Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Street hawkers

ফুটপাতের দাগ মুছে দিয়ে ফের দখলদারি শুরু হকারদের

বেশ কিছু জায়গায় ফুটপাতে পা ফেলারই পরিসর নেই। দখলে চলে গিয়েছে গাড়ি যাতায়াতের পথের খানিকটা অংশও। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, পুরকর্মীদের ফিতে ফেলে মেপে যাওয়া চকের দাগও!

ফের রাস্তা দখল করে বসে হকাররা।

ফের রাস্তা দখল করে বসে হকাররা। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৬
Share: Save:

নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মাথার উপর থেকে প্লাস্টিকের ছাউনি হটাতে হবে। রঙিন ছাতা ছাড়া বসা যাবে না। রাস্তায় দোকান খোলা যাবে না। ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ পথচারীদের জন্য ছেড়ে রাখতে হবে। অভিযোগ, এই সব নির্দেশ ঘোষণার পরে পুলিশ নিয়ে গিয়ে পুরসভার লোকজন ফিতে ফেলে ফুটপাত মেপে আসার এক সপ্তাহ পেরোতেই গড়িয়াহাটের চেহারা যে কে সেই!

বেশ কিছু জায়গায় ফুটপাতে পা ফেলারই পরিসর নেই। দখলে চলে গিয়েছে গাড়ি যাতায়াতের পথের খানিকটা অংশও। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, পুরকর্মীদের ফিতে ফেলে মেপে যাওয়া চকের দাগও! এক হকারের মন্তব্য, ‘‘চকের দাগ কোনও এক দোকানদার পা দিয়ে ঘষে তুলে দিয়েছেন। কেউ আবার জল ঢেলে দিতেই চকের দাগ উঠে গিয়েছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘টাকা দিয়ে এখানে দোকান পাততে হয়। যত দিন দাদারা আছেন, চিন্তা নেই।’’

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হকারদের দখলদারি নিয়ে পুজোর মুখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ফুটপাতের সবটাই যদি দখল হয়ে যায় তা হলে হাঁটবকী ভাবে?’’ এর পরই আলোচনা হয় নানা মহলে। পুজো মিটতেই হকার-সমীক্ষা এবং হকারদের সচেতন করার কাজে নামে পুরসভা। আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার, হাতিবাগান এবং নিউ মার্কেটে হকার-সমীক্ষা শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ৯ তারিখ গড়িয়াহাটে এই কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এক হাজার হকারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফুটপাত মেপে চিহ্নিত করারকাজও হয়েছে।

এ দিকে গড়িয়াহাট চত্বরের কাজ সম্পূর্ণ শেষ না করেই বুধবার থেকে শ্যামবাজার এলাকায় কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, শ্যামবাজার এবং হাতিবাগানে নথিভুক্ত করা হয়েছে ১০২৮ জন হকারের নাম। তবুও বিধি-ভঙ্গের চিত্র বদলায়নি।

সম্প্রতি শ্যামবাজার অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেল, মেপে দেওয়া অংশের বাইরেই চলছে ব্যবসা। এমন ভাবে দোকান পাতা হয়েছে, এক দিকে না বেঁকে হেঁটে বেরোনোর জায়গা নেই। শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর কাছে আবার নির্দেশ উড়িয়ে কিছু দোকান পাতা হয়েছে রাস্তায়। টাউন স্কুলের কাছে ট্রামলাইনের উপরেই দোকান চলে এসেছে! ওই হকারের দাবি, ‘‘বেশি তো ট্রাম যায় না! ট্রাম আসছে দেখলেই টুল তুলে নেওয়া হয়।’’ শ্যামল সরকার নামে এক হকারের মন্তব্য, ‘‘এই রকম ফিতে ফেলে চিহ্নিত করতে আগেও দেখেছি। কিন্তু ওই চিহ্নিত জায়গার বেড়া ভেঙে বসতে দাদার লোকেরা আমাদের থেকে মোটা টাকাও নিয়েছেন।’’

শহরের ফুটপাত ‘চুরি’র অভিযোগ পুরনো। বড় অভিযোগ উঠলে বা ভোট এলে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা চলে, প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়। তবু ফুটপাত হকারমুক্ত হয় না। ২০১৪ সালের পাশ হওয়া ‘পথ বিক্রেতা’ (জীবিকা সুরক্ষা ও পথ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে, শহরের আড়াই শতাংশ জনসংখ্যা হকারিতে জড়িত ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল। ‘হকিং জ়োন’, ‘নন-হকিং জ়োন’ এবং বিধিনিষেধযুক্ত এলাকায় শহরকে ভাগ করার কথাও বলা হয়েছিল। তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হকারদের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় প্রক্রিয়াটি এগিয়েছিল। ৬০ হাজারেরও বেশি হকারের আবেদনপত্র জমা পড়েছিল পুরসভায়। আইনি জটিলতায় সেই প্রক্রিয়াও অসমাপ্ত।

সাত বছর বাদে আবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হকার সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক দেবাশিস দাস বললেন, ‘‘গরিবের আয়ের অধিকার আছে, তাঁর জীবিকা অর্জনের গুরুত্বও অনস্বীকার্য। তাই বলে ফুটপাত দখল করে তা করতে দেওয়া যায় না। নির্দেশ না মানলে নিশ্চয়ই কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত!’’

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমার বললেন,‘‘এক-তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত জায়গা নিয়ে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। টাউন ভেন্ডিং কমিটি এ ব্যাপারেসিদ্ধান্ত নেবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Street hawkers KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE