Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Ukraine

Russia-Ukraine Conflict: খারকিভে আটকে মেয়ে, হাওড়া থেকে বাবা বললেন, ‘মনোবল হারাবে না, সাহস জোগাও বন্ধুদের’

সহপাঠিনীদের সঙ্গে অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন দেবারতি দাস। মায়ের ফোন রেখে জানলা খুলতেই ভেসে এসেছিল ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দ আর আগুনের ঝলকানি।

যোগাযোগ: ভিডিয়ো কলে মেয়ের সঙ্গে কথা বাবা নন্দলাল দাসের। শুক্রবার,  হাওড়ার বাড়িতে।

যোগাযোগ: ভিডিয়ো কলে মেয়ের সঙ্গে কথা বাবা নন্দলাল দাসের। শুক্রবার, হাওড়ার বাড়িতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৮
Share: Save:

হাওড়ায় যখন সকাল ৯টা, ইউক্রেনের খারকিভে তখন ভোর ৫টা। সে দেশে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের খবর জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাওড়ার ইছাপুরের বাসিন্দা রূপালি দাস। ইউক্রেনবাসী ডাক্তারি পড়ুয়া মেয়েকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ফোন করেন তিনি। কলেজের পাঁচ নম্বর হস্টেলের বন্ধ ঘরে তখন সহপাঠিনীদের সঙ্গে অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী দেবারতি দাস। মায়ের ফোন রেখে জানলা খুলতেই ভেসে এসেছিল ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দ আর আগুনের ঝলকানি।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে খারকিভ ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে এমবিবিএস পড়তে যান পেশায় শিক্ষক-শিক্ষিকা নন্দলাল দাস ও রূপালি দাসের মেয়ে দেবারতি। বৃহস্পতিবার সেই খারকিভেই রাশিয়া আক্রমণ করেছে খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মা। সেই থেকে গোটা পরিবারের উৎকণ্ঠার শুরু। বৃহস্পতিবার থেকে কেউ সে ভাবে খাবার মুখে তুলতে পারেননি। শেষে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, মেয়ে ও তাঁর সহপাঠিনীদের বেসমেন্টের ‘বম্ব শেল্টার’-এ নিয়ে রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পরে সামান্য আশ্বস্ত হয়েছেন বাবা-মা-ভাই। কিন্তু যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে মেয়ে ঘরে না-ফেরা পর্যন্ত শান্তিতে চোখের পাতা এক করতে পারছেন না তাঁরা।

শুক্রবার সকালে ভাই অগ্নীশ্বরের ভিডিয়ো কলে দেবারতি বলেন, ‘‘কাল দুপুরের পর থেকে বেসমেন্টে ছিলাম। আজ সকালে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকায় ফের কলেজ-হস্টেলে ফিরে এসেছি। বিস্ফোরণের শব্দ এখন আর শোনা যাচ্ছে না। রাতে কার্ফিউ হলেও এ দিন সকাল থেকে কার্ফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে।’’

দেবারতি জানান, ইউক্রেনে মোবাইলের নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে গিয়েছে। বিমানবন্দর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আপাতত আকাশপথে ফেরাটাও অনিশ্চিত। সড়কপথে প্রচুর যানবাহন বেরিয়ে পড়েছে। সকলেই চাইছেন খারকিভ ছেড়ে চলে যেতে। ভিডিয়ো কলেই দেবারতির আর্তি, ‘‘ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করতে পারিনি। ওরাও করেনি। আমরা ২৫০-৩০০ জন পড়ুয়া এখনও আটকে রয়েছি। বাড়ি ফিরতে চাই। ভারত সরকার যেন দ্রুত সেই ব্যবস্থা করে।’’

মেয়ের আকুতি শুনে নন্দলালবাবুর গলা বুজে যাচ্ছিল। নিজেকে কোনও মতে সামলে নিয়ে মেয়েকে বলেন, ‘‘মনে রাখবে আগামী দিনে তুমি ডাক্তার হতে চলেছ। তাই মনোবল হারাবে না। বাকি বন্ধুদেরও সাহস দেবে। তোমরা যাতে নিরাপদে ফিরতে পারো, সেই চেষ্টা সকলেই করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE