E-Paper

বিপজ্জনক নোটিস দিয়ে ‘দায় এড়াচ্ছে’ আবাসন দফতর, শিকেয় সংস্কার 

আবাসন দফতরের অধীনে কলকাতার একাধিক সরকারি আবাসনে স্বল্প ভাড়ায় থাকেন বহু মানুষ। অভিযোগ, তাঁরা নিয়মিত ভাড়া দিলেও আবাসন দফতর ভাঙাচোরা আবাসন মেরামত করছে না।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ০৯:২০
বিপজ্জনক বাড়ির পোস্টার লাগানো হয়েছে আনন্দপুরের এক সরকারি আবাসনে।

বিপজ্জনক বাড়ির পোস্টার লাগানো হয়েছে আনন্দপুরের এক সরকারি আবাসনে। নিজস্ব চিত্র।

কোথাও ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়ছে, ভারী বৃষ্টিতে কোথাও ছাদ দিয়ে জল পড়ে। কোথাও বা বাড়ির সামনে ঝুলছে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস। আবাসন দফতরের অধীনে থাকা শহরের সরকারি আবাসনগুলির হাল এমনই। সেখানকার ভাড়াটেরা কার্যত জীবন বাজি রেখেই বসবাস করছেন।

আবাসন দফতরের অধীনে কলকাতার একাধিক সরকারি আবাসনে স্বল্প ভাড়ায় থাকেন বহু মানুষ। অভিযোগ, তাঁরা নিয়মিত ভাড়া দিলেও আবাসন দফতর ভাঙাচোরা আবাসন মেরামত করছে না। নিয়ম অনুযায়ী, ওই সব আবাসনের মেরামতির দায়িত্ব তাদেরই। অভিযোগ, সংস্কার করা তো দূরের কথা, উল্টে আবাসন দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট আবাসনগুলিতে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস লিখেই দায় সারা হচ্ছে। ই এম বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুরে রয়েছে পূবালি আবাসন। ওই এলআইজি (লো ইনকাম গ্রুপ) আবাসনে সাতটি ব্লক রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে রয়েছে ১৬টি করে ফ্ল্যাট। আবাসনের ভাড়াটে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘আমাদের আবাসনের বয়স মাত্র ৩০-৩৫ বছর। কিন্তু এরই মধ্যে বেহাল দশা চোখে পড়ার মতো। মাঝে মাঝেই ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে। বিপদ মাথায় নিয়েই রয়েছি। একাধিক বার আবাসন দফতরে চিঠি দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। উল্টে মাস তিনেক আগে সাতটি ব্লকেই ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝোলানো হয়েছে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, আবাসন দফতর এই ভাবে নিজেদেরই বাড়িতে কি ‘বিপজ্জনক’ নোটিস টাঙাতে পারে? এ প্রসঙ্গে আবাসন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই নোটিস টাঙানোর এক্তিয়ার দফতরের রয়েছে। তবে এর সঙ্গে ওই সব আবাসনের দ্রুত মেরামতির কাজ শুরুও করার কথা।’’ পূবালি আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবাসন দফতরের তরফে শুধুমাত্র নোটিস টাঙিয়েই দায় সারা হয়েছে। বার বার জানানো সত্ত্বেও পরবর্তী মেরামতির কাজ করা হচ্ছে না। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘বাড়িতে ফাটল দেখা দিচ্ছে। মেরামতির কথা বললে আবাসন দফতর বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করছে না। এখন বৃদ্ধ বয়সে আমরা কোথায় যাব?’’

বেলগাছিয়া, ট্যাংরা বা কাশীপুরের সরকারি আবাসনেরও হাল একই। বেলগাছিয়া মিল্ক কলোনির কাছে সরকারি আবাসনেই আবাসন দফতরের এক আধিকারিকের ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মাস তিনেক আগে ‘এল’ ব্লকের কার্নিস ভেঙে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাচ ভেঙে গিয়েছিল। সমস্ত ব্লকেরই বেহাল দশা। দেওয়ালের বাইরে বড় বড় গাছ গজিয়েছে, শিকড়ের চাপ দেওয়াল ফাটিয়ে দিচ্ছে।’’ সরকার সংস্কার করছে না কেন? উত্তরে ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘আবাসন দফতরের টাকার অভাব রয়েছে। সেই জন্য সংস্কার আটকে রয়েছে।’’

বেলগাছিয়া আবাসনের ‘এ’ ব্লকের এক আবাসিকের অভিযোগ, ‘‘দু’বছর আগে মেরামতি করা হলেও গত বছর বর্ষায় ছাদ থেকে জল পড়েছিল।’’ কাশীপুর উদ্যানবাটির কাছে
কাশীপুর এমআইজি হাউজ়িংয়ের ‘এ’ ব্লক মেরামতি হলেও বাকি চারটি ব্লকের মেরামতির কাজ শিকেয়। ওই সমস্ত ব্লকের বাইরের দিকে বিপজ্জনক ভাবে চাঙড় ভেঙে পড়ছে। সেগুলি অবিলম্বে মেরামত করতে গত বছরের জুন মাসে আবাসন
দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের তরফে দফতরের সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। আবাসন দফতর সূত্রের খবর, চিফ ইঞ্জিনিয়ারের তরফে বিভিন্ন আবাসনের মেরামতির জন্য সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়েছে আগেই। কিন্তু সচিবের কাছেই যাবতীয় ফাইল আটকে রয়েছে।

আনন্দপুরের আবাসনে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস টাঙানো সম্পর্কে দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলব।’’ শহরের একাধিক আবাসনের বেহাল দশা সম্পর্কে মন্ত্রীর আশ্বাস, ‘‘খতিয়ে দেখা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Housing Department Kolkata Municpal Corporation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy