Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Tuberculosis

যক্ষ্মা ঠেকাতে ‘ঢিলেমি’ নিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (সিএমসি) এই ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকেও এক যক্ষ্মা রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের কাছে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৩:০৪
Share: Save:

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত এক যুবককে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা জরুরি ছিল। কিন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা হুগলির বাসিন্দা ওই যুবককে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই খবর স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছলে বোড়ালের যক্ষ্মা হাসপাতালে ওই রোগীর পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (সিএমসি) এই ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকেও এক যক্ষ্মা রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের কাছে। এ ছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যক্ষ্মা রোগীর থুতুর নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য তিন সপ্তাহেরও বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যক্ষ্মা রোগীর চিহ্নিতকরণে মেডিক্যাল কলেজগুলির ভূমিকা আশানুরূপ নয়।’’ এই পরিস্থিতিতে সমন্বয়ের খামতি মিটিয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজকে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলে খবর।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যে মোট যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ ১০ হাজার ৩২১ জন। এর মধ্যে ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৪ হাজার ৪৯৮ জন (১৩.১ শতাংশ) যক্ষ্মা রোগীর খোঁজ মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যক্ষ্মা নির্মূলের যে পরিকাঠামো রয়েছে তা পুরোপুরি কাজ করলে মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে আরও বেশি সংখ্যক রোগী পাওয়া উচিত।

তাঁদের মতে, কোনও রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তিনি চিকিৎসার জন্য আর না-ও আসতে পারেন। রুজি-রোজগার ফেলে অনেকে বারবার হাসপাতালে যেতে চান না। প্রত্যাখানের জেরে হাসপাতালে না-যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দ্রুত রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়বে না। এটা সকলকে বুঝতে হবে।’’

তবে এর উল্টো বক্তব্যও রয়েছে। শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলির যক্ষ্মা কেন্দ্রের কর্মীদের বক্তব্য, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর পাশাপাশি বহির্বিভাগে প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর চাপ সামলাতে হয়। এর পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার যে এলাকায় মেডিক্যাল কলেজগুলি অবস্থিত তারও একটি অংশের রোগীর চাপ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকে সামলাতে হয়। যক্ষ্মা কেন্দ্রের এক কর্মীর কথায়, ‘‘গুণমান বজায় রাখতে প্রতিদিন ২৫টির বেশি স্লাইড পরীক্ষা করা যায় না। রাজ্যের প্রতিটি জেলা, ব্লকে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও রোগীরা মেডিক্যাল কলেজই পরীক্ষা করাতে চান। তাই রোগী ফেরানো ছাড়া উপায় থাকে না।’’ একটি মেডিক্যাল কলেজের যক্ষ্মা কেন্দ্রের এক কর্মী জানান, পরীক্ষার পাশাপাশি যক্ষ্মার নথি সংক্রান্ত অনেক কাজ থাকে। তার জেরেও পরিষেবা দিতে গিয়ে সমস্যা হয়।

বিষয়টি নিয়ে রাজ্য টিবি অফিসার বরুণ সাঁতরা জানান, সম্প্রতি পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজগুলি যক্ষ্মা রোধের কাজে এগিয়ে রয়েছে। রাজ্যের সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজে ডিআরটিবি এবং এআরটি কেন্দ্র খুললে পরিস্থিতির আরও বদল ঘটবে। এখন রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ১১টিতে ডিআরটিবি সেন্টার রয়েছে। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পাশাপাশি এআরটি সেন্টার রয়েছে আরও ন’টি মেডিক্যাল কলেজে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এ রকম হওয়ার কথা নয়। ঠিক কী ঘটেছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tuberculosis Health Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE