Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘ঠান্ডা শশা’, সব মানাতে রাজি

নিখুঁত চিত্রনাট্যের বাইরে এক পা-ও চলছেন না তিনি। স্রোতের বাইরে গিয়ে সামান্য কথাও যে কত বিপজ্জনক হয়ে তাঁর ভবিষ্যৎকে আরও খানিকটা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে, তুখোড় নাট্যকারের তা বিলক্ষণ জানা।

ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

নিখুঁত চিত্রনাট্যের বাইরে এক পা-ও চলছেন না তিনি। স্রোতের বাইরে গিয়ে সামান্য কথাও যে কত বিপজ্জনক হয়ে তাঁর ভবিষ্যৎকে আরও খানিকটা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে, তুখোড় নাট্যকারের তা বিলক্ষণ জানা। তাই রাজ্যের হালফিল নানা সমস্যা, নারদের ভিডিও কিংবা অনুব্রত মণ্ডলের ‘ভ্যানিশিং স্ট্র্যাটেজি’— সব ধরনের প্রশ্নেই কার্যত শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর নির্বিকার জবাব। তিনি ব্রাত্য বসু। অনেকের মতে, আপাতত নিজের দলেই যিনি অনেকখানি ‘ব্রাত্য’।

সকাল সাতটা। চোখের নীচে গাঢ় কালি। রোদে ঝলসানো চেহারা। আগুনরঙা পাঞ্জাবি পরে হন্তদন্ত হয়ে নিজের বসার ঘরে ঢুকলেন দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। কয়েক মিনিট পরেই বেরোতে হবে প্রচারে। বেশ চাপে আছেন মনে হচ্ছে? ব্যাপারটা সরাসরি না মেনে একটু ঘুরিয়ে ব্রাত্য বললেন, ‘‘আমি চাপটা নিতে চাইছি না। এলাকায় সাধ্যমতো কাজ করেছি। ভোটের আগে এলাকা চষে বেড়াচ্ছি। আপাতত গীতার বাণীতেই আস্থা। মা ফলেষু কদাচন।’’

তা হলে কি জিতলে মন্ত্রিত্বের আশাও ত্যাগ করেছেন? সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘সাধ্যমতো কাজ করেছি। এ ছাড়া, থিয়েটারের জগৎ আমার অনেকটা জুড়ে আছে। যদি আর মন্ত্রিত্ব না পাই, সেটা শান্ত ভাবেই মেনে নিতে পারব।’’

গত এক বছরে চার-চারটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে তাঁর। খবরের কাগজে প্রায় প্রতিদিনই তার বিজ্ঞাপন। অধিকাংশ শো হাউসফুল। ভোটের প্রচারের তুমুল ব্যস্ততার মধ্যেই রাত ১১টার পরে কিছুটা সময় এখনও নাটক দলের কর্মীদের জন্য বরাদ্দ। পয়লা বৈশাখেই প্রকাশিত হয়েছে নতুন বই— ‘নাটক সমগ্র’র তৃতীয় খণ্ড। সব মিলিয়ে ‘অন্য ভুবন’টা বেশ গুছিয়েই রাখছেন। সেটা কি মূলত এই কারণে যে রাজনীতির জগতের সঙ্গে তাঁর বিশেষ খাপ খাচ্ছে না? সেটা কি এই কারণেও যে মন্ত্রিসভার বৈঠক বা দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিরস্কার কিংবা তাঁকে না জানিয়েই দফতরের অনেক সিদ্ধান্তকে আর বরদাস্ত করে নিতে পারছে না তাঁর ‘রাগী-উদ্ধত’ সত্ত্বা?

ব্রাত্য বললেন, ‘‘এ সব বাজে কথা। আমাকে না জানিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয় না। শিক্ষা দফতরে তো হয়ইনি। পর্যটনেও নয়। এখন আমার আসার আগে যে সিদ্ধান্তগুলো হয়েছে, সেগুলো আমি স্বাভাবিক ভাবেই পরে জেনেছি। এর মধ্যে আর কোনও গল্প নেই।’’

এখানেই শেষ নয়। বলেছেন, ‘‘আমি রাগী কে বলল? আমি শসার মতো ঠান্ডা। তাই সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিচ্ছি।’’ তার পরে সামান্য হেসে, ‘‘আসলে আমি রাগী নই, আমি টেম্পারামেন্টাল।’’

সেই ‘টেম্পার’’-এর সঙ্গে তৃণমূলের ন্যায়-নীতি-আদর্শ, ভাবমূর্তি সব খাপ খেয়ে যায়? এই প্রথম একটু থমকান তিনি। বলেন, ‘‘আমার চেয়ে আরও অনেক শিক্ষিত মানুষ এই দলে রয়েছেন। সুগত বসুর কথাই ভাবুন। নমস্য, পণ্ডিত মানুষ! যোগেন চৌধুরী আছেন। তা হলে আমার কথা আলাদা করে ভেবে লাভ কী?’’

কিন্তু এই দলে সুগত বসুরা যেমন রয়েছেন, তেমনই দোর্দণ্ড প্রভাব-প্রতিপত্তির সঙ্গেই রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলেরা। দুটো সমান্তরাল অস্তিত্ব এক জন শিল্পীকে কোনও ভাবে প্রভাবিত করে না?

রাজনীতিবিদ নন, এ বার জবাব দেন নাট্যকার ব্রাত্য। ‘‘যে কোনও বাঁচাই আসলে সত্য থেকে তিন ধাপ দূরে। আমি সেই সত্যের কতটা কাছে যেতে পারি, সেটাই লড়াই।’’

বিরোধীরা প্রায়শই বলে থাকেন, তৃণমূলের আমলে এ রাজ্যটা জলসা-সংস্কৃতিতেই ভরে উঠেছে। নাট্যকর্মী ব্রাত্য কী মনে করেন? সাবধানী কণ্ঠ দাবি করে, ‘‘তৃণমূলের আমলে এ রাজ্যে প্রান্তিক শিল্পচর্চা নানা ভাবে উপকৃত হয়েছে। বিশেষ করে থিয়েটার কর্মীরা অর্থ, কাজ, কাজের স্বীকৃতি সবই পেয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমি কী মনে করছি, তার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল একটা জনগোষ্ঠীর স্বার্থ, তাঁরা
কী পেলেন।’’

শত ব্যস্ততার মধ্যেও রোজ রাতে একটা করে সিনেমা দেখা তাঁর অভ্যাস। এখনও দেখছেন। তবে এখন দেখা ছবিগুলোই ফের ঘুরেফিরে দেখা হচ্ছে। যাতে ‘বেশি মাথা ঘামাতে’ না হয়। এ ছাড়া বই পড়া, লেখালেখি তো রয়েছেই। ব্রাত্য জানান, এগুলোই তাঁর ‘আশ্রয়’।

রাজনীতির জগতে যখন কোনও বিষয়ে মানাতে পারেন না, হতাশা আসে, তখন কী করেন? এ বার একটা গল্প শোনালেন। ‘‘একটি লোকের অনেক সমস্যা জীবনে। তিনি জ্যোতিষীর কাছে গিয়েছেন হাত দেখাতে। জ্যোতিষী বলছেন, ৫০ বছর বয়সের পরে খারাপ সময় কাটবে। লোকটি হতাশ। প-ঞ্চা-শ বছর? এত দিন অপেক্ষা করতে হবে! কিছু ক্ষণ পরে তিনি আবার খানিকটা উৎসাহ নিয়ে জ্যোতিষীকে প্রশ্ন করেন, ৫০ বছরের পরে ভাল সময় আসবে তো? জ্যোতিষী উত্তর দেন, তখন সব সয়ে যাবে।’’

চিত্রনাট্যে বাঁধা জীবনে কি নিজেও সব সয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন ৫০ থেকে চার বছর দূরে থাকা ব্রাত্য বসু?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Bratya Basu TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE