কৃতি পাল্টাল না কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও মেডিক্যাল কলেজের গ্রুপ ডি কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে ঘর দখল করে রাখার অভিযোগ উঠত। তৃণমূল জমানাতেও সেই চেহারা বদলায়নি। প্রশাসনের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও দখলদারি চলছে। কাঠগড়ায় সেই গ্রুপ ডি কর্মীরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখার পর বিষয়টি স্বীকার করেও নিয়েছেন। যারা বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত ঘর দখল করে রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন হাসপাতাল সুপার।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ঠিক পাশের রাস্তাতেই গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য তিনটি বহুতল রয়েছে। সেখানে মোট চারটি ব্লকে কয়েকশো কর্মী থাকেন। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে অনেক কর্মীই অতিরিক্ত ঘর দখল করে রেখেছেন। বহু ঘর ফাঁকা থাকায় সেগুলোতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা ভেঙে ওই ঘরগুলি দখল করার অভিযোগ উঠছে গ্রুপ ডি কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

যাঁরা নিয়ম মেনে বরাদ্দ অনুযাযী ঘরে বসবাস করছেন, তাঁরাই এই বেআইনি দখলদারির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সব জেনেশুনেও চুপ রয়েছেন। বহু গ্রুপ ডি কর্মী তৃণমূল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে তাঁদের কেউ ঘাঁটাতে চান না বলেও অভিযোগ। নিয়ম মেনে বরাদ্দের ঘরে থাকা তেমনই এক গ্রুপ ডি কর্মী বলছেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে অনেকের ওঠাবসা রয়েছে, তাই ব্যবস্থা নিতে গেলে বদলির ভয় পান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ। ফলে ঘর দখল করে রাখার সংস্কৃতি চলছেই।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক গ্রুপ ডি কর্মী বলেন, “কোনও কোনও পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে ৮। ফলে তাঁরা বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছেন অতিরিক্ত ঘর। আবার অনেকে সরকারি ঘর ভাড়ায় দিয়েছেন। কেউ আবার চাকরি ছাড়লেও ঘর ছাড়ছেন না।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ী গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য ওই আবাসনে একটি করে ঘর বরাদ্দ। এ জন্য তাঁদের মাইনে থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকাও কেটে নেওয়া হয়। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ওই ঘর ছেড়ে দেওয়াই নিয়ম। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রুপ ডি কর্মীদের মোট চারটি ব্লক রয়েছে। ‘এ’ ব্লকে রয়েছে ১৩৭টি ঘর। তার মধ্যে ৭৮টি ঘর থাকার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ফাঁকা রয়েছে ৫৯টি ঘর। তবে, খাতায় কলমে। অভিযোগ, বাস্তবে ওই ঘরগুলি দখল করে রেখেছেন গ্রুপ ডি কর্মীদের আত্মীয়েরা, ভাড়াটে অথবা প্রাক্তন কর্মীরা। একই চিত্র ব্লক ‘বি’তে। ওই ব্লকে মোট ঘরের সংখ্যা ১৪৩। সেখানে ১৩৬টি ঘরে কর্মীরা আছেন। ফাঁকা ৭টি। ব্লক ‘সি’ এবং ‘ডি’তে ৩২ ঘর। কোনও ব্লকই ফাঁকা নেই।

‘‘এই দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে রয়েছে,’’— বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘এ’ ব্লকের এক আবাসিক। তাঁর কথায়, “এ সব দেখার জন্য সিকিউরিটি অফিসার রয়েছেন। তা হলে কোন জাদুতে সেখানে অন্য কর্মীরা ঘর দখল করে রেখেছেন?’’ হাসপাতালে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল এক জন সিকিউরিটি অফিসার রয়েছেন। তাঁর নাম শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি প্রথমে কিছু শুনতে অস্বীকর করেন। কোনও মন্তব্যও করতে চান না। পরে রেগে গিয়ে বলেন, “আমার জানা নেই। আপনি সুপারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। এখানে কেন এসেছেন?”

এর পর সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাজে এই দখলদারি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। সুপার বলেন, “অপেক্ষা করুন। আমি খোঁজ নিচ্ছি।”

ঘণ্টাখানেক পর তিনি ডেকে নেন নিজের ঘরে। তার পর এ বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, “অনেক ঘর ফাঁকা রয়েছে খাতায় কলমে। অভিযোগ যখন উঠছে, তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখব। কেউ কেউ তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানলাম। কি ঘটনা ঘটছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE