Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মত্ত উল্লাসে শহর মাতল দোল উৎসবে

খালি গা, চোখে রোদ-চশমা। পরনে পোশাক বলতে স্রেফ হাফ প্যান্ট। রঙের চোটে চেহারা চেনা দায়। ওই অবস্থায় মোটরবাইকে সওয়ার হয়েছেন দু’জন। সোজা পথের পরিবর্তে বাইক চলেছে এঁকেবেঁকে!

মল্লিকবাজারে দোল খেলা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

মল্লিকবাজারে দোল খেলা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

খালি গা, চোখে রোদ-চশমা। পরনে পোশাক বলতে স্রেফ হাফ প্যান্ট। রঙের চোটে চেহারা চেনা দায়। ওই অবস্থায় মোটরবাইকে সওয়ার হয়েছেন দু’জন। সোজা পথের পরিবর্তে বাইক চলেছে এঁকেবেঁকে!

শোভাবাজার মোড়ের কাছে ওই যুবকদের পথ আটকালেন জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। ‘লাইসেন্স দেখি’ বলতেই, মোটরবাইক থেকে নেমে গালিগালাজ শুরু করে এক যুবক। ‘‘এত সাহস? থানায় চল।’’— কথাটা শেষ করতে পারেননি ওই পুলিশকর্মী। অভিযোগ, দুই যুবক চড়াও হয় তাঁর উপরে। ধস্তাধস্তির মধ্যেই এক জন চেপে ধরে তাঁর পোশাক। পুলিশকর্মীর বুকে লাগানো ক্যামেরা খুলে মাটিতে আছড়ে ভাঙে অন্য জন। ততক্ষণে লোক জড়ো হয়ে গিয়েছে রাস্তায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন আশপাশের মোড়ে থাকা পুলিশকর্মীরা। দুই যুবককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই শোভাবাজার মোড়ে ফের দেখা গেল মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য। একই ভাবে রং মেখে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে চালাতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে দুই যুবক বলল, ‘‘আমার পাড়ার ছেলেদের ধরেছে? পারলে আমায় আটকে দেখা!’’

বৃহস্পতিবারের দোল উৎসব বিকেল পেরিয়ে যত রাতের দিকে এগিয়েছে, শহর কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে গন্ডগোলের খবর আসা ততই বেড়েছে। পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজানো নিয়ে গোলমালের পাশাপাশি মত্ত অবস্থায় ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন জায়গায়। সঙ্গে রাস্তা জুড়ে মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

পুলিশকর্মীদের চোখের সামনেই দু’জনের জায়গায় বাইকে সওয়ার হয়েছে তিন জন, কোথাও আবার চার জন। অভিযোগ, প্রায় কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। হাতিবাগানে চার সওয়ারিকে আবির মাখানোর পরে তাদের স্কুটিকেও আবির মাখাতে দেখা গেল মত্ত যুবকদের।

বুধবার লালবাজারে বসে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম জানিয়েছিলেন, আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। এ দিন বিকেলের পরে সেই লালবাজারই জানাল, কলকাতা পুলিশ এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই অসংলগ্ন অবস্থায় ছিলেন।

বিকেলের দিকে খবর আসে, তপসিয়া এবং তিলজলার বেশ কয়েকটি এলাকায় গোলমাল হয়েছে। এ দিন ঝামেলা হয়েছে এন্টালি থানা এলাকার কয়েকটি জায়গাতেও। সব ক্ষেত্রে গ্রেফতারি না হলেও আটকদের রাত পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রাখা হয়। এন্টালি থানার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘কত জনকে গ্রেফতার করব? কিছু ক্ষণ আটক করে বসিয়ে রেখে নেশা কাটার পরে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’

বসন্ত উৎসবের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল খোদ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে দোল উৎসবের পরেই। সেই পথে পা বাড়িয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও। সেখানে বহুল প্রচলিত একটি হিন্দি ছবির উক্তি লেখা পোশাক গায়ে বসন্ত উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করতে দেখা গিয়েছে পড়ুয়াদের। সেই সংস্কৃতির রেশ এ দিন দেখা গিয়েছে পাড়ায় পাড়ায়।

বসন্তের গান নয়, ভোজপুরী ও হিন্দি গানের দাপটে বহু জায়গায় বাসিন্দাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তর কলকাতার অরবিন্দ সরণির বাসিন্দা এক বৃদ্ধ জানালেন, গানের চোটে বাড়িতে থাকতে পারছেন না তিনি। স্ত্রীর হার্টের সমস্যা রয়েছে। বারবার থানায় ফোন করেও গান বন্ধ করাতে পারেননি। শেষে লালবাজারে জানানোয় পুলিশ গিয়ে গান বন্ধ করে।

দোলের আগে পুলিশ জানিয়েছিল, নজরদারি চলবে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। পশু-পাখিদের রং দেওয়া বন্ধ করতেও তারা তৎপর রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ দিন দুপুরে দেখা গেল, পাড়ার কুকুরকে রং মাখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনৈক ব্যক্তি পোস্ট করেছেন, ‘রং খেলেছে সকলেই’! পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে কি? লালবাজার জানাচ্ছে, তদন্ত করে দেখা হবে। এ দিনও অতিরিক্ত কমিশনার (১) জাভেদ শুধু বলেছেন, ‘‘কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে মোটের উপরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল।’’

নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে কী হয়? পাড়ায় পাড়ায় বুঝেছেন স্থানীয়েরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Holi Holi Celebration Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE