হ্যাম রেডিয়োর তৎপরতায় ঝাড়খণ্ডের পলামুতে খোঁজ মিলেছে ললিনীর পরিবারের। —প্রতীকী চিত্র।
নাম লেখার সময়ে একটিমাত্র অক্ষরের ভুল। তার জেরেই ঝাড়খণ্ডের ললিনী এ রাজ্যের সংশোধনাগারে পৌঁছেছিলেন ‘নলিনী’ হয়ে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ললিনী সে সময়ে জানাতে পারেননি নিজের বাড়ির ঠিকানা। নিজের নাম বলেন ললিনী, যা পুলিশের খাতায় হয়ে যায় ‘নলিনী’। ২০১৭ সালে বিমানঘাঁটির মাঠ থেকে খড়্গপুর রেল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ললিনী চৌধরির ঠিকানা মেদিনীপুরের সংশোধনাগার। কয়েক বছর আগে জামিন পেলেও তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলেনি। ফলে ভুল নাম ও সঠিক ঠিকানার অভাবে আজও সংশোধনাগারেই ৬২ বছরের ওই প্রৌঢ়া। শেষে হ্যাম রেডিয়োর তৎপরতায় ঝাড়খণ্ডের পলামুতে খোঁজ মিলেছে ললিনীর পরিবারের।
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রের খবর, ললিনী এখনও সুস্থ নন। ঝাড়খণ্ডের পলামু জেলার চৈনপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি নিখোঁজ হন ২০১৭ সালে। পুরনো রেকর্ড থেকে সংশোধনাগারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ জানান, কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটির কাঁটাতার টপকে ভিতরের মাঠে ঢুকে পড়ে গ্রেফতার হন ললিনী। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ঠিকমতো নিজের পরিচয় দিতে পারেননি। সেই সময়েই তাঁর নামের বানান ভুল লেখা হয়। ‘অফিশিয়াল সিক্রেসি’ আইনে মামলা হয় ললিনীর বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই জেলবন্দি তিনি।
হ্যাম রেডিয়োর তরফে জানানো হয়েছে, বছর দুয়েক আগে ললিনী জামিন পান। কিন্তু সঠিক ঠিকানা বলতে না পারায় একাধিক জায়গায় চিঠি পাঠান সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তবে কাজ হয়নি। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ওয়েলফেয়ার আধিকারিক অনিরুদ্ধ ঘোষের উদ্যোগে খবর যায় হ্যাম রেডিয়োর কাছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস বলেন, ‘‘জানতে পারি, জামিন পেয়েও ওই প্রৌঢ়া সংশোধনাগারে রয়েছেন। প্রথমে জেনেছিলাম, উত্তরপ্রদেশে ওঁর বাড়ি। কিন্তু জেল থেকে বার বার সেখানে চিঠি পাঠানো হলেও ফিরে এসেছে। শেষে পলামুতে ওঁর স্বামীকে খুঁজে পাই। স্ত্রী বেঁচে আছেন শুনে স্বামী অবাক।’’
সংশোধনাগার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে স্বামীর সঙ্গে দেখা হয়েছে ললিনীর। ভিডিয়ো কলে স্বামী-সন্তানদের দেখে চোখের জল বাধ মানেনি প্রৌঢ়ার। কেঁদে ফেলেছিলেন পরিবারের সদস্যেরাও। আপাতত জামিনের কিছু শর্তের কাগজে ললিনীর পরিবারের সই প্রয়োজন। পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, ললিনীকে ফেরাতে তাঁরা মেদিনীপুরে আসছেন। আরও জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগেও ললিনীর মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছিল। সে সময়ে মাঝেমধ্যেই তিনি বেরিয়ে যেতেন। তাঁর স্বামী, পেশায় মিস্ত্রি লালজি চৌধরি জানান, স্ত্রীকে খুঁজে বাড়ি নিয়ে আসতেন। কিন্তু স্ত্রীকে যে এ ভাবে জেলে দেখতে হবে, তা ভাবেননি।
আগে দমদম সংশোধনাগারে ৪১ বছর ধরে বিনা বিচারে বন্দি থাকা নেপালের দীপক জোশীকে বাড়ি ফিরিয়েছিল হ্যাম রেডিয়ো। সেই খবর জানাজানি হতে তোলপাড়শুরু হয়। অম্বরীশ জানান, দীপকের ৯২ বছরের বৃদ্ধা মা ভাবতেইপারেননি, ছেলে কখনও ফিরে আসবে। তেমনই লালজিও ভাবতে পারছেন না, হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী এত বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সংশোধনাগারে দিন কাটাচ্ছেন।
হ্যাম সদস্যদের মতে, গ্রেফতারির সময়ে ললিনীর ছবি সব রাজ্যে পৌঁছলে তাঁকে এত দিন জেলে বন্দি থাকতে হত না। কারণ লালজি জানিয়েছেন, স্ত্রীর খোঁজে সে সময়ে তিনি স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy